Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাঠ সাংবাদিকতা

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মি জা নু র র হ মা ন তো তা : মানব সভ্যতার ঊষাকাল থেকে আজ পর্যন্ত সাংবাদিকতা ক্রিয়াশীল। সাংবাদিকতায় জীবন্ত জগতের দেখা মেলে। সে জন্যই সাংবাদিকতা পেশাটির গুরুত্ব অপরিসীম। এর রয়েছে পেশাগত বিরাট ঐতিহ্য। রয়েছে অনেক মর্যাদা। কিন্তু কেন যেন এক শ্রেণীর সাংবাদিক নামধারীর কারণে অনেক ক্ষেত্রেই মাঠ সাংবাদিকতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। দায় নিতে হয় সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকদের। তবুও সাংবাদিকতা পেশাটি সমাজের সকল স্তরে গুরুত্ব পাচ্ছে সমানভাবে। বর্তমানে সাংবাদিকতা অনেক গতিশীল হয়েছে। বিশেষ করে বদলে গেছে মাঠ সাংবাদিকতা। পত্রিকার ডেক্স আর মাঠের মধ্যে এখন কোনো পার্থক্য নেই। মাঠের সাংবাদিকদের আর মফস্বলের সাংবাদিক বলা হয় না।
মাঠ সাংবাদিকতা পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেরই জীবন হয়ে ওঠে ঝুুঁকিপূর্ণ। সমাজের সব অত্যাচার, নির্যাতন, অনাচার, অনিয়ম, অব্যবস্থা, দুর্দশা, সমস্যা, অসঙ্গতি, ব্যর্থতা, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা, সুলভ উপায়ে স্বার্থসিদ্ধির নানা বিষয়ের বিরুদ্ধে কলম ধরতেই পেশাটি বেছে নেন সাংবাদিকরা। পেশাটি সত্যিকারার্থে স্বাধীন। কিন্তু নানা কারণে সব কথা প্রাণ খুলে লেখা যায় না, বলা যায় না। কোথায় যেন আটকে যায়। বাধা হয়ে দাঁড়ায়। লিখলেই ঘটে বিপত্তি। সাংবাদিকতা জীবনে যেমন রঙিন স্বপ্ন ভরপুর, তেমনি অনেক দুঃখ-কষ্ট পেয়েছি, হয়েছি বেদনায় নীল। অনেক সময় নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছে শিউরে ওঠার মতো দুঃস্বপ্ন দেখতে হয় অনেক মাঠে সাংবাদিকদের। তখন স্বপ্ন হয়ে গেছে তছনছ। ছেট-বড় ভ‚মিকম্পও নেমে আসে মাঝেমধ্যে। আবার সিডর ও আইলায় বিধ্বস্ত সুন্দরবনের গাছপালার মতো জেগে ওঠে। সামাজিক দায়বোধ থেকে করা সৎ সাংবাদিকতায় অবশ্য সাময়িক আঘাত আসলেও পরাস্ত করতে পারে না সাংবাদিকদের। আমি একজন মাঠের সাংবাদিক হিসেবে ছুটোছুটির পেশায় আত্মনিয়োগ করে পৃথিবীর অপরূপ বর্ণচ্ছটায় হয়েছি মুগ্ধ, মন ভরে গেছে আনন্দে। ভুলে গেছি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো যন্ত্রণাদায়ক সব অত্যাচার নির্যাতন। দেখেছি হিংসা ও বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়ে সত্যকে ঘাঁয়েল করতে একই মিথ্যা নানারূপে। সম্পূর্ণ অকারণে নিদারুণভাবে আঘাত পেয়েছি। যাতে রাতের চেয়েও অন্ধকার নেমে আসে।
যাই হোক, একসময় ডাকযোগে রিপোর্ট পাঠানোর কথা বললে নতুন প্রজন্ম খিলখিল করে হাসে। এখন ফেসবুক ও ইন্টারনেটের যুগ। এরপর কি হবে কে জানে। কখন পত্রিকা আসবে এমন চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করার দিন নেই, অনলাইনে মুহূর্তে ক্লিক করলেই দেশ-বিদেশের খবর পাওয়া যায়। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিপ্লবে দেখা যায় সচিত্র প্রতিবেদন। শুধু পিছিয়ে সামাজিক শৃঙ্খলায় ও মানসিকতায়। মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত বদলে যাচ্ছে দ্রæত। পরিবর্তন ঘটছে সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে। এর হাওয়া থেকে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতাও বাদ পড়ছে না। শহর, গ্রাম-মফস্বলের খবর আগের চেয়ে সংবাদপত্রে স্থান পাচ্ছে বেশি। সংবাদপত্রের প্রিন্ট খবরের অপেক্ষা করতে হচ্ছে না পাঠকদের। প্রতি মুহূতের মাঠের টুকিটাকি খবরাদিও অনলাইন ভার্সন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে। এক কথায় বিশ্বের খবরাখবর এখন হাতের মুঠোয়। বলতে দ্বিধা নেই, বিস্ময়কর নৈপুণ্যের সঙ্গে মাঠের অর্থাৎ জেলা-উপজেলার অনেক সাংবাদিক অসাধ্য সাধন করেছেন। মেধাগত উৎকর্ষ ও তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতায় মাঠ সাংবাদিকদের একটা সুনাম আছে। লেখার স্টাইলের ভিন্নতা ও বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকেই পারদর্শীতার পরিচয় দিয়ে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। আগের মতো মফস্বলের সাংবাদিক বলে নাক সিঁটকানো ভাবটা নেই। দিনে দিনে মাঠ সাংবাদিকতার গুরুত্ব বাড়ছেই। মাঠ সাংবাদিকতায় জনগণকে দৃষ্টির আড়ালে থাকা ছবি দেখানো যায়। অকৃপণ প্রকৃতির দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ আছে। মাঠের ওপর নির্ভরশীল দেশের প্রতিটি মানুষ। সেজন্য মাঠের দিকে সবার দৃষ্টি। তা কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও রাজনীতি যেটিই হোক না কেন। আগে একসময় গ্রামীণ সাংবাদিকতা ছিল কঠিন। আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে এখন খুব সহজ হয়েছে।
মাঠ সাংবাদিকতা বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে দেশ ও জনগণের মুখপত্র দৈনিক ইনকিলাবের ভ‚মিকা অন্যতম। ইনকিলাবের মাননীয় সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন সর্বপ্রথম ঢাকার বাইরে মফস্বলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যুরো ও অঞ্চলিক অফিস স্থাপন করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বলা যায় ইনকিলাব এ ক্ষেত্রে মডেল। ৯০ দশকে একযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ১২টি ব্যুরো ও অঞ্চলিক অফিস স্থাপনের নজীর অন্য কারো নেই। বর্তমানে প্রায় সব ক’টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকের অফিস স্থাপন হয়েছে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায়। এতে মফস্বলের সাংবাদিকতা খুবই সহজ হয়েছে। গুরুত্বও বেড়েছে। আগের পরিবর্তনই নয়, এখনো পরিবর্তন ঘটে চলেছে, নিত্যদিনের পরিবর্তনের হাওয়ায় ভাসছে মাঠ সাংবাদিকতা। সেই টেলিগ্রাম ও টেলিফোনে নিউজ পাঠানো থেকে ফ্যাক্স, এরপর ডেক্সটপ কম্পিউটার আরো একধাপ পরিবর্তন হয়ে ল্যাপটপ ঘাড়ে ঝুলেছে মাঠ সাংবাদিকদের। যেখানে-সেখানে বসে, একেবারে অজপাড়া গায়ে বসেও মুহূর্তে খবর পাঠানো যাচ্ছে পত্রিকায়। যে অঞ্চলটিতে আমার মাঠ সাংবাদিকতার বিচরণ বিশেষ করে যশোরে।
এ যশোর সম্পর্কে একটু উল্লেখ করা প্রয়োজনÑ বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে যশোর একটি। এই জেলার বিশাল বিশেষত্ব ও বিশেষ গুরুত্ব আছে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায়। ইতিহাস যদি ভ‚গোল না হয় তাহলে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার সাথে জড়িত সবাই অকপটে তা স্বীকার করবেন। ১৮৬৪ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার অমৃতবাজার গ্রামের নামকরণে অমৃতবাজার পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। হেমন্ত কুমার ঘোষ, বসন্ত কুমার ঘোষ, শিশির কুমার ঘোষ ও মতিলাল ঘোষ এই চার ভাই মিলে যশোর থেকে কলকাতায় গিয়ে মাত্র ৩২ টাকায় একটি কাঠের মুদ্রণযন্ত্র ক্রয় করে এনে প্রকাশনা শুরু করেন। পত্রিকাটির প্রথম নাম দেয়া হয়েছিল পাক্ষিক অমৃতপ্রবাহিনী। পরে অমৃতবাজার পত্রিকা নামে সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশনা অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে ১৮৭১ সালের দিকে পত্রিকাটি কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতায় গিয়ে অমৃতবাজার পত্রিকা দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে জেলা শহর যশোর থেকে ১২টি দৈনিক প্রকাশ হচ্ছে।
লেখক : দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন