Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভয়াবহ প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগের কবলে বাংলাদেশ

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবদুল গফুর : এ সপ্তাহের প্রধান খবর হাওরাঞ্চলের জনগণের দুর্ভোগ। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় উত্তর দিকের ভারত থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে একে একে সব ক’টি হাওরই ডুবে গিয়ে এখন সাগরে পরিণত হয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চলের লাখো লাখো মানুষের শুধু ক্ষেতের ধানই ডুবে যায়নি, হাঁস ও মাছেও মড়ক দেখা দেয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। হাওরাঞ্চলের দুর্গত মানুষকে রক্ষার জন্য দেশের বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
সরকার হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার এ দাবি বাস্তবায়নে সম্মত না হলেও উক্ত দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ-তৎপরতা চালানো হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে বর্ণনা করেছেন স্থানীয় লোকজন। কারণ দুর্গত এলাকার জনগণের দুর্ভোগের খুব সামান্যই দূর হচ্ছে তার দ্বারা।
হাওরাঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত ভারতীয় এলাকার পাহাড়ী এলাকা থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে হাওর জনপদের দুর্ভোগের ঘটনা মোটেই নতুন কিছু নয়। সে কারণে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় অতীতে। এ জন্য পর্যাপ্ত অর্থও বরাদ্দ করা হয়। গত সোমবারের দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, হাওর রক্ষা বাঁধের টাকা কাউয়ার পেটে চলে গেছে। ইনকিলাব-এ প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : “হাওর রক্ষা বাঁধের টাকা কাউয়ার পেটে।” এখানে উল্লেখ্য, সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি একবার বলেছিলেন, আওয়ামী লীগে কাউয়া ঢুকেছে। তা হলে বোঝা যাচ্ছে, সরকারি দলের কাউয়ারা হাওর রক্ষা বাঁধের টাকা খেয়ে ওইসব বাঁধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়ার ফলেই হাওর জনপদের লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। এ অভিযোগ সত্য হলে এই অমার্জনীয় অপরাধের জন্য যারা দায়ী তাদের বিনা বিলম্বে কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
এ তো গেল হাওরাঞ্চলে ভারত থেকে আসা বন্যার পানির তান্ডবের কথা। এর সঙ্গে এবার দেশের প্রায় সর্বত্র কয়েক দিন অবিরাম বৃষ্টিপাতও মানুষের জন্য কম দুর্ভোগ বয়ে আনেনি। গত মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, বিগত ৩৫ বছরের মধ্যে এবারই এ সময় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টিপাত হলেও এ অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতে প্রথম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম। গত শনিবার দৈনিক ইনকিলাব-এ প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : ‘অতি বর্ষণ ও জোয়ারে চট্টগ্রামে কোমর সমান পানি’। দৈনিক যুগান্তরে সংবাদটির শিরোনাম ছিল : ‘বৃষ্টিতে থৈ থৈ চট্টগ্রাম নগরী’। দৈনিক ইনকিলাবে গত রোববারে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : ‘বর্ষার আগেই ডুবছে চট্টগ্রাম’। গত রোববার দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সচিত্র প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : ‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা/মেয়র আসে, মেয়র যায়, দুর্ভোগ থেকে যায়।’
গত মঙ্গলবার দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পৃষ্ঠায় এ অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের খবর দিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তার শিরোনাম ছিল : ‘আগাম বন্যায় বড় ক্ষতি। স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত/ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা।’ তবে প্রাচীনতম দৈনিক ইত্তেফাক গত মঙ্গলবার  এ সম্পর্কিত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে জনগণ আরো আতঙ্কিত বোধ করবেন। দৈনিক ইত্তেফাকের এ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : ‘বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।’
এই যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অবস্থা, তখন দেশের রাজনৈতিক অবস্থার দিকে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই? প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের সাধারণত হাত থাকে না। তাই দেখা যায়, ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মাঝে মাঝে প্রচন্ড বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অস্বাভাবিক দুর্ভোগের শিকার হয় মানুষ। আসলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের হাত থাকে না। মানুষ বড়জোর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ততা হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ কার্যক্রম হাতে নিতে পারে। বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের জন্য এ ধরনের প্রতিরোধ কার্যক্রমের অন্যতম উদাহরণ হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ। কিন্তু সেই হাওর রক্ষা বাঁধের টাকা যখন কাউয়াদের পেটে চলে যায় তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট গণমানুষের দুর্ভোগের দায় সংশ্লিষ্ট কাউয়া শ্রেণীর মানুষদের ওপরও পড়তে বাধ্য। এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড যদি দেশের ক্ষমতাসীন সরকার দেখেও দলীয় বিবেচনায় না দেখে থাকে তা হলে সে জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক কর্মকর্তাদেরও এ ব্যাপারে দায়ী করতে হয় বাস্তবতার খাতিরে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরই সম্প্রতি তাঁর এক বক্তব্যে স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগে কিছু কাউয়া ঢুকে পড়েছে। তাঁর এই কঠোর সত্য উচ্চারণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে হয়, কোনো দল যখন কোনো দেশে ক্ষমতাসীন থাকে তখন তার মধ্যে কাউয়াদের প্রবেশ একটু বেশি মাত্রায়ই ঘটে থাকে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারণ ক্ষমতাসীন দলের হাতেই থাকে অবৈধভাবে সম্পদ আহরন ও বৃদ্ধির অবাধ সুযোগ। এ কারণে যে দল দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকে তার নেতাকর্মীরা এককালে সৎ থাকলেও ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের মধ্যেও অবৈধভাবে সম্পদ আহরণ ও বৃদ্ধির প্রবণতা বৃদ্ধি পায় স্বাভাবিকভাবে।
এটা স্বাভাবিক পথে জনগণের অবাধ রায়ের মাধ্যমে যারা ক্ষমতাসীন হয় তাদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু যারা ছলে-বলে-কৌশলে দেশের অন্যতম প্রধান দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে হামলা-মামলার জালে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি অসম্ভব করে তুলে পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার সুচিন্তিত পরিকল্পনামাফিক কার্যধারা অনুসরণ করতে অভ্যস্ত, তাদের সাথে হাওর রক্ষা বাঁধের টাকা যে কাউয়াদের পেটে যায়, তাদের তেমন মৌলিক পার্থক্য থাকে কি? আর এভাবে যারা ক্ষমতাসীন হয়ে চিরকালের মতো ক্ষমতাসীন থাকার লক্ষ্যে অন্যায় রাজনৈতিক পন্থা অনুসরণ করে চলে, তাদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে গণতান্ত্রিক সরকার বলে দাবি করার কোনো উপায় থাকে কি? থাকে না।
আমাদের দেশে যে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি বিকশিত হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না, তার মূল কারণও এখানেই। গণতন্ত্রের মূল দাবি হলো : বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় কাজ করে যাওয়ার সমান সুযোগ পাবে, দেশে নিয়মিত ব্যবধানে অবাধ নির্বাচনের সুযোগ পাবে সকল নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং একটি প্রকৃত অর্থের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী দল ক্ষমতাসীন হবে। এটাই গণতান্ত্রিক রাজনীতির মোদ্দা কথা।
এই গণতান্ত্রিক মর্মবাণীর আলোকে যদি আমরা আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বিচার করি, তা হলে আমরা কী দেখি? আমরা দেখি, যে গণতন্ত্রকে বাংলাদেশের জনগণ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বলে বিবেচনা করে, সেই গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আমলেই সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে একটি মাত্র সরকারি দল রেখে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়। একাধিক রাজনৈতিক দল থাকলে দেশে নিয়মতান্ত্রিক বিরোধী দলের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দেশে পরিবর্তন আনার যে সুযোগ থাকে তার অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী প্রবণতা দেখা দেয়। আমাদের দেশে যার দৃষ্টান্ত ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের দুঃখজনক ঘটনাবলি।
এসব ঘটনাবলির পর দেশে একপর্যায়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে একটি নির্বাচিত সরকারকে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে উৎখাত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে বসেন তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ সময় সারা দুুনিয়াকে অবাক করে দিয়ে ওই সামরিক ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেলের প্রতি সমর্থন দিয়ে বসেন দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা। এই অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটতে পেরেছিল সম্ভবত এই বিবেচনায় যে, সামরিক ক্যুর মাধ্যমে উৎখাত হওয়া ওই নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। এর অর্থ হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চেয়ে আওয়ামী নেত্রীর নিকট অধিক গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছিল সামরিক ক্যুর মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার উৎখাতকারী সামরিক জেনারেলের শাসন। বলাবাহুল্য, এটা শেখ হাসিনার গণতন্ত্রপ্রীতির প্রমাণ বহন করে না।
বাংলাদেশের জনগণের মনে থাকার কথা, এরপর শুরু হয় জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ স্বৈরশাসন। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলেও বহু দিন আওয়ামী লীগ এরশাদ-বিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে থাকে। পরে অবশ্য একপর্যায়ে আওয়ামী লীগও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়।  তবে ততদিনে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতিতে নবাগতা বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী হিসেবে জনগণের কাছে আবির্ভূত হন। এদিকে এরশাদ শাসনামলের শেষ দিকে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একমত হয়।
যে রকমটা আশা করা গিয়েছিল নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও অবাধ হয়। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজস্ব ভোটকেন্দ্রে ভোট দানের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতাকালে এক পর্যায়ে বলেন- আমি সকল জেলার খবর নিয়েছি, নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়েছে। আপনারা লক্ষ্য রাখবেন, কেউ যেন ভোটে হেরে গিয়ে এর মধ্যে আবার কারচুপি আবিষ্কার না করে। ভোট গণনা শেষে যখন জানা গেল আওয়ামী লীগ নয়, নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বিএনপি- তিনি অবলীলাক্রমে বলে ফেললেন, নির্বাচনে সূ² কারচুপি হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হলেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে না পারলে ধরে নিতে হবে নির্র্বাচনে কারচুপি হয়েছে ! বলাবাহুল্য, এটাও তার গণতন্ত্র-প্রীতির প্রমাণ বহন করে না।
পাঠকদের মনে থাকার কথা, এরপর যথারীতি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনা হন বিরোধীদলীয় নেত্রী। খালেদা সরকারের শেষ দিকে নতুন নির্বাচনের প্রশ্ন উঠলে প্রধানত শেখ হাসিনার দাবির মুখেই সকল জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের বিধান সংবিধানে বিধিবদ্ধ হয়। এই বিধান অনুযায়ী দেশে বেশ কয়েকটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং দেশের দুই প্রধান দল পরপর বিজয়ী হয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ লাভ করে। এরপর একপর্যায়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে সংবিধান সংশোধিত করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিধান চালু করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হলে অতীতের সমঝোতা লংঘনের অভিযোগে বিএনপি সে নির্বাচন বয়কট করে। দেশের একটি প্রধান দল নির্বাচন বর্জন করায় সে নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মী তো দূরের করা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার গরজ অনুভব করেননি। কারণ তারা জানতেন তাদের অনুপস্থিতিতেও তাদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা।
বাস্তবে হয়ও সেটাই। বিরোধী দলের অনুপস্থিতির সুযোগে অল্প সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ইচ্ছামতো ব্যালটপত্রে সিল মেরে আওয়ামী প্রার্থীদের বিশাল ভোটে ‘জয়ী’ হওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। জনগণ স্বাভাবিক কারণেই এ নির্বাচনকে ভোটারবিহীন নির্বাচন নামে অভিহিত করে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের ভোটারবিহীন নির্বাচনের ফসল। এর পর এ সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন হয়েছে তার সিংহভাগই এভাবে অস্বাভাবিক দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। পৌরসভার দু-একটা নির্বাচনে সরকার পরিকল্পিতভাবে অবাধ নির্বাচনের সুযোগ দিলে সেখানে বিএনপি প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু জনগণের নির্বাচিত এসব বিজয়ী প্রার্থী যাতে ক্ষমতায় থাকতে না পারেন সরকার তার সুব্যবস্থা করে বিভিন্ন অভিযোগে তাদের বরখাস্ত ও গ্রেফতার করার মাধ্যমে। গাজীপুর থেকে শুরু করে কুমিল্লা পর্যন্ত একই ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সরকার প্রমাণ করেছে গণতন্ত্রকে তারা কত ভয় পায়। এই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে এ বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশে বর্তমানে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি চলছে ভয়াবহ রাজনৈতিক দুর্যোগ। আমরা কায়মনোবাক্যে পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে যেন অচিরেই শুভবুদ্ধির উদয় হয় এবং দেশ যেন প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক  সকল প্রকার দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তিলাভ করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভয়াবহ প্রাকৃতিক
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ