Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কমছে রাজস্বের হার

অপারেটরদের আপত্তিতে ফোরজি নীতিমালা সংশোধন

প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৯ পিএম, ১৩ জুন, ২০১৭

ফারুক হোসাইন : মোবাইল ফোন অপারেটরদের আপত্তি এবং দাবির মুখে ফোরজি’র রেভিনিউ শেয়ারিংয়ে পরিবর্তন এনেছে সরকার। এর আগে নীতিমালায় নির্ধারিত ১৫ শতাংশ পরিবর্তন করে সংশোধিত নীতিমালায় টুজি এবং থ্রিজি’র মতো ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং (অর্জিত আয়ের সরকারি ভাগ) নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশোধিত এই নীতিমালা চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ফোন সেবায় থ্রিজি’র পর এবার ফোরজি এবং এলটিই (লংটার্ম ইভ্যালুয়েশন) লাইসেন্স দিতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ইতোমধ্যে নীতিমালাও তৈরি করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। চুড়ান্ত নীতিমালায় রেভিনিউ শেয়ারিংয়ে কিছুটা পরিবর্তন (সংশোধন) এনে পুনরায় তা অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। সংশোধিত নীতিমালায় নতুন রেভিনিউ শেয়ারিং নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ফোরজি’র লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। বিটিআরসি’র সর্বশেষ সভায় রেভিনিউ শেয়ারিং পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
কমিশন সভায় বলা হয়, গত ৮ মে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় ফোরজি লাইসেন্সিং গাইডলাইনে টুজি ও থ্রিজি লাইসেন্সের অনুরূপ গ্রস রেভিনিউ শেয়ারিং ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং কয়েকটি ক্লজে সংশোধনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ১৪ মে ফোরজি নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনের অনুরোধ করে বিটিআরসিকে চিঠি দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে কমিশনের সর্বশেষ সভায় রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কমিশন এই সংশোধন এনে তা পুনরায় অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ি, ফোরজি’র লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। বার্ষিক লাইসেন্স নবায়ন ফি সাড়ে ৭ কোটি, রেভিনিউ শেয়ারিং (অর্জিত আয়ের সরকারি ভাগ) ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ডের জন্য ১ শতাংশ। এছাড়া প্রত্যেকটি আবেদনকারী অপারেটরকে ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে ১৫০ কোটি টাকা কমিশনে জমা দিতে হবে। এর সাথে লাইসেন্সের জন্য আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
এর আগে রেভিনিউ শেয়ারিং এবং তরঙ্গ ফি’তে আপত্তি জানিয়ে নীতিমালার সংশোধন, যথেষ্ট পরিমাণ তরঙ্গ নিশ্চিত এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আস্থার পরিবেশ তৈরির দাবি জানায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)। সম্প্রতি ফোরজি’তে বিনিয়োগে তাদের প্রতিবন্ধকতা, টেলিযোগাযোগ খাতে অপারেটরগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ এবং বিদ্যমান সাংঘর্ষিক কিছু বিষয় তুলে ধরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের কাছে চিঠি দেয় সংগঠনটি। গত ১৯ এপ্রিল বিটিআরসিতে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদের সাথে অপারেটরদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকেও একই মনোভাবের পুনর্ব্যক্ত করেন তারা। সভায় এমটবের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত রেভিনিউ শেয়ারিং ১৫ শতাংশ করার বিষয়ে আপত্তি জানান। একই সাথে স্পেকট্রামের ফি’কেও উচ্চ হার বলে উল্লেখ করা হয়। থ্রিজি’র বিনিয়োগ থেকে এখনো মুনাফা না আসায় হতাশা প্রকাশ করে তারা বলেন, নতুন করে আবারও এধরনের বিনিয়োগে গেলে অপারেটরদের জন্য টিকে থাকায় কঠিন হয়ে যাবে। এজন্য নীতিমালার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য তাদের পক্ষ থেকে বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়। এর আগে একই বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে এমটবের মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে দেয় সংগঠনটি। ওই চিঠিতে বলা হয়, ফোরজি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হলেও মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কোনো ধরনের মতবিনিময় করা হয়নি। নীতিমালার কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বরা হয়, ফোরজি সেবা থেকে অপারেটরদের যে আয় হবে, তার ১৫ শতাংশ সরকারকে রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে থ্রিজি ও অন্যান্য সেবার জন্য অপারেটররা তাদের আয়ের সাড়ে ৫ শতাংশ সরকারকে দেয়, ফোরজির জন্য সেটি ১৫ শতাংশ করার কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এমনটি করা হলে ফোরজি’তে বিনিয়োগ করে তা থেকে মুনাফা করার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। তাদের আপত্তির পরপরই বিদ্যমান টুজি ও থ্রিজি’র রেভিনিউ শেয়ারিং মডেলই নির্ধারণ করলো কমিশন। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরেই দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। গত ফেব্রæয়ারিতেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এক সভায় যে কোনো মূল্যে ২০১৭ সালের মধ্যেই ফোরজি চালু করতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ