Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কালো টাকা সাদা করার মেশিন বন্ধ হোক

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুরশাদ সুবহানী : দেশে বহু শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। তাদের মধ্যে মুখ্য হলো দুই শ্রেণি-পেশার মানুষ সরকারি আর বেসরকারি। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন দৈনিকে বড় বড় অক্ষরে লেখা হয়েছে ‘সরকারি কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। অথচ, দেখা গেছে- একজন সরকারি কর্মচারী যিনি আগে ৩০ হাজার টাকা মূল বেতন পেতেন, এখন পাচ্ছেন ৩৮ হাজার টাকা। বৃদ্ধি পেয়েছে বেসিকের ওপর মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই বৃদ্ধিতে পুরনো চাকরিজীবীদের তেমন কোনো সুবিধা হয়নি। সুবিধা পাচ্ছেন নতুনরা। যা হোক বেড়েছে। তবে তা দ্বিগুণ বা তিনগুণ নয়। টাইম স্কেল দেওয়া হবে না। তার বদলে পাবে উৎসব ভাতা (যা আগেও পেতেন এর সাথে যোগ হয়েছে নববর্ষের ভাতা ইত্যাদি।) যেদিন পেপারে বেতন দ্বিগুণ খবর এসেছে তারপর পর দিন থেকেই বাজারে নিত্যপ্রয়েজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি অব্যাহত। তারপরও বর্তমান সরকার এটা করেছে। তার জন্য ধন্যবাদ। বেসরকারি কাজ যারা করেন তাদের অবস্থা কী? তাদের বেতন সরকারি নিয়মে বাড়ে না। সেই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়ের ওপর বৃদ্ধি পায়। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। সরকারি কর্মচারীদের এই বেতন কাঠামো বৃদ্ধি না হলেও চলত। সরকার কি দুর্নীতি কমাতে বেতন বৃদ্ধি করেছে? নাকি তাদের জীবনমানের আরো উন্নতির জন্য। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করে দুর্নীতি কি কমেছে?
যারা দুর্নীতি করতেন, তারা একই অবস্থায় আছেন বলে শুনেছি। আমার জেলার খুব বড় একজন মোটর ব্যবসায়ী ছিলেন (মরহুম) আবুল বরকাত খান। তিনি বাস-কোচ ট্রিপ থেকে ফিরলেই বাসের ড্রাইভার, সুপারভাইজার, হেলপার সবাইকে ডাকতেন। আজ ক্যাশ কত? আর তোরা কত পকেটে ভরেছিস? আমি একদিন বললাম ভাই, ওরা গরিব মানুষ, ওদের বেতন বাড়িয়ে দিলে তো আর লাইনের টাকা পয়সা পকেটে নেবে না। তিনি হেসে আমার নাম ধরে বললেন, তা নয়, বেতন ওদের ১০ টাকা বাড়িয়ে দিলে আমার তেমন লোকসান হবে না। কিন্তু এতে ওদের লাইনের পয়সা চুরি করা কমবে না। অনেক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী (সরকারি) এদের অবস্থাও আসলে তাই। দুর্নীতি কমেনি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
যারা সরকারি চাকরি করেন না, তাদের দশাটা কি? একটি পার্সেন্টেজ করলে দেখা যাবে সরকারি চাকরিজীবীদের চেয়ে বেসরকারি সেক্টরে বেশি সংখ্যক মানুষ কাজ করেন। বিভিন্ন কোম্পানি, গার্মেন্ট, শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এর বাইরে যারা শ্রমজীবী তারা বেতন নেবেন কার কাছ থেকে। তাদের আয় বাড়াতে রিকশাচালক ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা, সিএনজি চালক, কৃষি শ্রমিক সবাই। কারণ বাজার প্রতিযোগিতায় তাদের টিকে থাকার জন্য। সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। বৈষম্য কোনো সমাজে সুফল বয়ে আনে না। মার্কসীয় দর্শন সেভাবে বুঝি না। তবে দেশে পুঁজি বিকশিত হওয়ার একটা সিলিং থাকা দরকার। একজন ঘুষখোর কোটি টাকা ঘুষ খায়। দেশে এখন কোটিপতি পরিবারের সংখ্যা অনেক। কেউ ঘুষ দুর্নীতি করে, কেউ অনৈতিক মাদক ব্যবসা করে। কেউ ঠিকাদারি করে। নানাভাবে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া হয়।
তবে কোটি টাকা বানানোর প্রতিযোগিতা কমবে যদি কালো টাকা সাদা করার ধোলাই মেশিন না থাকে। শুধু একবার বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দিলেই এই টাকা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত হয়তো বলবেন, এই সুযোগ না দিলে তারা কালো টাকা পাচার করবে। কোন রাস্তায় কীভাবে কালো টাকা পাচার হয়, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার এটা অজানা থাকার কথা নয়। সেই রাস্তা বন্ধ করতে হবে। ভিন দেশের ব্যাংকে কালো টাকা ঢুকলে, সেই সরকারের সাথে আলোচনা করে সে দেশের ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া যেতে পারে। যারা বিদেশে কালো টাকা দিয়ে বাড়ি বা জায়গা কিনছেন, তাদের অর্থের উৎস জানতে সেই সরকারকে অনুরোধ করা যেতে পারে। শুধু একবার কালো টাকা সাদা করার ধোলাই মেশিন বন্ধ হলে পরের বছর কালো টাকার হার কমে যাবে। সমাজকে অস্থিতিশীল করতে কালো টাকা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। মাদকের মতোই ভয়াবহ এর ছোবল। আশা করি এই বছরের বাজেট মাসে (জুন-২০১৭) কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা রহিত করবেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। আশা করি তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
ষ লেখক : দৈনিক ইনকিলাবের জেলা সংবাদদাতা, পাবনা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন