Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পশ্চিম জোনের ২১ জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত

গ্রীষ্মের দাবদহের সাথে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ সংকটে

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : গ্রীষ্মের দাবদহের সাথে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে দেশের পশ্চিম জোনের ২১ জেলায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষের সুস্থ’ জীবন ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। এমনকি এবারের শবে বরাতের রাতে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ সংকটে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১ টি জেলার মুসুল্লীয়ানদের চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়। দেশের পশ্চিম জোনের ২১ জেলায় চাহিদার ষাট ভাগের বেশী বিদ্যুৎ দিতে না পারায় এ অঞ্চলের জরুরী স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে শিল্প ও ব্যবসা-বানিজ্যে পর্যন্ত বিপর্যয় নেমে আসছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, পশ্চিম জোনের ২১ জেলায় সান্ধ্য পীক আওয়ার থেকে রাতভরই লোডসেডিং-এর যন্ত্রনায় শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের দূর্ভোহ সব বর্ণনার বাইওে চলে যাচ্ছে। শহরের চেয়ে গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের এলাকাগুলোতে সরবারহ ঘাটতি আরো বেশী।
ভোলার ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশন সহ পূর্বজোনেও গত কয়েকদিন একাধীক উৎপাদন ইউনিট বন্ধ বা আংশিক সচল থাকায় সরবারহ ঘাটতিতে পড়েছে পিডিবি। দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিমাাঞ্চলের বৃহত্বম ভোলা পাওয়ার স্টেশনটির ৩টি ইউনিটের একটি মাত্র ইউনিট আংশিক সচল থাকায় গোটা পশ্চিম জোনে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও সরবারহ ব্যবস্থায় সংকট আরো বাড়ছে। এ ইউনিটটি থেকে বর্তমানে ৩০ মেগাওয়াটের কিছু বেশী বিদ্যুৎ সরবারহ করা হচ্ছে জাতীয় গ্রীডে। পূর্বজোন থেকেও পশ্চিম জোনে সরবারহ হৃাস করায় চাহিদার প্রায় ৪০শতাংশ বিদ্যুৎ ঘাটতি চলছে পশ্চিম জোনে। ফলে চাহিদার সাথে সরবারহে ঘাটতিও ক্রমশ বাড়ছে।
পশ্চিম জোনের ২১ জেলায় এখন সান্ধ পীক আওয়ারে প্রায় সাড়ে ১২শ মেগাওয়াট ও ডে-পীক আওয়ারে সাড়ে ৮শ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরিতে সরবারহ যথাক্রমে সাড়ে ৮শ মেগাওয়াট ও সাড়ে ৬শ মেগাওয়াটে সিমিত থাকছে গত কয়েকদিন ধরে। এমনকি বৃহস্পতিবার শবেবরাতের রাতে সরবারহ ছিল ৯শ মেগাওয়াটেরও কম। ফলে সন্ধা থেকেই দক্ষিনাঞ্চল সহ পুরো পশ্চিম জোনের ২১টি জেলার সর্বত্রই পর্যায়ক্রমে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে। তবে রাত ১০টার আগে দমকা হাওয়া ও সামান্য বৃষ্টিপাতে পল্লী বিদ্যুতের বেশ কিছু এলাকায় বিতরন ব্যবস্থা বিঘিœত হলে শহরগুলোতে সরবারহ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। গতকাল দিনভরই পশ্চিম জোনে সরবারহ ছিল চাহিদার প্রায় অর্ধেক।
গত সপ্তাহখানেক ধরেই পশ্চিম জোনে এ লাগাতর বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে শিল্প উৎপাদন বিপর্যয়ের পাশাপাশি ব্যবসা-বানিজ্যেও চরম সংকট চলছে। পাশাপাশি বিভাগীয় শহর বরিশাল ও খুলনা সহ সবগুলো জেলা ও উপজেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাও চরম সংকটে। এমনকি সন্ধার পরে অনেক জরুরী অস্ত্রোপচার পর্যন্ত থমকে যাচ্ছে বিদ্যুতের অভাবে। দুঃসহ গরমে হাসপাতালের বেডে অনেক সংকটাপন্ন রোগীরাও কাতরাচ্ছে।
সরবারহ ঘাটতির পাশাপাশি বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিনাঞ্চলে বিতরন ব্যবস্থার ত্রæটির কারনেও গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌছছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিমজোনের বিদ্যুৎ বিতরন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র দূর্বল বিতরন ব্যবস্থায় গত এক যুগেও এ অঞ্চলে সুষ্ঠু বিদ্যুৎ সরবারহে সক্ষমতা অর্জন করেনি। ৩০বছরের পুরনো বিতরন এবং সরবারহ লাইন সহ বিদ্যুৎ সরঞ্জামাদীর সাথে দায়িত্বশীলদের উদাশীনতা ও অবহেলায় এ অঞ্চলে টেকসই বিতরন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। পাশাপাশি ১৩২/৩৩ ও ৩৩/১ কেভী সাব-স্টেশনগুলোও অনেকটাই জরার্জর্ণ অবস্থায়। তবে কোম্পানীটির ওপর থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতির কোন ঘাটতি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। বছর দুয়েক অঅগে এ অঞ্চলের বিতরন ব্যবস্থা উন্নয়নে দুটি প্রকল্প গ্রহন করা হলেও তার বাস্তবায়নও যথেষ্ঠ হতামাবঞ্জক।
এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল মহলের বক্তব্য, সরবারহে ঘাটতি থাকায় কিছুটা রেশনিং করে বিদ্যুৎ সরবারহ করা হচ্ছে। সিমিত সরবারহের মধ্যেও গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে কোম্পানী সচেষ্ট বলে দাবী করেন কতৃপক্ষ। সব ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ অস্বিকার করে দায়িত্বে অবহেলা ও উদাশীনতার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহলটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ