Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সিরিয়ায় লড়াই করছে জিনজিয়াংয়ের কয়েক হাজার উইঘুর মুসলিম জিহাদি

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ওয়াশিংটন পোস্ট : অনেকেই আরবি বলতে পারে না, সিরিয়ায় তাদের ভ‚মিকার কথাও বাইরের দুনিয়া সামান্যই জানে। তবে সিরিয়ায় তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির (টিআইপি) চীনা যোদ্ধারা সংগঠিত, যুদ্ধাভিজ্ঞ এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী যুদ্ধাভিযানে তারাই মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার চীনা জিহাদি সেখানে এসেছে। তাদের কিছু অংশ আল নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত আল কায়েদার সাথে যোগ দেয়। অন্যরা ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রæপের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে এবং অল্প সংখ্যক আহরার আল শামের মতো উগ্র রক্ষণশীল গ্রæপগুলোর সাথে যোগ দেয়।
তবে চীনা জিহাদিদের বেশির ভাগই রয়েছে তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির সাথে। এসব জিহাদির বেশির ভাগই চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের তুর্কিভাষী উইঘুর মুসলিম। সিরিয়ায় তাদের ক্রমবর্ধমান ভ‚মিকা সিরিয়া ও চীনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করেছে। চীনাদের আশঙ্কা যে এসব জিহাদি একদিন দেশে ফিরতে এবং সেখানে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি হচ্ছে পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলনের (ইটিআইএম) অন্য নাম যারা জিনজিয়াংকে পূর্ব তুর্কিস্তান হিসেবে আখ্যায়িত করে। সিরিয়ার প্রায় সব জিহাদি গ্রæপের মতো তাদেরও লক্ষ্য আসাদের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং কঠোর ইসলামী শাসন চালু করা। সিরিয়ার যুদ্ধে তারা সে সময় অংশগ্রহণ করে যখন চীন আসাদ সরকারের আন্তর্জাতিক এক জোর সমর্থনকারীতে পরিণত হয়। রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও কয়েকবার সিরিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আনা প্রস্তাবে ভেটো প্রদান করেছে।
বেইজিং দেশে এবং বিশ^ব্যাপী চীনা লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য ইসলামি জিহাদিদের দায়ী করে আসছে যাদের বিদেশি যোগাযোগ আছে এবং জিনজিয়াংয়ের স্বাধীনতা চায়। চীন সরকার বলেছে, তাদের কিছু লোক দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে জিহাদে যোগ দিয়েছে। তবে সমালোচকরা বলেন, উইঘুররা তাদের মাতৃভ‚মিতে বৈষম্যের শিকার এবং অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিকিকৃত। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হান চীনাদের নিপীড়নমূলক শাসন থেকে মুক্তি চায়।
বর্তমানে বিলুপ্ত উগ্রপন্থী জুন্দ আল-আকসা গ্রæপের সদস্য আবু দারদা আল-শামি বলেন, টিআইপির রয়েছে সেরা ইনঘেমাসিয়ুন বা জীবনোৎসর্গকারী বা আত্মঘাতী হামলাকারী। আইএস ও আল কায়েদার শাখা সংগঠন ফাতাহ আল শাম আত্মঘাতীদের ব্যবহার করে। আত্মঘাতীদের কাজ হচ্ছে লক্ষ্যস্থলে অনুপ্রবেশ করা, বিপর্যয় ঘটানো ও বড় আকারে স্থল অভিযান শুরু হওয়ার আগে মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করা।
আল শামি বলেন, তারা হচ্ছে আক্রমণকারী সিংহ যারা উত্তর সিরিয়ায় টিআইপি যোদ্ধাদের পাশাপাশি অনেক যুদ্ধে লড়াই করেছে।
সিরিয়ায় চীনের রাষ্ট্রদূত জি জিয়াওউইয়ান নভেম্বরে সাংবাদিকদের বলেন যে, মানবিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তাদের দু’দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সামরিক বিনিময় ঘটে। তবে চীনা কর্মকর্তারা বারবারই সৈন্য বা অস্ত্র প্রেরণের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন।  
ওয়াকিবহাল একটি সূত্র জানান, গোয়েন্দা ও সামরিক চলাচল বিষয়ে তথ্য ভাগাভাগির লক্ষ্যে গত বছর চীনা ও সিরীয় কর্মকর্তারা মাসে একবার তাদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শুরু করেন।
চীনা সমকালীন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউট (সিআইসিআইআর)-এ সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ ও সিআইসিআইআর নিরাপত্তা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক লি ওয়েই বলেন, এসব লোক সিরিয়ায় শুধু আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের পাশাপাশিই লড়াই করছে না, তারা চীনে সম্ভবত ফিরে যাবে এবং চীনের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করবে।
ব্রিটেন ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদুর রহমান বলেন, সিরিয়ায় প্রায় পাঁচ হাজার চীনা যোদ্ধা রয়েছে। তাদের অধিকাংশই টিআইপির যোদ্ধা, যারা উত্তর সিরিয়ায় আছে। পরিবারের সদস্যসহ তাদের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ লি বলেন, রামির উল্লিখিত সংখ্যা অনেক বেশি। তার ধারণা যে, সিরিয়ায় চীনা যোদ্ধার সংখ্যা ৩০০ এবং তারা তাদের সাথে পরিবারের ৭০০ সদস্য নিয়ে এসেছেন।
লি বলেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তের মধ্যে চলাচল কঠোর হওয়ার প্রেক্ষিতে এখন তাদের পক্ষে সিরিয়ায় প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
সিরিয়ার বিরোধী কর্মীরা ও সরকারপন্থী মিডিয়া বলেছে, কয়েক ডজন টিআইপি যোদ্ধা সরকার ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। সে সাথে তারা গত দু’বছর প্রধানত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধ করেছে।
আত্মঘাতী হামলাকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন শহীদুল্লাহ আল-তুর্কিস্তানি। ড্রোন থেকে করা গত বছরের একটি হামলার ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি আলেপ্পোর কাছে একটি বিস্ফোরক বোঝাই যান চালিয়ে গিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় কয়েক ডজন সরকারপন্থী মিলিশিয়া নিহত হয় বলে দাবি করা হয়।
২০১৫ সালে এ গ্রæপের সদস্যরা উত্তরপশ্চিমের ইদলিবে হামলা চালায়। তারা আসাদের লাটাকিয়া অঞ্চলের শক্ত ঘাঁটির নিকটে জিসর আল-সুঘুর নামক কৌশলগত শহর দখল করে। তারা শহরের একটি চার্চের ক্ষতি সাধন করে ও চার্চের শীর্ষে তাদের কালো পতাকা ওড়ায়।
২০১৬ সালের শেষ দিকে উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো নগরীর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব অংশের উপর সরকারের আরোপিত অবরোধ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ভেঙে ফেলায় টিআইপ যোদ্ধারা প্রধান ভ‚মিকা পালন করেছিল।
চীনা জিহাদিরা যে সিরিয়ার যুদ্ধে একটি বিষয় তা বোঝা যায় প্রেসিডেন্ট আসাদ যখন গত মাসে চীনের ফিনিক্স টিভির সাথে সাক্ষাতকার দেন। তিনি বলেন, তারা আমাদের দেশকে অন্যদের চেয়ে বেশি জানে। সুতরাং তারা তোমাদের দেশেও অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে।
অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রæপের চেয়ে টিআইপি অত্যন্ত গোপন সংগঠন এবং তারা তাদের নিজেদের লোকদের সাথে বসবাস করে। তারা ইদলিবের অংশ, কৌশলগত শহর জিসর আল-সুঘুর এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় লাটাকিয়া প্রদেশে কুর্দি পাহাড়গুলোতে সক্রিয়।
ইদলিব প্রদেশে কর্মরত চিকিৎসক আবদুল হাকিম রামাদান বলেন, তাদের একটি টিম গৃহযদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমের একটি গ্রামে শিশুদের ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য প্রবেশ করতে চাইলে টিআইপি যোদ্ধারা তাদের সেখানে প্রবেশে বাধা দেয়। তারা জানায়, চীনারা ছাড়া কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না। রামাদান বলেন, সিরিয়ায় আসা অন্যান্য দেশের  যোদ্ধারা স্থানীয় জনগণের সাথে মিশে গেলেও চীনা যোদ্ধাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এ রক্ষত্রে ভাষা একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিরিয়ায়

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ