Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঘুষ-অনিয়মের যানজট মেঘনা সেতুতে

চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সুবিধা নিমিষেই উধাও: যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুতে যানবাহনের ওজন মাপার নামে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিজিটাল স্কেল বসানো হলেও পরিমাপের নামে হয়রানি করা হচ্ছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী পরিবহনকে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। পরিবহন মালিকদের অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের সাথে যোগসাজশ করে প্রকাশ্যে ঘুষের বিনিময়ে ওজন না করেই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিনই লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ  ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, মেঘনা সেতুতে ওজন মাপার নামে দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ভীষণ ক্ষুদ্ধ। যে কোনো সময় সেই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটবে। তিনি বলেন, আমরা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রিকে এ নিয়ে বহুবার বলেছি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।    
গতকাল সরেজমিনে মেঘনা সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর, মদনপুর ও মেঘনা সেতু এলাকাসহ কয়েকটি পয়েন্টে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এ যানজটের প্রধান কারণ ঘুষবাণিজ্য ও অনিয়ম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কে যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে সন্ত্রাসী ও ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশের চাঁদাবাজি, দুর্ঘটনা কবলিত বা বিকল যানবাহন তাৎক্ষণিক সরাতে পুলিশের গাফিলতি, রেকার বিকল হওয়া, ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট, যেখানে সেখানে গাড়ি ঘোরানো, কয়েকটি পয়েন্টে বিশেষ করে চৌরাস্তা ও রাস্তার মাথায় অতিরিক্ত যান চলাচলে  মেঘনা সেতু এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে মেঘনা সেতুতে ওজন মাপার যন্ত্রের বিড়ম্বনা।  সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান,  মেঘনা ও গোমতী সেতুর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নারায়নগঞ্জে মেঘনা সেতুর কাছে ওজন নির্ণয়ক ডিজিটাল স্কেল বসিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এই স্কেলের ইজারা দেয়া হয়েছে সিএনএস লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অভিযোগ, শুরু থেকেই এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করার। তাদের বিরুদ্ধে পণ্যবাহী পরিবহন ওজন না করেই, ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর ঘুষ না দিলে সেসব পরিবহনের চালক শ্রমিককে পোহাতে হয় হয়রানি। ওজন স্কেলের খুব কাছেই ডিউটিরত এক পুলিশ সদস্যের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় করে একদিন রাতে আসেন। দেখবেন দেদারছে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে একের পর এক গাড়ি। সিএনএস-এর ডিজিটাল এই স্কেলটির ওজনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। একজন ট্রাক চালক বলেন, একই ট্রাক তিনবার ওজন দিলে তিন রকমের মাপ আসে। এদেরকে ঘুষ না দিলে ওজন বেশি দেখানো হয়। ঘুষ না দিলে ওজন বেশি দেখিয়ে জরিমানার নামে হয়রানি করা হয়। মেঘনা সেতুতে যানজটের অন্যতম কারণ এই ওজন মাপার যন্ত্র উল্লেখ করে বাংলাদেশ ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী বলেন, সরকারের প্রতি আমাদের দাবি ওজনের নামে এ ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানী বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আমরা পরিবহন মালিক শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো।
মহাসড়কে কর্তব্যরত পুলিশ, যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত পণ্যবাহী ট্রাক, লরি,কাভার্ডভ্যান, গরু বোঝাই ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ যাত্রীবাহী হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের অধিকাংশই মহাসড়কের কাঁচপুর, মদনপুর, মেঘনাঘাট, মোগরাপাড়া চৌরাস্তাসহ কয়েকটি পয়েন্টে এসে যানজটের কবলে পড়ে। এই যানজট সেতুর উভয় পাশে ১৫ কিলোমিটার থেকে ৬০/৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। প্রতিনিয়ত সৃষ্ট এ যানজটে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গতকাল সপ্তাহের প্রথম দিনেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সকাল থেকে দীর্ঘ যানজটে  মেঘনা সেতুর উভয় পাশে আটকে ছিল হাজার হাজার যানবাহন। জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী  বলেন, সেতুর উপর মেরামতের কাজ চলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ১০ মিনিট আটকে রেখে কিছু কাজ করার পর আবার ১০ মিনিট যানবাহন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এই মেরামতের জন্য পূর্ব থেকে কোনো ঘোষণা দেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে ওই প্রকৌশলী বলেন, এরকম নিয়মিতই মেরামতের কাজ চলে। সে জন্য ঘোষণা দেয়া হয় না। অন্যদিকে, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল মালেক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের। কিন্তু মেঘনা ও গোমতী সেতুতে এক লেন দিয়ে যানবাহন পার হয়। মহাসড়কে গাড়ি চলে ৭০/৮০ কিলোমিটার বেগে। সেতুতে সেই গাড়িগুলোই চলে ৪/৫ কিলোমিটার বেগে। এতে করে সেতুর দুই পাশে বহু গাড়ি থেমে থাকে। এক পর্যায়ে বিশাল লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সেতুতে উঠতে গিয়ে ভারী যানবাহন প্রায়ই বিকল হয়ে যায়। তখন সেগুলো সরাতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশের এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, আজকে যেমন দেখছেন, এরকম প্রতিদিনই হয়। প্রতিদিনই যানজটে ভ্যাপসা গরমে কয়েক শত শত যাত্রীবাহী গাড়ি আটকে পড়ে। তখন যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। চার লেনের মহাসড়কের সকল  সুবিধা এখানে নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমরা এগুলো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে, রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স যখন যানজটে আটকে পড়ে তখন সত্যিই খুব কষ্ট লাগে।



 

Show all comments
  • Santa ১৫ মে, ২০১৭, ১২:৩৫ পিএম says : 0
    এখানে পুলিশ অযথা হয়রানি করে !!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

৯ জানুয়ারি, ২০২৩
২৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ