Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। বাজার মনিটরিং করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। পণ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেওয়া এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সঙ্গেও আলোচনাও হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে পুরো রমজান মাসে প্রতিদিন রাজধানীতে চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এছাড়া রাজধানীর বাইরে একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। জেল-জরিমানার মামলা দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে খাবার দোকান পরিদর্শনে যাবেন ৬০০ স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বা স্বাস্থ্য পরিদর্শক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এরই মধ্যে সারা দেশের স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া রমজানের আগেই ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীসহ সারা দেশে খোলা ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এসব ট্রাক থেকে কম দামে পণ্য কিনতে পারবেন ক্রেতারা। রমজানকে সামনে রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে কোন পণ্যের দাম রমজান মাসে বাড়বে না। চিনি যারা উৎপাদন করেন তারা আমাকে জানিয়েছেন রমজানে চিনির দাম বাড়াবে না। যে পরিমাণ ছোলার প্রয়োজন তার দ্বিগুণ ছোলা আমদানি হয়েছে। তাই ছোলার বাজারও স্বাভাবিক থাকবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে রমজানে নিত্যপণ্যের দামের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তৎপর সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল। এজন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই এধরণের ঘোষণা দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়না বলে অভিযোগ করেন সাধারণ মানুষ। তারা বলেন, ঘোষণা দিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে।
এদিকে বিএসটিআই সূত্রে জানা যায়, রমজানে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় যাতে অসাধু ব্যবসায়ী-বিক্রেতারা ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্য ও পানীয় প্রস্তুত এবং বিপণন থেকে বিরত থাকে, সে লক্ষ্যে বিএসটিআই ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন চারটি এবং রাজধানীর বাইরে একটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এছাড়া আকস্মিকভাবে পরিচালিত অভিযানগুলোতে বিশেষ করে রোজাদাররা সচরাচর যেসব খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে থাকেন যেমন- মুড়ি, কলা, খেজুর, আম, সফট ড্রিংক পাউডার, কার্বোনেটেড বেভারেজ, ফ্রুট সিরাপ, ফ্রুট জুস/ফ্রুট ড্রিংকস, ভোজ্যতেল, সরিষার তেল, ঘি, পাস্তুরিত দুধ, নুডুলস, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, লাচ্ছা সেমাই, সেমাই, পানি, ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট ইত্যাদির ওপর বিশেষভাবে নজর রাখছে সংস্থাটি। এছাড়া রমজানে যাতে নির্ভেজাল খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ইফতার ও সেহরিতে অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত ২৪৯টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই ল্যাবে পরীক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু নমুনার ল্যাবরেটরি টেস্টিং সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের নমুনা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে ও থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
একইভাবে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এজন্য মাঠে থাকবে ৬০০ স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বা স্বাস্থ্য পরিদর্শক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পরিদর্শকরা খাদ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন, ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরিসহ নির্দিষ্ট একটি এলাকায় প্রতিদিন কমপক্ষে আটটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। তারা রোজার মাসে গৃহস্থালি সামগ্রীর মার্কেট, ফল ও মাংসের দোকান ও রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করে সন্দেহযুক্ত খাদ্যের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠাবেন। ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেলে নির্দিষ্ট মেয়াদের শাস্তিযোগ্য মামলা দায়ের করার ক্ষমতা রাখবেন।
এদিকে কম মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে পণ্য তুলে দিতে এবার সারা দেশে ১৮৫টি ট্রাকের মাধ্যমে ২ হাজার ৮১১ জন ডিলার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি করছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৩টি, চট্টগ্রামে থাকবে ১০টি, অন্য বিভাগীয় শহরে ৫টি করে এবং অন্য জেলা শহরগুলোতে ২টি করে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে সংস্থাটি। গত ১৫ মে থেকে এই বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়। এবার চিনি ৫৫ টাকা কেজি, সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা লিটার, ছোলা ৭০ টাকা কেজি, খেজুর ১২০ টাকা কেজি ও মসুর ডাল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পণ্যগুলো ঢাকার ৩৩টি স্থানে ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া টিসিবির ২ হাজার ৮১১ ডিলার ও ১০টি খুচরা দোকানেও পণ্যগুলো কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো ট্রাকে করে পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা, ডাল, তেল ও খেজুর বিক্রি করছে টিসিবির ডিলাররা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু বলেছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসায়ীদের ভূমিকাই মুখ্য, তবু যাতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি বা বাজার অস্থিতিশীল করা না হয়, সে বিষয়ে সরকার সজাগ রয়েছে। তিনি ব্যবসায়ীদের উদার এবং যৌক্তিক হওয়ারও আহŸান জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ