Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চালু হচ্ছে মুরাদপুর ফ্লাইওভার : চট্টগ্রামে রমজানে যানজট কমাতে নানা উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট কমাতে রমজানের শুরুতেই খুলে দেওয়া হচ্ছে মুরাদপুর ফ্লাইওভার। এর পাশাপাশি রোজাদার নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে নেওয়া হয়েছে আরও বেশ কিছু উদ্যোগ। মুরাদপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে পিচ ঢালাই। এ কাজ শেষ হলে আগামী সপ্তাহে ফ্লাইওভারটি যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। প্রায় ৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ মহানগরীর সব চেয়ে বড় এই উড়াল সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হলে নগরীর বিরাট অংশে যানজট কমে যাবে। অবসান হবে জনদুর্ভোগের।
প্রকল্পের পরিচালক সিডিএর প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে জানান, ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ফিনিশিং টার্চ। একই সাথে পিচ ঢালাইয়ের কাজও চলছে দ্রæত গতিতে। এ কাজ শেষ হলে ফ্লাইওভারে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। রোজার আগেই উড়াল সেতুটি চালু করে দেওয়ার টার্গেট ছিল। তবে এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় রোজার প্রথম সপ্তাহেই এটি চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পে কাজ শেষ করার জন্যে সময় নির্ধারিত থাকলেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে অনেক আগেই কাজ শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া নগরবাসীর দুভোর্গের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নির্মাণ কাজ দ্রæত শেষ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ’র কর্মকর্তাদের আশা মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকায় এই ফ্লাইওভারটি চালু হলে দেশের বাণিজিক রাজধানী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে, অকেনটাই যানজটমুক্ত হবে নগরীর বিশাল এলাকা।
বিগত ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৬২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এই ফ্লাইওভারের দরপত্র খোলা হয় গত ১৫ মে। পরে ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি নির্মাণে গত ২৮ অক্টোবর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র‌্যাঙ্কিনের (জেভি) সঙ্গে সিডিএর চুক্তি হয়।
দুই বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। মুরাদপুর থেকে ওয়াসা জংশন পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার ফ্লাইওভারে চারটি লেইন থাকছে। এছাড়া দুই নং গেইট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত দুই লেনের দশমিক শূন্য সাত কিলোমিটার (নিম্নমুখী) র‌্যাম্প ও অক্সিজেন থেকে জিইসিমুখী দুই লেইনের এক কিলোমিটার (ঊর্ধ্বমুখী) র‌্যাম্প থাকবে। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ হওয়ায় প্রকল্প ব্যায় বাড়েনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ২০১০ সালের ২ জানুয়ারী নগরীর বহদ্দাহাট জংশনে একই সাথে ৫টি ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। পরে পাঁচটি ফ্লাইওভারের বদলে বহদ্দারহাটে একটি এবং মুরাদপুর থেকে ওয়াসা হয়ে ইস্পাহানি মোড় পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।
এটি হবে নগরীর চতূর্থ ফ্লাইওভার। এর আগে বহদ্দারহাট, কদমতলী, ও বন্দর এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। দেওয়ানহাটে মোড়ে নির্মাণ করা হয় ওভারপাস। মুরাদপুর ফ্লাইওভারটির সাথে সংযুক্ত হবে বিমানবন্দর মুখি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আর তখন এই উড়াল সড়ক মুরাদপুর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ হবে।
সেই তিন সেতুতেও গাড়ি চলবে
রোজার শুরুতেই খুলে দেওয়া হবে নগরীর বিমানবন্দর সড়কের বহুল আলোচিত সেই তিনটি সেতু। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, ইতোমধ্যে তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। ৭ ও ৯ নম্বর খাল এলাকার দুটি সেতুর ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে সংযোগ সড়ক ভরাটের কাজ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সেতু দুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। তবে ১৫ নম্বর খালের সেতুটির কাজ প্রায় শেষ দিকে হলেও অ্যাপ্রোস রোড দীর্ঘ হওয়ায় ওই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন লাগবে। আগামী ২০ জুনের মধ্যে সেতু তিনটির নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও তার আগেই কাজ শেষ করা হচ্ছে। প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দিন সেতু তিনটি উদ্বোধন করা হবে। তবে তার অনেক আগেই সেতু তিনটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
স্বস্তি দিতে চায় পুলিশ
রোজাদারদের গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি স্বস্তি দিতে আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন যানজট নিরসন ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর তাতে গতবারের চেয়ে অন্তত: ত্রিশভাগ বেশি স্বস্তি পাবেন নগরবাসী। প্রতিটি মার্কেটে প্রথম রোজা থেকে ১৫ রোজা পর্যন্ত বেলা ২টা থেকে রাত ১২টা একপালা এবং ১৬ রোজা থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত দুই পালায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশের নির্ধারণ করা ৪২টি পার্কিং স্পটের বাইরে কোনো স্থানে গাড়ি পার্কিং করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও আশপাশের এলাকায় ৪০০ কমিউনিটি পুলিশ সদস্য রাখার পাশাপাশি মালিক সমিতিকেও নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের আহাবান জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার জানান, এবছর নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে নিয়োগ করা হবে। তারা ক্রেতাদের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করবেন। এবছর নিউ মার্কেট, সানমার ওশান সিটি, সেন্ট্রাল প্লাজাসহ ৫টি মার্কেটে পুলিশের পক্ষ থেকে ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হবে। এসব বোর্ডে পার্কিং স্থানে কয়টি গাড়ি রাখার স্থান আছে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
নগরীর ব্যস্ততম টেরিবাজার সড়কে চলাচল করা যানবাহনগুলোকে বিকল্প সড়কে চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ওই সড়কে কোনো রিকশা ভ্যান ও অটো রিকশাও চলাচল করতে দেয়া হবে না। টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা রমজানে ক্রেতাদের গাড়ি পার্কিং করার জন্য লালদিঘী মাঠ এক মাসের জন্য ভাড়া নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া রেয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকমুন্ডি লেইনে যাওয়া ক্রেতারা রেল স্টেশন ও মিউনিসিপ্যাল স্কুল মাঠে গাড়ি পার্কিং করবে বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ