Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পদ ও আত্মার পবিত্রতায় মাহে রমজান

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মাওলানা মুফতী মোঃ ওমর ফারুক

\ এক \
যুগের ঘূর্নিপাকে ঘুরে ঘুরে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় রমজান। আরবী বর্ষের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নবম মাসকে রমজান মাস বলা হয়। প্রতি বছর দুনিয়ার মুসলমানদের সামনে হাজির হয় প্রশিক্ষণের মাস আত্মন্নয়নের মাস হিসেবে মাহে রমজান। রোজার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে নৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে আতœশুদ্ধি লাভ। রোজা মানুষের মধ্যে প্রচন্ড নৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটায়। রোজা নৈতিক শক্তি সম্পন্ন মানুষ তৈরির সবচেয়ে বড় এবং কার্যকর উপাদান। এই নৈতিক শক্তি-ই একজন মানুষকে আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ থেকে আত্রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং আল্লাহর সন্তুুষ্টির পথে দুর্বার বেেেগ এগিয়ে যাবার শক্তি যোগায়।  অর্থাৎ আল কোরআনের দেখানো পথ অনুযায়ী জীবন গঠনের ক্ষেত্রে রোজার ভূমিকা অপরিসীম। তাই সহজে বলা যায় যে, রমজান মাস হচ্ছে একজন মুমিনের সম্পদ ও আতœার পরিশুদ্ধতা হাসিলের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
প্রতিটি মানুষের শরীর দেহ ও রূহের সমম্বয়ে গঠিত দেহ তার টিকে থাকা ও উৎকর্ষের জন্য প্রতিনিয়ত বস্তুগত নানা ধরনের উপাদান পেতে চায়। কিন্তু রূহ এসব বস্তুগত উপাদানে তুষ্ট হয় না, সমৃদ্ধ হয় না,শান্তি ও স্বস্তি পায় না, রুহ জাগতিক কোন খাবার খায় না । আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহর নির্দেশিত পথে পথ চলা,তাঁর বিধি নিষেধ গুলো যথাযথ ভাবে পুঙ্খানুরূপে পালন করলেই রুহের খাবার দেয়া হয়,রুহ পরিতৃপ্ত হয় সে শান্তি সমৃদ্ধি লাভ করে । একজন মানুষ উন্নত মানুষে পরিণত হয় যখন সে তার দৈহিক চাহিদার চাপের কাছে ক্রমাগত ভাবে আতœসর্মপন না করে নৈতিক সীমারেখা লঙ্ঘন করা থেকে আতœরক্ষা করতে পারে। আর নৈতিক সীমা রেখা লঙ্ঘন করা থেকে আতœরক্ষা করার জন্য প্রয়োজন প্রবল নৈতিক শক্তি। একজন মানুষের মাঝে প্রবল নৈতিক শক্তি বিকাশের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব প্রক্রিয়া নির্দেশ করেছেন তার বিশেষ ব্যবস্থা হলো সিয়াম সাধনা তথা রমজানের রোজাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সর্তকতার সাথে পালন করা ।
সত্য ও ন্যায়ের পথে নিজকে ঠিকে রাখা অপর কে এই পথে আহŸবান করার জন্য যে পরিমাণ ধৈর্য্য শক্তি সাহসিকতা আতœত্যাগ ও মনোবলের দরকার মাহে রমজান এর উপযুক্ত হাতিয়ার । একটি সুন্দর সুশীল আর্দশ সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা উন্নত জাতি গঠনের স্থায়ী ব্যবস্থাপত্রের নাম মাহে রমজান। শয়তানের প্ররোচনায় মানুষের  মানবিক গুনাবলীতে গুণে ধরে, ক্ষয় হয়ে যায় তাদের সত্য বলা, সত্য ও সঠিক পথে চলার হিম্মত হারিয়ে ফেলে, অবিচার পাপাচার দুরাচার জুলুম অত্যাচার ও নিপীড়নে জড়িয়ে পড়ে ফলে সমাজ ব্যবস্থা নানাবিধ  সমস্যায় কলুষিত হয়ে পড়ে। উল্লেখিত সমাজ বিধ্বংসী বদঅভ্যাস গুলোকে জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে প্রতিটি ঈমানদার কে জান্নাতী চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তুলতেই মাহে রমজান।এই দৃষ্টিকোণ থেকে রমজান শব্দের অর্থ করা হয়েছে জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া পাপ পংখিল হতে বিরত রাখা ইত্যাদি
মানুষের  মনুষত্ব ও মানবিক গুনাগুণ গুলোকে প্রবৃত্তির তাড়না ও কুরিপু বাধাঁগ্রস্থ করে সুন্দর পৃথিবীর লোভনীয় বস্তুগুলোর মোহে পড়ে মহান মাবুদের বিধি নিষেধ বেমালুম ভূলে যায় একে অপরের প্রতি হিংস্বা বিদ্বেষ পরনিন্দা গীবত,চোগলখোরী গালি গালাজসহ নানা ধরনের বদ অভ্যাসে লিপ্ত হয়ে পড়ে আর রোজা এসব অপকর্ম থেকে ব্যক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করে বলেই রোজা কে হাদিসে “ঢাল” হিসাবে  আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সারা বছর ইসলামী আদর্শে উজ্জিবীত থাকা দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী কৃষ্টি কালচার লালন  করার এক অনুপম অনুশীলনের জন্য যে নৈতিক মনোবল প্রয়োজন তা বলিষ্ঠতর করার ক্ষেত্রে সিয়াম সাধনার কোন বিকল্প নেই। রোজার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’য়ালা সুরা বাকারার ১৮৩ নাম্বার আয়াতে বলেন “তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেন তোমরা তাকওয়া অবল্মবন করতে পার”।
ইসলামের দার্শনিক ইমাম গাজালী রাহ: বলেন যে ঐশ^রিক গুণে গুণাম্বিত করে তোলাই রোজার উদ্দেশ্য। মানুষ তখনই ঐশ^রিক গুণে গুণান্বিত হবে যখন তাকওয়া অর্থাৎ খোদা ভীতি বা পরহেজগারী অর্জন করতে সক্ষম হবে। তাকওয়া অর্জন সম্ভব হলেই আতেœান্নয়ন সম্ভব। আর আতেœান্নয়ন এমন একটি বিষয় যা ছাড়া কোরআনের আলোকে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম করা সম্ভব নয়। আতিœক উন্নয়নের প্রচেষ্টা ছাড়া রমজানের সিয়াম সাধনা হবে সেহরি খেয়ে সারাদিন উপবাস থেকে দিনের শেষে ঘটা করে ইফতার করার নাম সর্বস্ব অনুষ্ঠান মাত্র। মানবতার মহান শিক্ষক ,বিশ^সেরা মনোবিজ্ঞানী রাসুল্লুাহ (সাঃ) বলেন “যে লোক মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আমল পরিত্যাগ করলো না, তার খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই (বুখারী)।
রমজান হলো অব্যাহত তীব্র দহনের সমষ্টিগত একটি প্রশিক্ষণ কোর্স। যা কুপ্রবৃত্তিকে জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে মানুষের দৈহিক সত্তার ওপর আত্মিক সত্তার নিয়ন্ত্রন আরোপের অসাধারণ শক্তি যোগায় রোজা। বছর ঘুরে বার বার সেই রমজান মাস আমাদের মাঝে আসে এবং চলে যায়। আমরা ও সেই মাস ঘটা করে উৎযাপন করি। কিন্তু সমাজ থেকে পাপাচার অন্যায় অত্যাচার ও জাহেলিয়াতের অবসান ঘটাবার শক্তি, সাহস ও যোগ্যতা আমাদের মাঝে কেন সৃষ্টি হচ্ছে না? কেন রমজান শুরু হওয়ার পূর্বেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দর আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে ? অন্য দিকে রমজান শুরু হওয়ার সাথে সাথে দেশের মসজিদ গুলো কানায় কানায় ভরে যায় আবার যেইমাত্র রমজান শেষ তুলনা মূলকভাবে মসজিদ অনেকাংশেই ফাঁকা! বিশেষ করে ফজরের নামাজে ১/২ কাতার এর বেশী নয় এরই বা কারণ কি ? বিকেলে শহরের মসজিদ গুলোতে হরেক রকমের ইফতারের আয়োজন, মুসুল্লীদের সমাগম দেখে মনে হয় না যে এদেশে চরিত্র বিধংসী ঊলংগপনা বেহায়াপনা ছবির পোস্টারে রাস্তার মোড়গুলো ছেয়ে যাবে! হোটেল গুলোতে দিনের বেলা দেদারসে খাওয়া দাওয়ার রমরমা বানিজ্য চলবে ! শপিং মল গুলোতে নারী পুরুষের বেপর্দা উপচে পড়া ভিড়, দোকান  গুলোতে নারী পুরুষের মূর্তি বানিয়ে মহান আল্লাহর বিধান কাপড় পরিয়ে রাখবে হায়!নারী পুরুষ চেনা মুশকিল এরকম পোষাকে টেলাটেলি আর ধাক্কাধাক্কি করে কেনা কাটার ধুম! অবস্থার আলোকে মনে হয় যেন এ মাস চলে গেলে দোকান পাট সব বন্ধ হয়ে যাবে কোন কিছু কেনার সুযোগ থাকবে না। তাই ফরজ নামাজের ওয়াক্ত চলে যায় কেনা কাটার নেশায় অনেকে নামাজের কথা বেমালুম ভুলে যায় তবু  আগে নতুন জামা চাই! ঈদে নতুন কিছু চাই! শুধু এখানেই শেষ নয় রমজানের অর্ধেক মাস যেতে না যেতেই পরিবহন সেক্টরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিযেগীতা শুরু হয়ে যায়। অথচ পরিবহনের মালিক,চালক যাত্রী  দোকানের ব্যবসায়ী ক্রেতা দেশের সরকার সবাই মুসলমান রোজাদার!
এর মূল কারণ কি ? রোজা আসে রোজা চলে যায় রোজা আমাদেরকে কি দেয় আমরা রোজা হতে কি পাই ? এর জবাব কি? আত্মিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা ছাড়াই সিয়াম সাধনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব রমজানুল মোবারক উৎযাপন করা। সত্যিকার অর্থে আমরা যদি সিয়াম সাধনা করতে পারি তাহলে রমযানুল মোবারক নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো আমাদেরকে উপহার দিবে যা একটি সমাজ, একটি দেশ তথা গোটা বিশ^  ক্রমান্বয়ে সুশীল বিশে^ পরিণিত হতে বাধ্য।
বিষয় গুলো নিম্নরূপ ঃ
তাকওয়া অর্জন: খোদা ভীতি এমন একটি বিষয় যা মানুষকে প্রকাশ্যে গোপনে রাতের আধারে একেবারে নির্জন অবস্থায় ও সকল প্রকার দুর্নীতি পাপাচার হতে রক্ষা করে। আর খোদাভীতি যখন কোন মানুষ অর্জন করবে তখন তার দ্বারা কোন প্রকার অন্যায় কাজ সম্ভব হবে না। রোজা এর প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহৌষধ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ