Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তানোরে বোরো ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরে চলতি বোরো মৌসুমে প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান নিয়ে কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে। একদিকে কালবৈশাখী ও হালকা শিলাবৃষ্টি অন্যদিকে উজানের ধেয়ে আশা পানিতে অকাল বন্যা তার সঙ্গে নতুর করে যোগ হয়েছে শ্রমিক ও হপার মেশিনের সঙ্কট। জানা গেছে, তানোর পৌরসভা, কামারগা ইউপি ও তালন্দ ইউপির নিন্মাঞ্চলের বেশির ভাগ বোরো খেত তলিয়ে গেছে, বাকি যা আছে সেটিও শ্রমিক সঙ্কটের কারণে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবেন কি না ? তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় কৃষকদের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোরে চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ইতমধ্যে আগাম বন্যায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তানোর পৌর এলাকার গুবিরপাড়া গ্রামের কৃষক আরশাদ আলী (৪৫) জানান, কিছু বুজে উঠার আগেই হঠাৎ করে উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে তার বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। যেটুকুক বাকি আছে সেটিও শ্রমিক সঙ্কটের কারণে উঠানো নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফসলের অর্ধেক দিয়েও মিলছে না শ্রমিক, পাওয়া যাচ্ছে না মাড়াই করা হপার মেশিন। তানোর পৌর সদরের কৃষকরা এতোদিন যেকোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগে স্টেডিয়াম মাঠে বোরো ধান মাড়াই  ও শুকাতেন। কিন্তু এবার মাঠে আগামী ৭ মে থেকে শুরু হচ্ছে বৈশাখী মেলা। যে কারণে বাধ্য হয়ে স্থান সংকুলন না হওয়ায় চাষিদের দুর্ঘটনার আশাঙ্কা মাথায় নিয়ে জনবহুল রাস্তায় ধান মাড়াই করতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, তানোরের শিবনদীর উপর নির্মিত সংযোগ সড়ক, তানোর-তালন্দ, হাতিশাইল-কমারগা, তানোর-মুন্ডুমালা ও তানোর-বায়া রাস্তার বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের ধান মাড়াই করতে দেখা গেছে। গুবিরপাড়া গ্রামের কৃষক মুকছেদ আলী বিলকুমারী বিলে দেড় দিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। তিনি জানান, অনেক কষ্ট করে পানির ভিতরে ধান কেটে দড়ি দিয়ে বেধে পানির উপর দিয়ে ভাসিয়ে আনা হয়েছে তবে স্থান সংকুলস না হওয়ায় রাস্তার ধারে রাখা হয়েছে। ধান একেবারেই ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে । এজন্যে হপার মেশিনও মাড়াই করতে চাচ্ছে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য চাষিদের মহা দূর্যোগের কথা না ভেবে বৈশাখী মেলার জন্যে পুরো মাঠ ঘিরে ফেলা হয়েছে। এজন্যে বাড়তি টাকা খরচ করে রাস্তায় এনে মাড়াই করতে হচ্ছে ধান। হিন্দুপাড়ার একাধিক চাষিরা জানান, ধান মাড়ায়ে আমাদের ভরসা ছিল স্টেডিয়াম মাঠ। কিন্তু চাষিদের দুর্যোগের সময় সেখানে কথিত বৈশাখী মেলা আয়োজন করা হয়েছে। এবার বোরো চাষিদের লোকসানের শেষ নেই। বিঘাতে যদি ফলন হয় ২৫ মন শ্রমিককে দিতে হচ্ছে সাড়ে ১২ মন ধান। মাড়াই করতে বিঘা প্রতি গুণতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। লাভ তো দূরে থাক দোকানের বাঁকি পরিশোধ করাই কষ্টকর ব্যাপার। কৃষকের ঘামের ফসলের দূর অবস্থা কোন ক্রমেই কাটছে না। যেন কৃষকের ফসলের এ দূর অবস্থা হবে এমন নানা প্রশ্ন চাষিদের। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কমকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, বিলের জমিতে অকাল বন্যা দেখা দেয়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা তদন্ত করে ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। সরকারী ভাবে কোন সাহায্য-সহায়তা এলে পাবেন কৃষকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ