Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্রমুখী বিমান ভ্রমণ আরো যন্ত্রণাদায়ক করে তুলছেন ট্রাম্প

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাফিংটন পোস্ট : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বিমান ভ্রমণের প্রায়শ হতাশাজনক প্রক্রিয়া বহু লোকের জন্য তাকে আরো কঠিন করে তুলেছে। এই সমস্যা মার্কিন পর্যটন শিল্পে বড় রকম ধাক্কা দিতে পারে।
অধিকাংশ অ-মার্কিন নাগরিকের জন্য মার্কিন ভিসা পাওয়া ইতোমধ্যেই এক ব্যাপক প্রক্রিয়ায় রূপ নিয়েছে যা পেতে মাসের পর মাস বা বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক নিষেধাজ্ঞা ও কঠোরতর ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াসহ ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্দেশাবলি থেকে কঠোর বাছাই ব্যবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা অ-মার্কিন নাগরিকদের  যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে সমস্যা বৃদ্ধি করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এ মাসে ভিসা আবেদনকারীদের পরীক্ষা কঠোর করার জন্য মার্কিন দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেন।
অভিবাসন ও ভ্রমণ বিষয়ে ট্রাম্পের দ্বিতীয় নির্বাহী আদেশের সাথে সমন্বয় করে এ আদেশ জারি করা হয়, যা ফেডারেল আদালতগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
এ পদক্ষেপ ইতোমধ্যে আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়া ভিসা প্রক্রিয়াকে জটিল করতে পারে এবং কিছু বিশেষজ্ঞের মতে দেশের পর্যটন শিল্পের কোটি কোটি ডলার ক্ষতি করতে পারে। কারণ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভিসা অনুমোদনকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিলম্বিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
নতুন আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী ভ্রমণকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড বিশদভাবে পরীক্ষা করা হবে, সেই সাথে সামাজিক মাধ্যমের ইতিহাসও পর্যালোচনা করে দেখা হবে যে তারা স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ন্ত্রিত কোনো ভূখÐে ছিল কি না।
দূতাবাস কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউস ব্যবস্থাপনা ও বাজেট অফিসের কাছে আবেদনকারীদের ১৫ বছরের বসবাস, কাজ ও ভ্রমণের ইতিহাস জানার অনুমোদন চাইছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, আবেদনকারীরা যদি চাহিদাকৃত সকল তথ্য দিতে ব্যর্থ হন তাহলে দূতাবাস কর্মকর্তারা তাদের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া বিলম্বিত বা সময় পুনঃনির্ধারণ করতে পারবেন। যেখানে পর্যটকদের ভিসা না দেয়ার বৈধ কারণ আছে, কোনো কোনো আইনজীবী উদ্বিগ্ন যে লোকজন তাদের নাম বা জাতীয়তার কারণে অতিরিক্ত পরীক্ষার শিকার হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন নতুন ভিসা পরীক্ষা ব্যবস্থার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেনি, যা ১৫ থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে দূতাবাসগুলোতে পাঠানো হয়েছে। রয়টারস টিলারসন ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের মধ্যকার কেবল পর্যালোচনা করে ২৩ মার্চ নয়া আইনের ব্যাপারে একটি খবর প্রকাশ করে।
বৈরুতের মিরা গাজিরি (৩০) দুবাইতে পেপসি কোলার মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার জন্য নিউট্রিশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি ব্যবসা উপলক্ষে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ শুরু করেন। মহিলা শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, নির্দোষ সামাজিক মাধ্যম পোস্টগুলো মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকদের ওপর অন্যায্য প্রভাব ফেলতে পারে।
গাজিরি ২৪ মার্চ হাফিংটন পোস্টকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতি এমনি এক দৈনন্দিন বিষয় যে প্রত্যেকেই সামাজিক মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক বিবৃতি দেয়। কিন্তু এগুলোকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ভিত্তি বা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন নয়। এগুলো অভিমত মাত্র।
গাজিরি বলেন, কোনো আমেরিকান কোম্পানির জন্য কাজ করলে ভিসা পাওয়া সহজ হয় যদিও মার্কিন বিমানবন্দরগুলোতে জাতীয়তার কারণে অভিবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে পারে।
কোনো দেশে কারো প্রবেশের আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা ঠিক আছে, কিন্তু সকল ধর্ম ও নাগরিকতার ক্ষেত্রেই একটি  মানসম্মত পন্থা থাকতে হবে।
টিলারসন স্বীকার করেন যে, কঠোর পরীক্ষার কারণে কাজ জমে যেতে পারে। তিনি কর্মকর্তাদের দিনে ১২০ জনের বেশি আবেদনকারীর সাক্ষাৎ গ্রহণ না করার সুপারিশ করেন।
আমেরিকান অভিবাসন আইনজীবী সমিতির পরিচালক গ্রেগ চেন বলেন, নয়া আইনসমূহ আবেদনকারীদের জন্য বড় ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
ইউএস ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাথান গ্রেলা বলেন, যন্ত্রণাদায়ক কাস্টমস প্রক্রিয়া ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ করতে পর্যটকদের বিরত করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত নিরাপত্তামুখী। তার সংস্থা আশা করে,  ট্রাম্প বিশে^র কাছে এ বার্তা পাঠাবেন যে, বৈধ পর্যটকরা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত স্বাগত।
কর্পোরেট ট্র্যাভেল ম্যানেজারদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন গেøাবাল বিজনেস ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের ফেব্রæয়ারি মাসের রিপোর্ট মতে, অভিবাসন ও ভ্রমণ বিষয়ে  ট্রাম্পের প্রথম নির্বাহী আদেশের ফলে ১৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ব্যবসা ভ্রমণ বুকিংয়ের ক্ষতি হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন এক বøগ পোস্টে লিখেছে, নির্বাহী আদেশকে ঘিরে অত্যন্ত অনিশ্চয়তা ও ব্যাখ্যার অভাব রয়েছে। এর প্রভাবে ব্যবসা ভ্রমণ বুকিং বিলম্বিত বা বাতিল হয়েছে।
মিসর, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, মরক্কো, সউদী আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০টি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিমানে যুক্তরাষ্ট্রে আসা পর্যটকরা আরো বাধা-নিষেধের শিকার হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেলফোনের চেয়ে বড় আকারের ইলেকট্রনিক্সের ওপর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণ বৈধ হুমকি হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু কিছু যাত্রীর জন্য তা আরো অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি।
কাতারের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ^বিদ্যালয়ের যোগাযোগ বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক বানু আকদেনিজলি হাফিংটন পোস্টকে বলেন, আমি একজন গবেষক। সাংবাদিকদের মতোই আমরা ল্যাপটপে ডাটা বহন করি। লাগেজের সাথে এই ডাটা পরীক্ষা এক দায়। কি হবে যদি তা হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়?
গ্রেলা বলেন, আমরা মৌলিকভাবে বলতে পারি সন্ত্রাস নয়, পযটকদের স্বাগতম। আমরা বাণিজ্যের জন্য খোলা, কিন্তু সন্ত্রাসের জন্য নয়।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ