Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জনসভায় মানব ঢল ও শোডাউনের প্রস্তুতি নেতাকর্মীদের

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জনসভা আজ

প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ জনসভা করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। জনসভা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। জনসভায় মানব ঢল নামিয়ে বিরোধীদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। সেজন্য দফায় দফায় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক, যৌথসভা করেছেন দলটির নেতারা। এসব বৈঠক থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক উপস্থিতি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকারের প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানানো হয়।
বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠেয় এ জনসভায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা ও আশপাশ এলাকা থেকে এসে সমবেত হবেন। এজন্য প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের নেতাদের সর্বোচ্চ জমায়েত নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুরো জনসভা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা রোববার বিকেলে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন।
দফায় দফায় বৈঠক-সভা : ৭ মার্চের জনসভা কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত জাতীয় সংসদ সদস্য, ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় সংসদ সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ মেয়র ও কাউন্সিলর, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ ও কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সর্বশেষ গতকাল রোববার সকাল ১১টায় ঢাকা মহানগর এবং বিকেলে শ্রমিক লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সভা থেকে দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভায় অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
নগরের নেতৃবৃন্দকে বিশেষ নির্দেশনা : ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ৭ মার্চ জনসভা সফল করতে ইতোমধ্যেই মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়ন এবং থানার নেতৃবৃন্দকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা প্রসঙ্গে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না জানান, আমরা নির্দেশনা মৌখিকভাবে পেয়েছি। এ নির্দেশনার পর ৭ মার্চ জনসভাকে সফল করতে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। সোমবার সকাল থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান তিনি।
৪৮ নং ওয়ার্ড (যাত্রাবাড়ী) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম অনু ইনকিলাবকে বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে হাজারও নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন, ঢোল-বাদ্য নিয়ে হেঁটে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নিয়ে জনসভায় যোগ দেবে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জনসভা সফল করতে প্রায় ৫০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী সমাবেশে যোগ দেবে। সমাবেশে যোগদানের জন্য আমরা আগেভাগেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বলেন, বেলা ১১টা থেকেই ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে আসবেন।
৭ মার্চের জনসভা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অনুষ্ঠানে আমরা জনতার ঢল নামিয়ে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের আন্তর্জাতিক প্রভুদের ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে চাই। সে জন্য তিনি দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে জনসভায় যোগদানের আহ্বান জানান।
এদিকে, ৭ মার্চের জনসভাকে সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি। রোববার এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দেশবাসীর সঙ্গে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য সংগঠনের সকল শাখাসহ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী, সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাকে সফল করতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনগুলো। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭টি সংগঠন সহযোগী এবং ৩টি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নেতাকর্মীদের জনসভায় যোগদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
জনসভা না শোডাউন : আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জনসভার আয়োজন ও বড় ধরনের শোডাউন করতে তেমন সমস্যা হবে না। জনসভা সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই গুছিয়েও আনা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল মঞ্চসহ বর্ণাঢ্য সাজসজ্জার কাজ শেষ। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জনসভায় ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে দল ও সহযোগী সংগঠনের লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কয়েকটি বৈঠক, কর্মিসভা ও বর্ধিত সভাও করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরের সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন নেতা ছাড়াও দলীয় এমপিদের নিজ নিজ এলাকা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এমন নির্দেশনা মোখিকভাবে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমপি হাজী মো: সেলিম এবং শ্যামপুর-কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট সানজিদা খান এমপি। হাজী সেলিম রোববার বিকালে তার সেন্ট্রাল রোডের বাসায় জনসভা উপলক্ষে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে ঘোষণা করেন, জনসভায় তিনি একাই এক লাখ লোকের সমাগম ঘটাবেন।
দিবসটি পালন উপলক্ষে এ সমাবেশ রাজধানী ঢাকাসহ আশ-পাশের জেলাগুলো থেকেও লাখ লাখ লোক অংশ নেবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। এছাড়াও ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জনসভা সফল করতে গতকাল রোববার বিকেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে আলেম-ওলামাদের নিয়ে সভা করেছে আওয়ামী ওলামা লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ হোসাইন বিন হেলালী।
সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির বিষয়ে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে লাখ লাখ জনতার ঢল নামবে। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো: আবু কাওছার বলেন, ইতোমধ্যেই সমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। আমাদের ঢাকা মহানগরসহ থানা, ওয়ার্ডের সকল নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকবে। তিনি বলেন, সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নিরাপত্তায় থাকবে। পাশাপাশি সমাবেশ সফল করতে জেলা-উপজেলাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ কারণে এবারের ৭ মার্চের জনসভা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই সমাবেশ সফলের মাধ্যমে বিএনপিকে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কড়া নিরাপত্তা : সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থলের চার পাশে কঠোর নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জনসভাস্থলের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে গেট। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্য, সেনাবাহিনীর একটি দল, ডগ স্কোয়াড ও র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড থাকবে। মঞ্চের চার পাশ সুইপিং ও স্ক্যান এবং সমাবেশস্থলে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, ৭ মার্চ সকাল থেকে পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএনের সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চার পাশে অবস্থান নেবেন। পুরো এলাকায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য জনসভায় প্রবেশের গেট ও এর আশপাশ এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেয়। মেটাল ডিটেক্টর গেট, স্ক্যানার দ্বারা সার্চ করে জনসভায় কর্মীদের প্রবেশ করানো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনসভায় মানব ঢল ও শোডাউনের প্রস্তুতি নেতাকর্মীদের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ