Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রায়পুরার নিলক্ষারচরে আবারো বন্দুক ও টেটাযুদ্ধ আহত ১০

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শত শত ফাঁকা গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানার ভিত্তিতে রায়পুরার নিলক্ষারচরের আওয়ামী লীগের দ্ইু লাঠিয়াল বাহিনীর নেতাদের শালিশী সমঝোতা ভেস্তে গেছে। ৭টি হত্যা মামলাসহ ১৪টি মামলার শালিশী সুরাহা দিয়ে এমপি রাজুর এই সমঝোতা সিদ্ধান্তের মাত্র ৬২ দিনের মাথায় রায়পুরার নিলক্ষারচরে আবারো দুই আওয়ামী লীগ নেতার লাঠিয়ালদের মধ্যে বন্দুক ও টেটাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত এই বন্দুক ও টেটাযুদ্ধে কমবেশী ১০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেদন নামে গুলিবিদ্ধ ও হালিম নামে টেটাবিদ্ধ দুই ব্যক্তির নাম জানা গেছে। অন্যান্যরা বিভিন্ন ক্লিনিকে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে। ২টি বাড়ীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে কমবেশী ২০টি বাড়ী। নিলক্ষার বিরোধ মিমাংসার সূত্র ধরে রায়পুরার এমপি ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু গতকাল বৃহস্পতিবার যখন রায়পুরা সদরে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর বিরোধ মিমাংসায় শালিশ দরবারে বসা অবস্থায়ই নিলক্ষারচরে আবার লাঠিয়ালরা বন্দুক ও টেটা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এই বন্দুক ও টেটা যুদ্ধে উভয় পক্ষই ব্যাপকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করেছে। গুলি ও বোমার শব্দে এলাকায় ব্যাপক ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে। সাধারণ মানুষ জান ও মালের নিরাপত্তা হারিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছে।
এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে প্রায় ১ বছরে ১০/১২টি বন্দুক টেটাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের ৭ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক শত লোক। ভাংচুর, লুণ্ঠিত, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে কমবেশী ২শত বাড়ী ঘর। অব্যাহত বন্দুক ও টেটা যুদ্ধ বন্দের জন্য রায়পুরার এমপি ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু গত ২১ মার্চ রায়পুরা শহরে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামসহ তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর নেতাদেরকে ডেকে এক শালিশ দরবারের আয়োজন করে। উভয় পক্ষের আলোচনা সমালোচনা শেষে দুই পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ৭টি হত্যামামলাসহ ১৪টি মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য ২পক্ষের লোকজনকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। কিন্তু এই শালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত কার্যকরী হওয়ার পূর্বেই সমঝোতা ভেঙ্গে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থক লাঠিয়াল সর্দার হালিম ও বেদন নবীনগর, আলোকবালী, চরমধুয়া ও বাঁশগাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশত ভাড়াটে লাঠিয়াল নিয়ে মহা দাপটের সাথে ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে এলাকায় উঠার চেষ্টা চালায়। তারা মেঘনার তীরে পৌছে ব্যাপকভাবে গুলিবর্ষণ, বোমা বিস্ফোরনসহ এলোপাতারি টেটা নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় ঘটনা টের করতে পেরে গোপীনাথপুরের মুন্সীবাড়ীর লোকজন ও দড়িপুরা গ্রামের লোকজন তাদেরকে প্রতিরোধ করে। চেয়ারম্যান তাজুলের লোকেরা গ্রামেই উঠেই মুন্সীবাড়ীতে আগুন দেয়। এতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে কমবেশী ১০ ব্যক্তি গুলি ও টেটা বিদ্ধ হয়ে আহত হয়। প্রায় ঘন্টা খানেক সংঘর্ষ চলার পর রায়পুরা সার্কেলের এএসপি বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে নরসিংদী পুলিশ লাইন ও রায়পুরা থানার একশত পয়ত্রিশ সদস্যের দাঙ্গা পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌছে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে উভয় পক্ষের লাঠিয়ালরা নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়। এতে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।
উল্লেখ্য যে, নিলক্ষারচরের আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর বিরোধ মিমাংসার সময়ই এলাকার জনগনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এলাকার লোকজন জানায়, শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে হত্যামামলার মত জঘন্য অপরাধের মামলা মিমাংসা হয়ে যাওয়ায় এলাকায় দিনের পর দিন খুনাখুনী, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেই চলছে। অতীতে কয়েকবার এ ধরনের শালিশী মিমাংসা হয়েছে। কিন্তু কোন মিমাংসাই স্থায়িত্ব পায়নি। এবারের মিমাংসাও স্থায়ী হবে না। এই অবস্থায় এলাকার সাধারণ মানুষ ৭টি হত্যা মামলাসহ ১৪টি মামলার আইনগত সমাধান দাবী করেছিল। জনগনের দাবী উপেক্ষা করে এসব জঘন্য অপরাধের মামলাগুলো ২৫ লাখ টাকার জরিমানার মাধ্যমে শালিশী সমাধান দেয়া হয়। কিন্তু এই শালিশী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পূর্বেই তা ভেঙ্গে গেছে। শালিশী সমঝোতার পর বৃহস্পতিবার বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুলের সমর্থকরা প্রথম সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে এলাকায় হামলা চালিয়েছে। আর এই হামলার কারণে নিলক্ষার চরের গ্রামগুলো আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে। সারা নিলক্ষার চরেই আবার লাঠিয়ালদের সাজ সাজ রব শুরু হয়েছে। যে কোন সময়ই বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা করছে শান্তিপ্রিয় মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ