Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সৃষ্টিকর্তার অপার রহস্য সেন্ট পিয়ার

ভ্র ম ণ

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সৈয়দ টিপু সুলতান : সান হোয়ান, সেন্ট মার্টিন, সেন্ট থমাস, ডমিনিকা, মার্টিনিক, বার্বেডোস ও পোর্টোরিকো সহ ৭টি দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে (ডিসেম্বর ১৯, ২০০০ইং) মার্টিনিকে এসে বিধাতার এক অপূর্ব লীলাখেলার নিদর্শন পরিদর্শন করে বিস্মিত হলাম। যে বেলাভ‚মিতে কৃষ্টফার কলম্বাসের পদচারণায় প্রথম মুখরিত সে জায়গায় গিয়ে অভিভ‚ত হলাম। আরও অভিভ‚ত হলাম, অভ‚তপূর্ব কাহিনীর চারণভ‚মি লা মন্টাগনে পেলেস (খধ গড়হঃধমহব চধষধপব) পাহাড়ের আগ্নেয়গিরির অগøুৎপাতের অবিশ্বাস্য কাহিনী শুনে।
১৯০২ সালে সেন্ট পিয়ার দ্বীপের মেয়রের কাছে গিয়ে সাইপেরিস নামের এক সন্ন্যাসী বলল মেয়রসহ সকলে যেন অতি দ্রæত এই পাহাড়ী দ্বীপ থেকে অন্যত্র চলে যায়। মেয়র প্রথম দিন কোন কর্ণপাতই করলেননা। দ্বিতীয় দিনে বিরক্ত হয়ে গার্ডদের নিদের্শ দিলেন ওকে অফিস থেকে বের করে দিতে। সাইপেরিস অবদমিত না হয়ে পুনরায় মেয়রের অফিসে গেল। কারণসমূহ একটা বিপদ সে যেন দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছিল।
এই বার মেয়র ভীষণ বিরক্ত হয়ে ওকে হাত পা বেঁধে পাহাড়ের নির্জন গুহার ভিতরে বন্দী করে রাখার নির্দেশ দিলেন। তার কয়েকদিন পরই ৪০ সেকেন্ডের গলিত লাভার ঘন মেঘ এসে ঢেকে দিল সমস্ত দ্বীপ। জীবজন্তু, কীট- পতঙ্গ, মানুষ এমন কি পাখিও নির্বিশেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো। বেঁচে রইলো শুধু পাগল বলে আখ্যায়িত ঈণচঅজওঝ (সাইপেরিস)। ৩০,০০০ জনসংখ্যার মধ্যে একজন কেবল বেঁচে রইলো কালের সাক্ষী হয়ে, (কিছু পুরাতন দালালে লাভার ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেল)। আমরা ঋৎধহপশ ঢ়বৎৎবঃ াঁষপধহড়ষড়মরপধষ সঁংবঁস ড়ভ ংধরহঃ ঢ়রবৎৎব লাভা দিয়ে আবৃত্ত অনেক দালান কোঠার ধ্বংসাবশেষসহ সেই সময়ের সংরক্ষিত পুরাকীর্তির নিদর্শন পরিদর্শন করলাম। সৃষ্টির অপার রহস্যাবৃত ঘটনাপ্রবাহের একটি দেখেই মনে হলো জীবন ও মৃত্যুকে নিয়ে তার এ কোন লীলাখেলা।
যাত্রাঃ ২২ ডিসেম্বর ২০০০। প্রচÐ বরফ পড়েছে সেদিন। গিন্নি ছেলে মেয়ে নিয়ে রাত্রে নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। তাই কাছাকাছি এয়ারপোর্টই হোটেলে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা হলো। ভোরে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঝঅঘঔটঅঘ এ পৌঁছলাম। স্যানহোয়ান এর সমুদ্র তটে ফেসিনেশান জাহাজ অপেক্ষা করছিল। নির্দিষ্ট বাস ক্রজের কাছে নিয়ে এল আমাদের। কয়েক হাজার যাত্রী লাইন ধরে উড়ো জাহাজের মতো সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে পাসর্পোট চেক করায় ব্যস্ত। উঠেই আমার ছেলে মেয়েরা ক্রজ দেখার জন্য লিফটের সাহায্যে বিভিন্ন তলায় অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিয়ে পর্যবেক্ষন করতে লাগল। লিফটে ১২ তলা পর্যন্ত যাওয়া যায়। আমাদের রুম ৪ তলায়, পাশাপাশি। ডেকে যেতে সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই সুইমিং পুল, জিকুজি, ভলিবল, ও বাস্কেট বল কোর্ট একটু ভেতরে ৪টা টেবিল টেনিস খেলার ব্যবস্থ্য, ২৪ ঘন্টা খাওয়া দাওয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট এর ব্যবস্থা অর্থাৎ ক্রজ যেন সব রকম সুযোগ সুবিধাসহ সমুদ্রে ভাসমান একটি পাঁচতারা হোটেল।
ক্রজের প্রথম স্টপ সেন্ট থমাস আইল্যান্ড। তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রী। রৌদ্রজ্জ্বল পিয়ারে এসে থামলো, সেখানে থেকে ফেরীতে করে সবাই গেলাম হেডেন সাইট শপিং মলে। অনেকটা বঙ্গবাজারের মত ছোট ছোট দোকান। টিশার্ট, সভেনির, চুড়ি, ফিতা, কারুশিল্পের (শিলা ও ঝিনুকের উপর) সমাহার। অবারিত সমুদ্রের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপগুলি বড় বড় দেশ কর্তৃক পরিচালিত। সেন্ট থমাস আমেরিকা কর্তৃক, সেন্ট মার্টিন ফ্রান্স ও ডাচ দ্বারা এবং মাটিনিক ফ্রান্স দ্বারা শাসিত। সারাদিন দ্বীপে ঘুরে কেনাকাটা করে সন্ধ্যায় সূর্য ডোবা দেখতে দেখতে জাহাজে ওঠলাম। ডিনারে অন্য এক পরিবারের সাথে এক সঙ্গে খেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী ক্লান্তি নিয়ে শুয়ে পড়লাম। রাতে এক সময় উঠে দেখি পাশের রুমে সেঁওতি, তানিয়া, জুবেন কেউ নেই। ওরা গভীর রাত পর্যন্ত খেলা, খাওয়া, যাদু প্রদর্শন ও নাচ গানের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিল। পরের দিন সকালে পৌঁছলাম সেন্ট মার্টিন। দূর থেকেই বেলাভ‚মি ঘেঁষে ফ্রান্স ও ডাচদের তৈরী রাড়িঘর দেখা যাচ্ছিল। মাত্র ৭৫ হাজার লোকের বাস এই দ্বীপে। ফ্রান্স ও ডাচ অংশের বিভাজন পূর্ব পশ্চিমে অনেকটা আধাআধি। আমরা গাড়ী ভাড়া করে প্রায় সম্পূর্ণ দ্বীপ চষে বেড়ালাম সারাদিন। ড্রাইভারই আমাদের গাইড। প্রতিবছর ১১ নভেম্বর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় দু অংশের অধিবাসীরা মিলিত হয় এবং নেতারা বৃক্তৃতা করে। বানরের পিঠাভাগ হলেও তারা শান্তিতে বসবাস করছে। কিন্তু ভারত পাকিস্তান, ভ‚টান, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ কি অশান্তিতে! প্রতিদিনই ভারত বাংলাদেশের বর্ডারে কিছু না কিছু ঘটছে। প্রায় সীমান্তে মারা যাচ্ছে কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। হঠাৎ ড্রাইভার গাড়ীর গতি থামিয়ে বলল আর সামনে যাওয়া যাবে না। জিজ্ঞেস করায় বলল সামনে নুড বীচ। আমরা পরস্পরের প্রতি চাওয়া চাওয়ি করে বললাম জলদি অন্যদিকে চল। গাড়ী ছুটে চলল পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে। ছোট দ্বীপের দুই দিকে দুইরকম আবহাওয়া পাহাড় মরু আবার সবুজ সতেজতা। রাতের খাবার খেতে বসলাম নির্দিষ্ট নাম্বারের টেবিলে। দু’দিনে অপর পরিবারের সাথে বেশ জমে উঠেছে। তাদেরও আমাদের মত দুই মেয়ে এক ছেলে। ফ্লোরিডা থেকে এসেছে। জন, রিয়েল স্টেট করে।
জনের ছেলে ভিকির সাথে আমার ছেলে জুবনের গতকালের নিরবতা কেটে আজ দুষ্টুমিতে পরিণত হয়েছে। ছেলে জুবনের জন্মদিন কয়েকদিন পার হলেও জাহাজ ডাইনিং এর অভ্যার্থীদের নিয়ে কেক কেটে কোরাস গেয়ে খুব ঘটা করে জন্মদিন পালন হলো। ঘুমুতে গেলামনা অনেক কিছু মিস করব বলে। ডেকে ওঠে দেখি অপরূপ জ্যোৎ¯œার মাঠ। চলবে



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন