Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এস আলমের পূর্ণগ্রাসে ইসলামী ব্যাংক

| প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন আরও ৫ পরিচালক
ইনকিলাব রিপোর্ট : দেশের বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ ইসলামী ব্যাংকে পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে বিতর্কিত গ্রæপ এস আলম। ব্যাংকটিতে লুটপাটের বাধা ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল আলম পারভেজ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল মাবুদ, পিপিএমকে ২৩ মে এজিএম’এর মাধ্যমে সরিয়ে দেয়ার পর স্বতন্ত্র পরিচালক পদ থেকেও গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন তাঁরা। এর ধারাবাহিকতায় আরও পাঁচ পরিচালকের পদত্যাগ করতে যাওয়ার কথা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এরা হলেন প্রফেসর কাজি শহিদুল আলম, বোরহান উদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন, মো. সাইফুল আলম এফসিএ ও হেলাল আহমেদ চৌধুরী।
এদিকে তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) ছেড়ে দেয়া সাড়ে ৫ শতাংশ শেয়ার (৮ কোটি ৬৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬০টি শেয়ার) কিনে নিয়েছে এস. আলম গ্রæপ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে ২৭৪ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, জেএমসি বিল্ডার্স ও এক্সেলসিওর ইমপেক্স। এর আগে সাতটি কোম্পানির মাধ্যমে ১৪ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় গ্রæপটি যার মধ্যে এক্সেল ডাইংও রয়েছে। বর্তমানে নয়টি স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকে এস. আলম গ্রæপের অংশীদারিত্ব ১৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিংয়ের চেয়ারম্যান বদরুন নেসা আলম। তিনি এস. আলম গ্রæপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বোন। একইভাবে অন্য দুটি কোম্পানিও এস. আলমের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলে বিএসইসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে এই শেয়ার ক্রয়ের জন্য ২৭৪ কোটি টাকার যোগান ইসলামী ব্যাংকের ঋণের মাধ্যমেই এসেছে বলে জানা গেছে। একটি ভূয়া ডেভলপার কোম্পানির নামে ঋণ করিয়ে সেই টাকা দিয়ে আইডিবি’র ছেড়ে দেয়া শেয়ার কেনে কোম্পানি তিনটি।
গত ২৩ মে ব্যাংকটির ৩৪তম এজিএম’এ পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর নিজ ইমেইল আইডি থেকে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান প্রফেসর পারভেজ। এতে তিনি দাবি করেন, “ভাড়া করা এজিএম পার্টির লোক, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শেয়ার হোল্ডার, শেয়ার হোল্ডার নন- এমন লোকজন ভাড়া করে এনে বার্ষিক সাধারণ সভায় কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করানো হয়েছে।”
এজিএমের নামে ‘নজিরবিহীন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে’ মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম বহির্ভূত অপব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কিছু করার শক্তি না থাকলে সম্মানিত পরিচালকদের পর্ষদে থাকা অর্থহীন।”
জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার সংশ্লিষ্টতা থাকা ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি পরিবর্তন হয় গত জানুয়ারিতে। সাবেক অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। সে সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও পরিবর্তন আসে।
এই ব্যাপক পরিবর্তনে নেপথ্য ভূমিকা পালন করে এস. আলম গ্রæপ। পূর্বেই গ্রæপটি সাতটি কোম্পানি গঠন করে ব্যাংকটির ১৪ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ব্যাংকটির সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় গ্রæপটির অনুগত ও নিজস্ব লোকদের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যাংকটির কর্তৃত্ব নেয়ার পর ব্যাপক লুটপাটের উদ্যোগ নেয় ওই গ্রæপটি। তবে বেশিরভাগ উদ্যোগ ভেস্তে যায় স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ভাইস চেয়ারম্যান পারভেজের কারণে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের অনেকগুলো বড় আকারের কু-ঋণ ইসলামী ব্যাংক ক্রয় করতে গেলে অনেকগুলো প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে দেন পারভেজ। বেনামে নতুন একটি ডেভলপার প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ৬শ কোটি টাকা ঋণ বের করে নেয়ার প্রক্রিয়াও ঠেকিয়ে দেন তিনি। বিরোধীতা করেন জাকাত ফান্ডের টাকা তছরুপেরও যা মূলত ব্যবহৃত হচ্ছিল দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করতে।
সর্বশেষ সৈয়দ আহসানুল আলম ইসলামী ব্যাংকে পরিকল্পিত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিশাল অংকের একটি ‘অর্থলুট প্রক্রিয়া’ আটকে দেন। ওইদিন রাতেই অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে অস্ত্রের মুখে গাড়ি থামিয়ে পদত্যাগ করতে বলে সন্ত্রাসীরা যে বিষয়ে তিনি ঘটনার রাতেই ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছিলেন।
এদিকে চট্টগ্রামের ওই গ্রæপটি ব্যাংকটির কতৃত্ব নেয়ার পর সাড়ে ৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা আসে আইডিবি’র পক্ষ থেকে। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ওষুধ কোম্পানি ও একটি আবাসন কোম্পানি এই শেয়ার কেনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পুরো শেয়ার কিনে নেয় এস. আলম।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমান চেয়ারম্যান আরাস্তু খান দায়িত্ব নেয়ার পর তিন মাসেই ব্যাংকটি ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে যেগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরমধ্যে চেয়ারম্যান যে কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই আরমাডা স্পিনিং মিলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইনফিনিট সিআর’কে ১৩২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছাড়াই। আরাস্তু খান দায়িত্ব নেয়ার একমাসের মধ্যে ফেব্রæয়ারিতে এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকে নতুন নেতৃত্ব আসার পর আইটি বিভাগে ব্যাপকহারে নিজস্ব লোক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, আইটি বিভাগে নতুন নেতৃত্ব ৩৫জন লোক নিয়োগ দিয়েছে নিজেদের পছন্দমতো কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই।এই অতি সংবেদনশীল আইটি বিভাগের মাধ্যমেই ইসলামী ব্যাংকে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ইনকিলাবের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামী ব্যাংক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ