Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নানা আয়োজনে ১১৮তম জন্মবার্ষিকী পালিত

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


কবি নজরুলের সৃষ্টিতেই তাকে স্মরণ
স্টাফ রিপোর্টার :‘হারিয়ে গেছ অন্ধকারে-পাইনি খুঁজে আর/আজকে তোমার আমার মাঝে সপ্ত পারাবার! আজকে তোমার জন্মদিন-
স্মরণ-বেলায় নিদ্রাহীন’। অন্যের জন্মদিনে কবি নজরুলের নিদ্রাহীন না হলেও তার জন্মদিনে নিদ্রাহীন কাটে ভক্তদের। তারা কবিতা, গান, উপন্যাস, গল্পে কেবলই খোঁজে ফেরেন প্রিয় কবিকে। আর তাইতো জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ১১৮তম  জন্মবার্ষিকী বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে জাতীয় ও বেসরকারি পর্যায়ে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) কবির জন্মদিনে জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ইমেরিটাস প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর সৌমিত্র শেখর সা¤্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী সৈনিক নজরুল বিষয়ের উপর স্মারক বক্তৃতা দেন। এবার কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় ‘সা¤্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী সৈনিক নজরুল’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইন্সটিটিউটের যৌথ আয়োজনে জাতীয় পর্যায়ের এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় ৩০ মিনিটের এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এর আগে দিনের শুরুতেই সকাল সোয়া ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ছাত্রী-ছাত্রীরা কলা ভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হন এবং সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবি’র সমাধিস্থলে গমন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভিসির নেতৃত্বে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আর এর মধ্যদিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। সকাল সাড়ে ৬টায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপিসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় জাতীয় কবির নাতনি খিলখিল কাজীর নেতৃত্বে পরিবারের সদস্যরা তাঁর সমাধিতে পুস্পমাল্য ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষে কবির সমাধিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে সকালেই দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কবির সমাধি প্রাঙ্গণে ভিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এক স্মরণ সভা।
এতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শুধু আবেগ, ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, নজরুলকে জানতে হলে পড়তে হবে, চর্চা করতে হবে এবং সেই চর্চাটা ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রফেসর আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যতো ধরণের সংকট আছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য শক্তি পাই আমরা নজরুল রচনাবলীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্য লড়াইয়ে কবি নজরুল আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন সবসময়।
কবির নাতনী খিলখিল কাজী বলেন, শুধু জাতীয় কবি বললেই হবে না। জাতীয় পর্যায়ে সর্বত্র তার গান, কবিতা, সাহিত্য আমাদের ব্যবহার করতে হবে। সারা বছর ধরে যেনো আমরা তাকে নিয়ে কাজ করতে পারি, সে উদ্যোগ নিতে হবে। আলোচনা পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অংশ নেন। পরে সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিল্পীরা। কবির সমাধিতে আরো পুস্পমাল্য অর্পণ করে বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, নজরুল একাডেমি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ কেন্দ্র (সিআইআইডি) এবং বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে জাতীয় কবির সমাধি প্রাঙ্গণ পর্যন্ত আরেকটি র‌্যালি বের করা হয়। পরে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘সম্প্রদায় ও সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে নজরুলের বোঝাপড়া এবং বাংলাদেশের সম্প্রদায়-সংকট’ শীর্ষক এক সেমিনার আয়োজন করে সিআইআইডি। এ সংগঠনের পরিচালক ড. ফাজরীন হুদার সভাপতিত্বে এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম।  
বাংলা একাডেমি জাতীয় কবির কাজী নজরুলের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৫টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নজরুল বিষয়ক একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সন্ধ্যা ৬টায় নিজস্ব মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।  প্রতি বছরের মতো এবারও চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আইএফআইসি ব্যাংক-চ্যানেল আই ‘নজরুলমেলা’ ১৭। মেলার অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক, গণমাধ্যমের সম্পাদকবৃন্দ, নজরুল বিশেষজ্ঞ ও নজরুল সঙ্গীতশিল্পী এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালকবৃন্দ। মেলা সরাসরি স¤প্রচার করেছে চ্যানেল আই। রাজধানীর বাইরে জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর ও চট্টগ্রামে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কবি নজরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ