Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বার বার দিদার বলী

ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রুমু, চট্টগ্রাম ব্যুরো : লালদীঘি ময়দানে ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলার ১০৮তম আসরে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কক্সবাজার জেলার রামুর দিদার বলী। গত আসরে দিদার বলী ফাইনালে উখিয়ার শামসু বলীর কাছে হেরে গিয়ে শিরোপা হাতছাড়া করেছিল।
কিন্তু এবার শামসুকে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে। লালদীঘি মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হয় ২০ ফুট বাই ২০ ফুট চতুর্ভুজ আকৃতির খেলার মঞ্চ। মাটি থেকে প্রায় ৫ ফুট উপরে বালি দিয়ে তৈরি করা হয় এ মঞ্চ। মঞ্চের চারিদিকে রশি দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছিল। মোটাসোটা দিদার বলীর চাইতে অনেকটা হালকা শামসু বলী। কিন্তু বলীখেলা হচ্ছে কৌশলের খেলা। ১৭ মিনিটের চূড়ান্ত লড়াইয়ে এ দুই বলী লড়াই করেছে সমানে সমানে। অতঃপর হার মানে দিদারের কাছে শামসু। এর আগে দুই সেমিফাইনালে রামুর দিদার মিরসরাইয়ের লিয়াকতকে এবং উখিয়ার শামসু কুমিল্লার রাসেলকে হারিয়ে ফাইনালে উন্নীত হয়। পেশায় মুদি দোকানদার দিদার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলায় নয়বার চ্যাম্পিয়ন, চারবার যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন এবং গত আসরে রানার্স আপ হয়েছি। কিন্তু এবার শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। চ্যাম্পিয়ন নগদ ২০ হাজার টাকা ও ট্রফি এবং রানার্স আপ ১৫ হাজার টাকা ও ট্রফি প্রধান অতিথির কাছ থেকে গ্রহণ করে। এর আগে বলীখেলার উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ উল হাসান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ক্লাষ্টার মার্কেট ডিরেক্টর নাজির আহমেদ।
প্রচুর দর্শক, তাদের হৈচৈ, চিৎকার আর সাথে ঢোল, বাদ্য-বাজনার তালে তালে বলীরা উৎসাহ ভরে অংশ নিয়েছে এ বলীখেলায়। মিরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, চন্দনাইশ, মহেশখালী, রামু, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার, পটিয়া, রাঙ্গামাটি, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, কুমিল্লা, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঘাইছড়ি, চকরিয়া, গহিরা, ফটিকছড়ি থেকে খেলতে আসে বলীরা। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তারা। খেলায় অংশগ্রহণকারী সিনিয়র বলীদের মধ্যে ছিলেন উখিয়ার কলিমউল্লাহ, সিদ্দিক, মহেশখালীর শাহাবুদ্দিন, বাঁশখালীর আমজাদ, হাটহাজারীর মোঃ নবী প্রমুখ। ১০২ জন নাম লিপিবদ্ধ করলেও মাঠে আসে ৯১ জন। তার মধ্যে লড়াই করেছে ৭০ জন। বলীখেলায় রেফারির দায়িত্ব পালন করেন সাবেক ফুটবলার ও সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক। তাকে সহযোগিতা করেন নুর মোহাম্মদ লেদু ও জাহাঙ্গীর আলম।
দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত দোকানিরা লালদীঘিরর আশপাশ এলাকা ও সিনেমা প্যালেসের মোড় থেকে, আন্দরকিল্লার মোড় এবং কোতোয়ালীর মোড় থেকে কেসিদে রোডসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় শত শত দোকানে ইতোমধ্যে তাদের নানা রকমের পসরা সাজিয়ে বিক্রি শুরু করে দিয়েছে। এ বলীখেলাকে ঘিরে আজও চলবে বৈশাখী মেলা। লালদীঘির আশপাশ এলাকায় রাস্তার দু’ধারে অস্থায়ীভাবে বসেছে দোকানদাররা। কোথাও রকমারি মাটির কলসি, কোথাও বেতের চেয়ার, কোথাও কাঠের, কোথাও ঝাড়–, আবার কোথাও নানাবিধ মনোহারী দ্রব্যের পসরা সাজিয়েছেন দোকানীরা। এছাড়া ফুল ও ফলদ গাছ নিয়ে এসেছে অনেক নার্সারী, সঙ্গে রয়েছে মাটির টব, গাছের সার ও বীজ। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করা হয়। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য একত্রিত করে তোলার লক্ষ্যে বদরপাতির বাসিন্দা আবদুল জব্বার লালদীঘি মাঠে সর্বপ্রথম কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। সেই থেকেই চলে আসছে এই প্রতিযোগিতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ