Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষার মান মোটেই বাড়েনি

প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


রেমিট্যান্স পাঠাতে আর খরচ লাগবে না তুলে দেয়া হবে জমির সর্বনিম্ন মূল্য
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : শিক্ষার সম্প্রসারণ হলেও মান মোটেই না বাড়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “শিক্ষা খাতকে আমরা সম্প্রসারণের চেষ্টা করেছি। আমরা প্রাইমারি পর্যায়ে অনেকটা সফলও হয়েছি। সেকেন্ডারি এডুকেশনেও সেটা অনেক বেড়েছে। প্রত্যকটিতে এনরোলমেন্ট বেড়েছে। মানটা মোটেই বাড়েনি। তাই এখন মানের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার মানের দিকে নজরের দাবিটা এখন শিক্ষার্থী ও গার্ডিয়ানদের কাছ থেকেও আসছে। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন। পাঠ্য বই এখন আধুনিকায়নে সংস্কার হচ্ছে।”
আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর ব্যাংক থেকে কোনো মাশুল না নেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। এতে আগামি জুলাই থেকে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের কোন অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত গ্রহনের কথা জানান অর্থমন্ত্রী। এ সময় তিনি জমি কেনাবেচায় অপ্রদর্শিত অর্থকে ‘কালো টাকার অন্যতম উৎস’ উল্লেখ করে আগামি বাজেটে জমির সর্বনিম্ন নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতি তুলে দেওয়ার কথা বলেন। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকে ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রেমিটেন্স বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, “এটাকে বাড়ানোর জন্য গতকাল প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন থেকে রেমিটেন্সের উপর চার্জ আরোপ করবেন না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় আমরা এটা করব। তাদের (প্রবাসীদের) আর টাকা পাঠানোর জন্য পয়সা দিতে হবে না।”
তবে এতদিন ব্যাংকগুলো রেমিটেন্সে যে মাশুল নিত তা কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কিছু বলেননি।
প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের কিছুটা আয় কমবে। কারণটা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে কিছুটা মন্দাভাব চলছে। বেতনও কিছু কমানো হয়েছে। আরেকটা কারণ হচ্ছে, প্রবাসীরা আগের মতো তাদের সব টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন না। তাদের হাতে কিছু টাকা রাখছেন।” বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমেছে ১৬  শতাংশ। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই আয় কমেছিল ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
বিদেশে টাকা পাচার রোধে জমি কেনাবেচায় সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্য তুলে দেওয়া হতে পারে- এমন তথ্য জানান মন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটা ল্যান্ড প্রাইস ঠিক করে দেই। কিন্তু বাস্তবে জমির দাম অনেক বেশি। তাই বেশি দামে জমি বিক্রি করে। এই টাকা কী করবেন? এটা এদেশে ব্যবহার করতে পারে না। কালো টাকা। তাই এখন আমরা কোনো সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে না দেওয়ার চিন্তা করছি।”
তিনি বলেন, “জমি কেনাবেচায় অপ্রদর্শিত অর্থই কালো টাকার অন্যতম উৎস। পরবর্তীতে এ কালো টাকা তারা বিদেশে পাচার করে। তাই পাচার বন্ধে আগামী বাজেটে জমির সর্বনিম্ন নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতি তুলে দেওয়া হবে।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু বিদ্যুতে সাবসিডাইজড করছি, করেও যাব। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুতায়ন হবে। এখন ৮০ ভাগ গ্রামে বিদ্যুত আছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে এখন বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো। ২০১৫ ও ২০১৬ দুটি বছর পেয়েছি শান্তিপূর্ণ। দুটি বছরে আমাদের শ্রমিকরা প্রমাণ করেছেন তারা দেশে হরতাল ও অন্যান্য ধরনের শান্তির ব্যাঘাত সহ্য করবে না। এর ফলে একটা কনফিডেন্ট এসেছে, এর রেসপন্স আমরা দেখতে পাব।
মুহিত বলেন, “বিনিয়োগ যেটা হয়তো বিদেশে যাচ্ছে, সেটার কিছুটা আমাদের দেশে হবে। এখন বিনিয়োগের সুযোগ প্রচন্ড, ডমেস্টিক মার্কেট ইজ এক্সপান্ডিং। সুতরাং এখানে বসেই যথেষ্ট পয়সা বানানোর সুযোগ পাবেন। এটা যখন দেখবেন বিনিয়োগকারীরা  আসবেন।”
দেশের পুঁজিবাজার এখন আর ফাটকাবাজার নয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। সেগুলোকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির সময় এসেছে।
তিনি বলেন, একটা সময় পুঁজিবাজার ফটকা বাজারই ছিল। কোনো আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ছিল না। এখন অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। এখন আর ফাটকা বাজার নয়; এর ফলাফল আমরা দেখছি। বাজার অনেকটা স্থিতিশীল। এ পরিস্থিতিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বলতে পারি, তোমরা পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ো। যে সব রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এখনও পুঁজিবাজারের অন্তর্ভুক্ত হয়নি- তাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি।
এর আগে আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের প্রয়োজনীয় নানা দিক নিয়ে ইআরএফের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার অমিত সম্ভাবনাময় খাত। কিছু সংস্কারের মাধ্যমে সরকার এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে পারে। ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনা দরকার।
জিয়াউর রহমান বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দেশের বাজারে ভালো ব্যবসা করছে; তাদের মুনাফার বড় অংশই নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে পুনর্বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। দেশের সাধারণ মানুষ এসব মুনাফার কোনো ভাগই পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার কথা বলা হলেও কোনো সাড়া মিলছে না। অথচ প্রতিবেশী ভারতে ইউনিলিভার, নেসলে, নোভার্টিস, এসকেঅ্যান্ডএফ, সনোফি, মেটলাইফসহ প্রায় সব বড় বহুজাতিক কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। এমন অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে ৩-৫ বছরের সময় দেয়া যেতে পারে।
এছাড়া বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানো, লভ্যাংশ আয়ে কর সুবিধা বাড়ানো, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড করা, কার্যকর বন্ড মার্কেট চালুর প্রস্তাবনা তুলে ধরে ইআরএফ।





 

Show all comments
  • সফিক ১৪ মে, ২০১৭, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    দেরিতে হলেও বিষয়টি অনুধাবণ করার জন্য মন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ১৪ মে, ২০১৭, ১২:৫৬ পিএম says : 0
    সেটা আমরা জানি। দয়া করে এটা উন্নয়নে জোর দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষার মান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ