Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্রোহ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নকে নিয়ে টেকনাফের ৬ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ইউনিয়নে একজনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হলেও তৃণমূলে বিরাজ করছে প্রচ- ক্ষোভ ও অসন্তোষ। টেকনাফ উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে এভাবে তৃণমূলে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে না পেরে প্রায় সব কটি ইউনিয়ইেন এখন দেখা যাচ্ছে বিদ্রেুাহী প্রার্থী। এই বিদ্রেুাহ সামাল দিতে নেতারা এখন হিমশিম খাচ্ছেন। গত রোববার দেশের সর্বশেষ ভূখ- টেকনাফের সাবরাং, সদর, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দেখা গেছে, প্রায় ত্রিশ হাজার ভোটার অধ্যষিত সাবরাং ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণ এলাকা শাহপরীরদ্বীপ থেকে এককালের সৌদি প্রবাসী হাজী সোনা আলীকে জেলা আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। এলাকার অবস্থানের দিক থেকে ঐ এলাকায় ভোটার সংখ্যা হচ্ছে সাড়ে ১১ হাজারের মত। অপরদিকে ইউনিয়নের উত্তরের বৃহত্তর অংশ থেকে দলের কাছে পরীক্ষিত এবং নির্যাতিত, উদীয়মান যুবনেতা নুর হোসেন। হাজী সোনা আলীর এ মনোনয়নকে মেনে নিতে পারেননি। এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নুর হোসনের জনপ্রিয়তা হাজী সোনা আলীর চেয়ে অনেক বেশী। এছাড়া ও হাজী সোনা আলীর এলাকার ভোটার সংখ্যা কম। অপরদিকে নুর হোসনের এলাকা ভোটার সংখ্যা দ্বিগুণ। এছাড়া ও জানা গেছে, নুর হোসেন দলের কাছে পরীক্ষিত এবং শিক্ষিত একজন নেতা। বর্তমানে তিনি টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি টেকনাফ ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৪-৯৫ সালে সাবরাং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩-২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর তিনি ৪নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার ছিলেন। ২০১১ সালে বর্তমান চেয়ারম্যান হামিদুর রহমানের কাছে মাত্র ১০৩৭ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। অথচ তখন হাজী সোনা আলী পেয়েছিলেন মাত্র ১০৪১ ভোট। দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণের মতে হাজী সোনা আলীকে দিয়ে নৌকার বিজয় সম্ভব নয়। এদিকে হাজী সোনা আলীর মনোনয়ন বাতিল করে নুর হোসনের মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে প্রচ- ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সরকার দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকার সাধারণ জনগণ। তারা বিভিন্ন সড়কে, বাজারে, হাটেঘাটে ও গ্রামের জনসমাগম স্থলে শত শত কলাগাছ রোপণ করে সোনা আলীর মনোনয়নের প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। একইভাবে টেকনাফ সদর, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নসহ অন্যান্য ইউনিয়নেও প্রতিবাদ করেছেন দলীয় নেতাকর্মীও মনোনয়ন প্রত্যাশী বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকেরা। এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোছনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তিনি ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি জেল খেটেছেন। দলের জন্য এত কিছু কোরবানীর পরেও তিনি আশা করেছিলেন আগামী ইউপি নির্বাচনে তিনিই মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু দেখা গেছে, দলীয় নেতৃবৃন্দ হাজী সোনা আলীর মত একজন অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করায় তিনি হতাশ হয়েছেন। পাশাপাশি ইউনিয়নের দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণ এটি মেনে নিতে পারছেন না। তিনি আরো বলেন, সাবরাং ইউনিয়নে হাজী সোনা আলীকে দিয়ে নৌকা বিজয় নিশ্চিত নয় বরং ভরাডুবির আশংকাই বেশী। তাই তিনি দলীয় হাইকমান্ডের কাছে সাবরাং ইউনিয়নের মনোনয়ন পরিবর্তন করে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিকে একইভাবে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন, হ্নীলা ইউনিয়ন, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়নেও দেখা গেছে দলীয় মনোনয়নের বাইরে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর তৎপরতা। সদর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলমকে মনোনয়ন দিলেও উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মো: শাহজাহান মিয়া বিদ্রোহী প্রার্থী হন। হ্নীলা ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ারকে মনোনয়ন দিলেও এখানে বিদ্রোহ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ। হোয়াইক্যং ইউনিয়নে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফরিদুল আলম জুয়েলকে মনোনয়ন দিলেও বিদ্রোহ করেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলমগীর চৌধুরী এবং বাহারছড়া ইউনিয়নে মৌলভী আজিজ উদ্দীনকে মনোনয়ন দিলেও বিদ্রোহ করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল্লাহ কোম্পানী, মো: রফিক কোম্পানী, মোশাররফ কাদের চৌধুরী ও হুমায়ূন কাদের চৌধুরী। সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানকে মনোনয়ন দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হন সাবেক সভাপতি নুর আহমদ ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মো: আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল এবং এখন সরকারী দল। অনেক নেতাকর্মীর ভিড় এখানে। যোগ্য নেতার কোন অভাব নেই। তাই যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে আমরা আশা করব। যথাসময়ে এ সমস্যাগুলো দলীয় স্বার্থে সমাধান হয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্রোহ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ