Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রামপাল প্রকল্পের প্রভাব ভোগাবে পুরো জাতিকে

সুন্দরবন রক্ষা কমিটির গোলটেবিল বৈঠক

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দিবে। ভবিষ্যতে এর প্রভাব পুরো জাতিকেই ভোগ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলেন, রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হুমকীর সম্মুখীন হবে সুন্দরবন। বিভিন্ন গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক ভাবে তা প্রমানিত। সুন্দরবনের পাশে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে এটা শুধু এই এলাকা নয়, সারাদেশেই এর প্রভাব পড়বে। তাই এই প্রকল্প বাতিল করতে সরকারের প্রতি আহŸান জানান তারা। গতকাল (বুধবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত “রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কয়লার ছাই অপসারণে সম্ভাব্য বিপদাপন্ন পরিবেশ নিরূপন প্রতিবেদন” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক এডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে এতে ডিজিটাল মাধ্যমে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের এ ডেনিস লেমলি, যুক্তরাষ্ট্র। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ‚তত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর বদরুল ইমাম, পরিবেশ জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এম আবুল বাশার ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর আব্দুল আজিজ, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য শরীফ জামিল ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন।
ডেনিস লেমলি বলেন, বাংলাদেশের রামপালে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৯০ শতাংশ উৎপাদন দক্ষতায় ৬০ বছর কর্মক্ষম সময়ে ৩৮ মিলিয়ন টনেরও বেশি ছাই উৎপাদন করবে। ‘ছাই পুনঃব্যবহার পরিকল্পনা‘ অনুসারে শুধুমাত্র কয়লার ছাইয়ের একটি মাত্র অংশ গৃহস্থালীর কনক্রিট ও ইট তৈরীর কারখানায় ব্যবহার করা হবে। কমপক্ষে ২০ মিলিয়ন টন ছাই অপসারনের জন্য বাকি থাকবে যা অতিরিক্ত ৫০০ হেক্টর জায়গায় গর্ত ভরাট, রক্ষা-আস্তর ছাড়া ভরাট ও সারফেস ডাম্পিং করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এই পদ্ধতিগুলো স্টেট-অব-আর্ট পদ্ধতি থেকে অনেক দূরে, এবং সবগুলো পদ্ধতিই সুন্দরবনের চারিদিকে ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ পানিকে একাধিক ভাবে ও স্থানে দূষিত করবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উপর পরিচালিত অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলে উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত ঝুঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়, যা অবশ্যম্ভাবী সর্বোচ্চ পরিনাম। এছাড়া ভারী বর্ষণ ও মৌসুমী বন্যায় বিপুল পরিমানের দূষিত পানি বানের জলের মাধ্যমে মুক্ত হয়ে বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে যাবে। যা সুন্দরবনের পানিবাহী নদীতে ও খালগুলিতে বিষাক্ত ভারী ধাতু যোগ করবে এবং ম্যানগ্রোভ বনকে, বিভিন্ন জলজ প্রজাতিসমূহকে এবং হাজার হাজার গরীবের খাদ্যের যোগান দাতা মৎস্যসম্পদকে বিপন্ন করে তুলবে।
সুলতানা কামাল বলেন, রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে এর প্রভাবে বড় ধরণের হুমকীর সম্মুখীন হবে সুন্দরবন, যা পুরো জাতিকেই ভোগ করতে হবে। প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক যুক্তিভিত্তিক মতামত হচ্ছে: রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে।
বদরুল ইমাম বলেন, যে কোন কয়লা প্ল্যান্টেই প্রচুর পরিমান ছাই উৎপাদন হয় এবং এই ছাইটা একটা দূষণ। সেলেনিয়াম বলে যে ভারী ধাতু রয়েছে এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর দূষক এবং এর ফলে মাছগুলো বিকৃত হয়ে যাবে, প্রাণীগুলো তাদের প্রজনন ক্ষমতা হারাবে। তিনি বলেন, আমরা রামপাল প্রকল্পের বিরোধীতা করছি যথেষ্ট বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যের সুত্রে। নিজেদের স্বার্থে এই প্রকল্পের বিরোধীতা করছি না, শুধুমাত্র সুন্দরবনকে বাঁচানোর স্বার্থেই রামপাল প্রকল্পের বিরোধীতা করছি।
আবুল বাশার বলেন, প্রকৃতির সাথে মানুষের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। প্রকৃতিকে বিনষ্ট করে কখনই মানুষের স্বার্থ রক্ষা হয় না। তাই জনগনের স্বার্থ রক্ষার জন্যই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে এবং সুন্দরবন বিনাশী প্রকল্প বন্ধ করতে হবে।
আব্দুল আজিজ বলেন, বৈজ্ঞানিক তথ্যমতে রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এর বিষাক্ততা সাগর-নদী ও মাটির সাথে মিশে এতে মাছ-শাকসবজিসহ কৃষিজমিতেও বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়বে। এর কুফল ভোগ করবে সমগ্র জাতি। তাই ভবিষ্যত সুস্থ্য প্রজন্মের স্বার্থেও রামপাল প্রকল্পটির বিষয় সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রামপাল

২২ ডিসেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ