Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলনায় বর্ষায় পানিবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চরমে

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


১১টি খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন : ৫০টি খালের অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে
আবু হেনা মুক্তি ঃ খুলনা মহানগরীর পানিবদ্ধতা নগরবাসীর কাছে দূরারোগ্য ব্যাধির মত। ঢাক ঢোল পিটিয়ে গত এক যুগেও পানিবদ্ধতার নিরাসন হয়নি। কোনভাবেই, কোন মাষ্টারপ্লানেই এ সমস্যার উত্তরণ হচ্ছে না। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠতে ঝড়বৃষ্টি কম হলেও গত তিন দিনব্যাপী থেমে থেমে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতেই নগরবাসী পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। গত তিন দিনের মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিতে মহানগরীতে পানিবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আষাঢ় শ্রাবন তো পড়েই রয়েছে। ভরা বর্ষা মৌসুমে নগরীর হালহকিকাত নিয়ে নগরবাসী দারুন উদ্বিগ্ন। মহানগরী ও সংলগ্ন এলাকার ৩৪টি খালের মধ্যে এ যাবত মাত্র ১১টি খাল খনন ও সংস্কার করা হয়েছে। আর এতেই ব্যায় হয়েছে প্রায় ৬২ কোটি টাকা। অথচ তিন দিনের বৃষ্টি পাতে রাস্তা ঘাটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজ, ঘর বাড়ি সর্বত্র পানি আর পানি। এক তলা ও নিচু ঘর বাড়িতে পানি ওঠেনি এমন এলাকা খুব কম ছিল। সেই সাথে বিদ্যুৎহীন নগরীতে জনদুর্ভোগ ছিল চরমে। নগরীর সাত রাস্তার মোড়, রয়েল মোড়, শান্তিধাম, নিরালা, বেনীবাবু রোড, পূর্ব ও পশ্চিম বানিয়াখামার, রায়পাড়া, টুটপাড়া, খালিশপুর, মুজগুন্নি, বয়রা, বাস্তহারা এলাকা সর্বত্র সড়কে প্রায় হাটু পানি। পানিতে টইটুম্বর শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনা।
সূত্রমতে, পানিবদ্ধতা রোধে কেসিসি গত ৪ বছর আগে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছিল। যা এখন আবার ঝিমিয়ে গেছে। কারণ নগরীর ৩৪টি সহ ছোট বড় মোট ৫০টি খালের অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এর মধ্যে ১১টি খালের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পানি নিষ্কাশনের বন্দবস্ত না থাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা  একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর রাস্তাঘাট পানিতে টইটুম্বর হবেই। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ কিছু জায়গায় তড়িৎ পদক্ষেপ না নিলে আসছে বর্ষায় নগরীর অধিকাংশ স্থান পানিতে তলিয়ে যাবে। কেসিসি সূত্র বলছে দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল ১ দিনে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তবে বর্তমান মেয়রের নেতেৃত্বে আশু কিছু তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার কিছু সুফল এই বর্ষাকালেই পাওয়া যাবে।
সূত্রমতে, গত ১ যুগে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাপক হারে জনবসতি বৃদ্ধি পায়। আবাসনের প্রয়োজনে নগরীর পরিধিও বাড়তে থাকে। গত দু’দশকে বিভিন্ন সরকারের আমলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরুন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলতে থাকে খাস জমিও খাল দখলের প্রতিযোগিতা। এসকল কর্মকান্ডে থেমে নেই ভূমি ও জরিপ অফিসের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীরা যেভাবে পেরেছে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও সুবিধাবাদীরা তঞ্চকতার মাধ্যমে নিজ নামে রেকর্ড করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। নিজেরাও মালিক হয়েছে। অনেক ভূমি অফিসের কর্মচারী এ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অনেক জমি জায়গা ও অর্থকড়ির মালিক হয়েছে। ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট ছা-পোষা কর্মচারীরা এখন বিপুল বিত্তবৈভাবের মালিক। অবসরপ্রাপ্ত কাননগো এবং সার্ভেয়ারদের খুলনা মহানগরীতে ৩ তলা ৫ তলা অট্রালিকা ও অনেক জমি জায়গা রয়েছে।
সূত্রটি জানায়, নগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ৫০ খালের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ অবৈধ দখলে গেছে। এই দখল প্রক্রিয়ার সাথে প্রায়  শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। দখলদারদের উচ্ছেদ আন্দোলন তিনবছর বছর স্তিমিত হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমের আষাঢ়-আশ্বিন মাস নগরীর একটি বড় অংশে স্থায়ী পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষার এ ৪ মাস ডুবে থাকে ২ লাখেরও বেশি নগরবাসী। এর সংখ্যা এবার আরো বাড়বে।
সিটি কর্পোরেশনের সুত্র জানান, নগরী ও পাশ্ববর্তী এলাকার ৫০ খালের মালিক জেলা প্রশাসন। কর্পোরেশন এগুলো তদারকী করেন মাত্র। উল্লেখযোগ্য খালগুলো হচ্ছে নিরালা, ময়ুর নদী, মন্দার, ক্ষেত্রখালী, মতিয়াখালী, লবনচরা, তালতলা, মিস্ত্রিপাড়া, নবীনগর, ছড়িছড়া, লবনচরা গোড়া, লবনচরা সুইচ গেট, সবুজবাগ, মিয়াপাড়া পাইপের মোড়, বাস টার্মিনালের পশ্চিম পার্শ্বে, রায়েরমহল পশ্চিমপাড়া, বাস্তহারা, গল্লামারী নর্থ, দেয়ানা দক্ষিনপাড়া, বাটকেমারী, সাহেবখালী, হাজী তমিজ উদ্দীন, নারকেলবাড়িয়া, সুড়িমারি, ডুবি, বেতবুনিয়া, দেয়ানা, তেঁতুলতলা দশ গেট, হাতিয়া, মাথাভাঙ্গা, মাষ্টারপাড়া, হরিনটানা, ক্ষুদে, মজুমদার, কাদের, চক মথুরাবাদ, নবপল্লী, ছোটবয়রা শ্মশানঘাট, রায়েরমহল মোল্লাপাড়া, বিলপাবলা ইত্যাদি
এলাকাবাসীদের সুত্র জানান, বাস্তহারা খাল, ¯øুইজগেট খাল, গল্লামারী নর্থখাল, কাষ্টমঘাট ইত্যাদি এলাকায় খালের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। লবনচরা খালের একাংশ ভরাট করে ওয়ার্ড অফিস ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। রুপসার সাহেবখালী খালের ওপর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট নির্মাণ ও কলেজিয়েট স্কুলের এক পাশ্ব দখল করা হয়েছে।
পিটিআই মোড়ে খালের মুখ বন্ধ করে ওয়ার্ড অফিস নির্মান, ২৮ নং ওয়ার্ডের শেষ সীমানায় খালের ওপর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। রেলওয়ে মার্কেট এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি হলুদ ও মরিচের আড়ৎ গড়ে উঠেছে। বয়রা শ্মশানঘাট খালের মুখ বন্ধ করে গড়ে উঠেছে ইসলামীয়া কলেজ। একটি খালের মুখ বন্ধ করে সোনাডাঙ্গায় মহিলা কমপ্লেক্স নির্মান, নবীনগর খাল বন্ধ করে কেডিএ বাসটার্মিনাল ও গল্লামারী বাইপাস সড়ক র্নিমিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৯৬০ সালে অধুনালুপ্ত পৌরসভা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের বর্তমান স্থানের মধ্য দিয়ে একটি খাল কাটে। পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই খালের ওপর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা ও কর্পোরেশন ট্রাকটার্মিনাল গড়ে তুলেছে। এদিকে খালিশপুর হাউজিং এলাকায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্যুয়ারেজ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ এবং দক্ষ জনবলের অভাবে পয় নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি এ ব্যাপারে বলেন, মানবাধিকারের প্রশ্ন উঠলেও খালের ওপর থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। নগরীর ৯৮ শতাংশ মানুষ বর্ষার পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে খালগুলোর ওপর অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রবাহমান খালে পরিনত করতে চায়। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সম্বনয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। দখলদার যত বেশি প্রভাবশালী হোক না কেন এবিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। কোন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারও সহ্য করা হবেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনদুর্ভোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ