Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আযানের সময় সংযত হওয়া জরুরি

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এসআর শানু খান : যুগের পরিক্রমায় বিদেশি কালচারের সংস্পর্শে আমাদের সমাজের যে আজ কি হাল হয়েছে সেটা ভাবতে গেলে চোখ কপালে উঠে। আজ আমরা টেলিভিশন ছাড়া যেন কোনো কিছু চিন্তাই করতে পারি না। বাড়িতে একটা টেলিভিশন সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি চ্যানেল সংযোজিত ক্যাবল নেটওয়ার্ক না থাকলে সেই বাড়িটাকে এখন ভুতুড়ে বাড়ি বলে মনে হয়। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়। দিনের পর দিন বাজারে যেমন বিভিন্ন চ্যানেল সংবলিত ক্যাবল নেটওয়ার্কেও অভাব হচ্ছে না ঠিক তেমনিভাবে দিন যাচ্ছে আর বাজারে নিরঙ্কুশভাবে বেড়ে চলছে বিভিন্ন নামের ডেকোরেশন। ডেকোরেশনের মানে এখন আর শুধু চেয়ার টেবিল নয় এখন ডেকোরেশনের দোকান মানেই বড় বড় বিল্ডিং-এর মতো কোম্পানি বক্স। হাতির সূরের মতো লম্বা লম্বা সব মাইক ছেলের গালে ভাত, মেয়ের কান ফুটানো, ছেলের সুন্নাতে খুৎনা, মেয়ের গায়ে হলুদ, মেয়ের বিয়ে এমন সব অনুষ্ঠান মানেই তিন চার সপ্তাহব্যাপী বড় বড় সাউন্ড বক্স বাড়ি এনে ফুল গিয়ারে গান-বাজনা করা। গান-বাজনা করাটা এখন এতটাই জরুরি কালচার হয়ে পড়েছে যে বাড়িতে পোষা মুরগিটা প্রথম ডিম পাড়লেও মন চাই মাইক ভাড়া করে এনে কয়েকদিন গান বাজায়। একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বিনোদনের প্রয়োজন আছে। এটা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই বিনোদনেরও যে একটা সীমা থাকার দরকার আছে। শখের বশে বিনোদন করতে গিয়ে নিজের অস্তিত্বকে ভুলে গেলে। নিজের ধর্মকে অমান্য করলে তো আর হবে না। অন্যসব যেমন তেমন ধর্মীয় ব্যাপারে মানুষের সিরিয়াস হয়ে যাবার বিষয়টা কিন্তু একটা সহজাত প্রবৃত্তি। এই পৃথীবির সব মানুষই কি নাস্তিক নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লেও কোনো মানুষই ধর্মের অবমাননা মেনে নিতে চাইবেন না। বনের পশুরা বনের বিভিন্ন অংশে তার শিকার খোঁজার জন্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও তার কিন্তু একটা নিজস্ব ধর্ম আছে। নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো কোনোভাবেই ডিঙ্গিয়ে চলেন না। সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত পদবি ঘাড়ে নিয়ে মানুষ কেমন করে যে নিজের ভীতটা ভুলে যায় ভুলে থাকে বা থাকতে পারে সেটা কিন্তু একটু ভাবার বিষয়। আশপাশে লক্ষ্য করুন গান-বাজনার উৎপাতে আযান শোনা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। বিনোদনের জগতে মানুষ নিজেকে এমনভাবে ডুবিয়ে নিয়েছেন যে কখন আযান হয় সেই জ্ঞানটাও আজ হারিয়ে ফেলেছেন। গান-বাজনা আরামছে চালিয়ে যাচ্ছেন বিরতিহীনভাবে। দেশীয় যে চ্যানেলগুলো আছে এগুলোর বেশির ভাগই আযানমুক্ত অবিরত ধায়ায় বিজ্ঞাপনযুক্ত। চ্যানেলগুলোর সারাদিনের সিডিউলে শত শত প্রোগ্রাম স্থান পেলেও দিনের পাঁচ ওয়াক্ত আযানের জন্য পাঁচ মিনিট করে বরাদ্দ করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। দেশীয় চ্যানেলগুলো বেশির ভাগই ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলোকে ফলো করবার চেষ্টা করে থাকেন। যেহেতু ইন্ডিয়ান চ্যালেনগুলোতে আযান বলে কোনো শব্দ নাই। যেহেতু বাজারের চায়ের দোকানগুলোতে টিভি বন্ধ হওয়ার কোনো লাইন নাই। মসজিদে মুয়াজ্জিন আযান দিচ্ছেন আর এ পাশে চায়ের দোকানগুলো ফুল ভলিউমে চলছে টিভি। আযানের প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র যে সম্মান নাই সেটার প্রমাণ দিতেই কিন্তু এতসব আয়োজন। হায় আফসোস অন্য ধর্মাবলম্বী লোকদের কথা নাই বা বললাম একজন মুসলমানের সন্তান, আযান প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানা লোকগুলো কেমনে পারে এই আযানকে অসম্মান করতে। ক্যামনে পারে নিজের ধর্মের সম্মানে আঘাত আনতে।

আযানের সময় মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে আযান পাঠ করবার ফযীলত জানা থাকতেও কেন আমরা সেটা করিনা। কেন আমার নিজেদেরকে নিজের প্রভুর থেকে দূরে সরিয়ে নিতে এতটা মরিয়া হয়ে পড়েছি।
তাই কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন যথাবিহিত সম্মানপূর্বক যথাযথ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আযানের সময় টিভি-সিডি গান-বাজনা বন্ধ রাখার জন্য কড়া আইন জারি করুন। এবং পুলিশিং তত্ত¡¡াবধানের মাধ্যমে হলেও গ্রামগঞ্জের হাটবাজারগুলোর টিভির দোকানসহ বাড়ির উপর গান-বাজনা করার উপর জরুরি আইন চালু করে ধর্মের আবমাননা হ্রাস করুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ