Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইন্টারনেট ও সিম ট্যাক্স প্রত্যাহার চায় অপারেটরগুলো

আগামী বাজেটে টেলিকম খাতের ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ফারুক হোসাইন ঃ প্রতিবছর বাজেটের আগে কর্পোরেট ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণ ও সিম ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। আগামী ২০১৭-১৮ বাজেটে টেলিকম খাতের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফের সেই দাবিগুলোরই পুনঃব্যক্ত করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা। একই কথা তারা কদিন আগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনাতেও বলেছেন। বাজেটে অন্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় কর্পোরেট ট্যাক্স নির্ধারণ, ইন্টারনেট সেবা, তরঙ্গ ও সিমের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটর এবং ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ইন্টারনেট ও সিম ট্যাক্সকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করে তারা জানিয়েছেন এই ট্যাক্স প্রত্যাহার করলে জিডিপিতে এই খাতের অবদান আরও বেড়ে যাবে। এজন্য ইন্টারনেটের উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ, সিমের উপর থেকে ১০০ টাকা ট্যাক্স প্রত্যাহার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় কর্পোরেট ট্যাক্স ৪৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ করার দাবি জানান তারা। আসন্ন বাজেটে টেলিকম খাতের প্রত্যাশা প্রসঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এর মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সিগারেট কোম্পানিগুলো যে কর দেয়; আর মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোও একই হারে কর দেয়। কর হার বেশি হওয়ায় মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে না। কোম্পানিগুলো আস্থাসংকটে থাকে। পুরো মোবাইল ফোন খাতের একটি নীতি পর্যালোচনা করা উচিত। তিনি আগামী বাজেটে ইন্টারনেট ও সিম ট্যাক্স তুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার এসবের উপর থেকে ট্যাক্স তুলে দিলে যে রাজস্ব হারাবে তা কিন্তু নয়। বরং এর মাধ্যমেই ইন্টারনেট ও ভয়েস থেকে ভিন্নভাবে দ্বিগুণ রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে।   
অ্যামটব মহাসচিব বলেন, দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সবার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ, ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইন্টারনেট সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া দরকার। এ ছাড়া সিমকার্ডের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিও করেন তিনি। এ সময় তিনি করপোরেট কর হার কমানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে ৪০ শতাংশ ও তালিকার বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোকে ৪৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর পরিশোধ করতে হয়। এত উচ্চ করারোপ অন্য কোনো খাতে করা হয়নি।’
নুরুল কবির বলেন, সম্ভাবনাময় এ খাতকে আলাদাভাবে বিবেচনা না করে অন্যান্য সাধারণ কোম্পানির মতো করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিম ও রিম সরবরাহের ক্ষেত্রে ৩৬ দশমিক ৬৫ টাকা ভ্যাট ও ৬৩ দশমিক ৩৫ টাকা সম্পূরক শুল্কসহ ১০০ টাকা সিম ট্যাক্স ও রিপ্লেসমেন্টে সিমে ১০০ টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়।’ সর্বনিম্ন কর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সর্বনিম্ন করারোপ আয়কর আইনের মূলনীতি বিরোধী। কারণ আয়কর রাজস্বের উপর নয়, আয়ের ওপর প্রদান করা হয়। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পরও মূলধন থেকে সর্বনিম্ন কর পরিশোধ করতে হয়; যা ব্যবসার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
টেলিকম খাতে বিনিয়োগের জন্য সিম ট্যাক্সকে এখনো প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছে অপারেটরগুলো। বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই মূহুর্তে এ ধরনের অনেক সমস্যা রয়েছে যা বিনিযোগকারীদের আস্থা অর্জনে সাহায্য করে না। সিম ট্যাক্স এখনো পর্যন্ত একটি প্রধান বাধা হিসাবে বিদ্যমান আছে যা এ খাতের উন্নয়নকে দমিয়ে রাখে। আমরা একক গ্রাহকের সংখ্যা ৫৪ শতাংশে বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। বাকী গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম, যার মানে হচ্ছে সিম ট্যাক্স প্রদান করার কারণে এসব প্রাহকদের কাছে পৌঁছানো খুব কঠিন হবে।
এমটবের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে একটি সিম বিক্রি হলে ১০০ টাকা করে সিম কর দিতে হয়। এর পক্ষে অ্যামটবের যুক্তি হলো সিম কর বাদ দিলে গ্রামীণ গ্রাহকেরা আকৃষ্ট হবেন। মোবাইল ফোন অপারেটররা আর্থিকভাবে টিকে থাকবে। আবার যেকোনো সেবায় ১ শতাংশ সারচার্জের প্রত্যাহার চায় মোবাইল ফোন অপারেটররা। মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো করপোরেট কর কমানোর দাবি জানিয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির মতো একই হারে কর দিতে চায় কোম্পানিগুলো। বর্তমানে সিগারেট ও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ৪৫ শতাংশ কর দেয়।
এদিকে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় মোবাইল ফোন অপারেটর রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাবউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে যে কর হার আছে; তাতে রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। প্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পেটার বি ফারবার্গ বলেন, গ্রাহককে সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্টফোন কেনার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এতে অর্থনীতিতে অনেক বেশি প্রতিদান আসবে।
টেলিকম শিল্পের অগ্রগতির জন্য আসন্ন বাজেটে কি ধরণের প্রত্যাশা রয়েছে জানতে চাইলে রবির পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবা উন্নত করতে এবং ফোরজি সেবা নিয়ে আসতে আমাদের অতিসত্ত¡র প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। তরঙ্গের উপর থেকে ভ্যাট তুলে দেওয়া প্রয়োজন অথবা বিধিবদ্ধ প্রয়োজন অনুসারে আমাদেরকে মুসক-১১ প্রদানের জন্য বিটিআরসি’র প্রয়োজন ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন করা। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে স্পেকট্রামের ওপর ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য হয়না বলেও অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়। এছাড়া বাৎসরিক বিক্রির সর্বনিম্ন ৭৫ শতাংশ ট্যাক্স অথবা এআইটি হিসাবে উচ্চহারে যে অর্থ নেয়া হয় তার বিলুপ্তিও চাওয়া হয়। এছাড়া কাস্টমস ডিউটি নিয়ে বিবাদ এড়ানোর জন্য টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতির কাস্টমস ডিউটি সমন্বয় করার  প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়।
কর্পোরেট ট্যাক্স ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে রবির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই মূহুর্তে টেলিযোগাযোগ সেবার জন্য ১০০ টাকার সমান খরচ করলে সেখান থেকে ২১.৭৫ টাকা সরকারের তহবিলে চলে যায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জ হিসেবে। ইন্টারনেট সেবা থেকে ভ্যাট তুলে দেয়া উচিত, এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রক্রিয়ায় সহায়ক নয়। টেলিকম শিল্পে সরকার সুদৃষ্টি দিলে এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করলে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ৮ লাখ ২০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া বিগত দিনে সিম ট্যাক্স ৬০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা করার ফলে জিডিপিতে এ খাতের অবদান যেমন ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ শতাংশ হয়েছে। তেমনি এই ট্যাক্স তুলে দিলে তা আরও বেশি ভূমিকা রাখবে।     
এদিকে ইন্টারনেট ডাটা থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। আগামী বাজেটে ইন্টারনেট ও ইন্টারনেট সম্পর্কিত সবধরণের পণ্য থেকে ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে ১১ দফা প্রস্তাবও দিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, শুধু ইন্টারনেট ডাটা নয়, ইন্টারনেট মডেম, ইথারনেট ইন্টারফেস কার্ড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, সার্ভার ব্যাটারিসহ সকল ইন্টারনেট সরঞ্জামের উপর থেকে বর্তমানে আরোপিত ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়াও অপটিক্যাল ফাইবার ও এ সম্পর্কিত পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার, উইন্ডিং ওয়্যার অব কপার ক্যাবল, কো অ্যাক্সিয়াল ক্যাবল এবং অন্যান্য কো অ্যাক্সিয়াল ইলেক্ট্রিক কন্ডাক্টর পণ্যের উপর থেকে সবধরনের ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইএসপিএবি তাদের প্রস্তাবে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো, আইটিইএসকে মূসক অব্যাহতি, ইন্টারনেট সেবা প্রদানে ব্যবহৃত বাড়ি বা স্থানের উপর আরোপিত মূসক অব্যাহতি দেয়া, ইন্টারনেট শিল্পকে ট্যাক্স হলিডের আওতাভুক্ত করা এবং ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) সংযোগের উপর থেকে সব ধরনের ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইন্টারনেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ