Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না : প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বিএনপি-জামায়াত গণহত্যা দিবস পালন না করায় তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত প্রমাণ করে দিয়েছে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী পাকিস্তানী হানাদারদেরই আপন মনে করে।  এখনও আলবদর, আল শামসদের সঙ্গেই আছে তারা। যারা মুক্তিযুদ্ধে শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তাদের পাশে তারা নেই।
খুনিদের মদদদাতা বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (বিএনপি-জামায়াত) এই পালন না করার মধ্যদিয়ে এটা স্পষ্ট যে, তারা একদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। অন্যদিকে যারা যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মেয়েদের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী এখনো তাদেরই আপন মনে করে।
তিনি বলেন, সমগ্র বাংলার জনগণ ও সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ তাদের পছন্দ নয়। বিএনপি-জামায়াত বুঝিয়ে দিল যে, তারা বাংলার জনগণের সাথে নেই। বরং তারা আছে আল-বদর, রাজাকার, আল-শামস ও পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে। যারা গণহত্যা দিবস পালন করে না, যারা খুনিদের ক্ষমতায় বসায় তারা এদেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করে না, এটা মনে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাই যদি না হতো, তাহলে তারা ২৫ মার্চ যে গণহত্যা শুরু হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘদিন এ দেশে যেভাবে গণহত্যা চলে, তাতে বাংলার নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকতা। মুক্তিযুদ্ধে যারা শাহাদৎবরণ করেছে তাদের পাশে থাকেত। স্বজনহারাদের পাশে থাকত। কিন্তু তারা তাদের পাশে নেই। কাজেই এদের চরিত্র এখন স্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভার ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ এবং বাঙালির বঞ্চনার ইতিহাস যেন না জানতে পারে পঁচাত্তরের পর সেভাবেই ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। পঁচাত্তরের পর ২১ বছর তারা মিথ্যা বয়ান গেয়ে গেছে। কে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলো তা নিয়ে আলোচনার দরকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আলোচনার দরকার নেই এ কারণে যে, মানুষের কাছে সত্য স্পষ্ট। হাইকোর্ট রায় দিয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যে বিতর্ক, সেটা উচ্চআদালতই সমাধান করে দিয়েছে। রায় যারা মানে না, তাদের উদ্দেশ্যটা কি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এবারেই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা দিয়ে সরকারিভাবে পালন করেছি। মন্ত্রিসভায় এবং সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এটি বিল আকারে পাস হয়েছে এবং এটি সকলের জন্যই প্রযোজ্য যে, সকলেই গণহত্যা দিবস পালন করবে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম। আমরা দেখলাম একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করল না। কেন পালন করল না, ইতোমধ্যে আমাদের বক্তারা বলেছেন। তাদের এই পালন না করার মধদিয়ে এটা স্পষ্ট যে, তারা বাংলাদেরশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। আর যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী, উপদেষ্টা এমনকি জাতির পিতার খুনীদের খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে জাতীয় সংসদে পর্যন্ত বসিয়েছিল।
তিনি বলেন, যারা খুনীদের ও যুদ্ধাপরাধীদের পুরস্কৃত করে, মদদ দেয়, গণহত্যা দিবস পালন করে না- তারা এ দেশের মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এ দেশের মানুষের কল্যাণও তারা চায় না। এটা তাদের চরিত্র এবং এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় সূচনা বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
বক্তৃতা করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজুলল করিম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান, নারী নেত্রী সিম্মি আহমেদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ।সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যাদের ‘মনবেদনা’ তারাই জঙ্গিদের রক্ষার জন্য ‘ঘুরিয়ে ফিরিয়ে’ বিভিন্ন কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই, তখন মনবেদনা কারা পায় সেটা আপনারা নিজেরাই শুনতে পাচ্ছেন, নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন। যাদের খুবই মনবেদনা হচ্ছে; তারা জঙ্গিদের কিভাবে ঢাকবে, কিভাবে তাদেরকে রক্ষা করবে, কিভাবে জনগণের দৃষ্টি ঘোরাবে সেই কথাই ভাঙা রেকর্ডের মতো বাজিয়ে বাজিয়ে বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সবদিক দিয়েই বাংলাদেশ যখনই উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে; তখনই যারা ওই স্বাধীনতাবিরোধী; তারা একটা না একটা পরিকল্পনা করার তালেই আছে।একবার ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ তে যখন শুরু করল বাংলাদেশের মানুষই প্রতিহত করেছিল। এখন সময় হয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষই এই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং এ ধরনের অপকর্ম প্রতিহত করবে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো ঠাঁই হবে না। এরজন্য যা যা করণীয় আমরা তা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন আমরা দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছি, যখন দেশটা এগিয়ে যায় তখনই যেন তাদের অন্তরজ্বালা একটু বেশি শুরু হয় এবং দেশ-বিদেশে নানা ধরনের অপপ্রচার করে করে বাংলাদেশকে হেয় করার চেষ্টা করে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশকে কেউ আর করুণার চোখে দেখে না, সম্মানের চোখে দেখে। আজকে বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর আমাদের তো একটা সমস্যা আছে ঘরের শত্রæ বিভীষণ। এ বিভীষণের যন্ত্রণা তো আমাদের ভোগ করতেই হয় সারাজীবন। আর জাতির পিতাই বলেছেন যে, এ মাটি এতই উর্বর যে ক্ষেতভরা ফসলও দেয় আবার আগাছা-পরগাছাও জন্মায়। এই আগাছা-পরগাছা শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ঘুরে বেড়ায়। আর দেশের বদনাম করা, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করা, দেশের কোথায় একটু গোলমাল বাঁধাতে পারবে, কোথায় জঙ্গিদের একটু মদদ দিতে পারবে সেই তালেই ব্যস্ত থাকে। এই আগাছা-পরগাছা যদি তুলে ফেলে দিতে পারি তাহলে আমাদের দেশটা আরো সুন্দর হবে, আরো ভাল হবে। কেউ কোথাও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কি না খুঁজে বের করার এবং তাদেরকে বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করার জন্য সবাইকে আহŸান জানান তিনি। একই সঙ্গে বাড়ির মালিকদেরও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।
আলোচনার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব এবং ১৫ আগস্টের সকল শহীদ, শহীদ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদসহ সকল গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা, ১৪-দলীয় নেতা এবং সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দেশের জনগণ যখন আমাদের ক্ষমতায় আনে তখন জাতীয় গণমাধ্যমের ‘লুকআপে’ রেডিও-টিভিতে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর সুযোগ হয়। একটা প্রজন্ম যারা এই ভাষণ শুনতে পারেনি তারা এটি শুনতে পাওয়ায় এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস তাদের কাছে স্পষ্ট হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের যুগ মিডিয়ার যুগ। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বেরই সত্য কথা জানা যায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক যে সকর সংস্থা বা মিডিয়া রয়েছে সেখানে যদি ব্রাউজ করে তাহলে দেখবেন ১৯৭১ সালে সেই জাতির পিতার স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু আজকে স্পষ্ট। সেসব মিডিয়ার আর্কাইভে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। সে সুযোগ এখন আছে। আমাদের পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া এখনও অনেক স্মৃতিকথা লিখে যাচ্ছে বা সেদিনের ঘটনা প্রচার করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর পরই জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হয়। আমরা দীর্ঘদিন পরে হলেও সেই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। কারণ, গণহত্যা বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত এবং জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। আর যেসব দেশ তাদের গণহত্যা দিবস পালন করতে চায় সেই সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে জাতিসংঘের ওই স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে।



 

Show all comments
  • yeakub ২৮ মার্চ, ২০১৭, ৩:১০ এএম says : 0
    What is call freedom? Do you know my great PM.
    Total Reply(0) Reply
  • Ibrahim Hossain ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০৪ পিএম says : 0
    কে বিশ্বাস করলো না করলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আমি চাই আমার ভোটাধিকার ফেরত
    Total Reply(0) Reply
  • Md Omar ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০৫ পিএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,,দেশটাতো আপনারা দুজনেই চালান,,কেউ কাউকে অপবাদ না দিয়া দেশের যে ভাবে মঙ্গল হয় সে ভাবে এগিয়ে যান
    Total Reply(0) Reply
  • Jahid Hassan ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০৭ পিএম says : 0
    বিশ্বাস করে কিন্তু ইন্ডিয়ার তাবেদারীকরাতে বিশ্বাস করেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharouf Hossain ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০৮ পিএম says : 0
    khali awameleauge kore?
    Total Reply(1) Reply
    • Habib ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১০:৩৯ পিএম says : 4
      Right .Only awamilger sob kicu kore other kicui na .

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ