Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়ছে মহিলা দর্জিদের

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেবা রহমান, যশোর থেকে
যশোর অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে ঈদ উপলক্ষে জামা কাপড় তৈরী শুরু করেছেন মহিলা দর্জিরা। শবে বরাতের পর থেকেই জোরেশোরে শুরু হয়েছে পোশাক তৈরি। চলবে মাসাধিককাল। প্রতিবছর ঈদে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হন। পথ পান আত্মসংস্থানের। সংসারের কাজকর্মের ফাঁকে পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও আয়-রোজগার করছেন বিভিন্নপন্থায়। বাড়ীতে হাঁস, মুরগী, ছাগল ও গরু পালন, কাঁথা সেলাই, দর্জির কাজ ও সবজি উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজ করে আয় রোজগারের ধারা বহুকাল ধরে চললেও বর্তমানে একেবারে পরিকল্পিতভাবে কর্মজীবি হয়ে উঠেছেন তারা। যশোর নতুন খয়েরতলার খুকি বিবি বলেন, ঈদে প্রচন্ড ভিড় হবে তাই আগেভাগেই ছেলে-মেয়েদের কাপড়-চোপড় বানানোর কাজ সেরে নিচ্ছি। কেনা জামাকাপড়ের চেয়ে বানানোর কাপড়ের সেলাই ভালো হয়। স্থানীয় এক মহিলা দর্জির দোকানে দাঁড়িয়ে তিনি আরো বললেন, তার মতো বেশীরভাগ মহিলারা মহিলা দর্জির দোকানে ভিড় করছেন। ঘরের বাইরে আবার মাঠেও অনেক নারী শ্রমিকরা কৃষি শ্রমিক, ইট ভাঙা, মাটি কাটা ও নির্মাণের মতো ভারী কাজও করছেন। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের অংশীদার হচ্ছেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি (সেচ), সড়ক, গণপূর্ত ও এলজিইডিসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্মে যুক্ত হয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। এতে দিনে দিনে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন শ্রমজীবি মহিলারা। যাদের অনেকেই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমও করছেন। অথচ পারিশ্রমিকের ব্যবধান ঘুচছে না। শ্রমের সময় ও কাজের ধরণ এক হওয়া সত্বেও পুরুষের মতো মহিলারা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। অবশ্য সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের পারিশ্রমিক কম-বেশী নেই। বিভিন্ন সেক্টরে মহিলারা বেশ সুনামের সাথে কাজ করছেন। তারা বৈষম্যের শিকার নন, অথচ দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবি মহিলাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার কোন পদক্ষেপ নেই। বর্তমানে গ্রাম শহরে সমানতালে সেলাই মেশিন নিয়ে মহিলাদের কাজ করার দৃশ্য চোখে পড়ে অনেক স্থানে। যশোর নুরপুরের আয়না বেগম, চৌগাছার ফাতেমা খাতুন ও বাঘারপাড়ার মনোয়ারা বেগমসহ বেশ কয়েকজন কর্মজীবি মহিলার সাথে কথা হয়। তারা জানান, কিছুদিন আগেও স্রেফ গৃহিনীর কাজের বাইরে সাধারণত কিছু করতাম না। এখন ঘরে বসেই অনায়াসে আয়ের পথ পেয়েছি। স্বামী রিকসা ও ভ্যান চালক কিংবা ছোটখাটো কাজ করে যা পায় তাতে দ্রব্যমূল্যের কারণে সংসার চালানো কঠিন হয়। সে কারণে দু’জনে মিলে কাজ করে যা পায় তাতে সংসার মোটামুটি ভালোই চলে। মহিলাদের একটা বিরাট অংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগীর খামার গড়ে তুলেছে। চৌগাছার আয়েশা খাতুন কয়েকটা সেলাই মেশিন নিয়ে নিজের বাড়িতেই শুরু করেছে দর্জির কাজ। দিনে সব খরচ-খরচা বাদে তার আয় হয় নূন্যতম ৩শ’ টাকা। যা আগে কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। তার আয়ের টাকায় একমাত্র পুত্র সন্তানের স্কুলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পারছেন। এরকম বহু মহিলা বিভিন্ন পন্থায় কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে নয়, নিজেরা নিজেদের খরচ যোগাড় করছেন। কোন কোন এলাকায় ছোট ছোট সমিতির মাধ্যমে মেয়েরা নকশী কাঁথা সেলাই, পাঞ্জাবী ও টি শার্টসহ বিভিন্ন কাপড়ে ডিজাইন করছেন। বাড়ীর আঙিনায় কিংবা ঘরের উঠোনে সবজি আবাদ করে নিজেরা টাটকা সবজি খাচ্ছেন আবার বিক্রি করে পয়সাও পাচ্ছেন। এখন গ্রামে গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই গৃহবধূরা সবজি আবাদ করছেন। এমনিতেই সবজি উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে যশোরের। তার ওপর বাড়ী বাড়ী সবজি উৎপাদন হচ্ছে প্রচুর। বাড়ীর উঠোনে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাল শাক, বেগুন ও ডাটাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ ও উৎপাদনের দৃশ্য যে কারো নজর কাড়বে। এছাড়া চারিদিকে দৃষ্টি দিলেই চোখে পড়বে মাঠে-ঘাটেও মহিলারা কাজ করছে সমানতালে। তাদের শ্রম নেয়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হচ্ছে না। শ্রমজীবি মহিলারা খুবই পরিশ্রমি, তাদের একটু সহযোগিতা করলে খুব সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারবে। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, যশোর অঞ্চলে শুধু আত্মকর্মসংস্থানেই নয়, সমাজ সেবার ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলের মহিলারা আগের চেয়ে এখন অনেক সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিতেও মহিলারা অনেক এগিয়ে যাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ