Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উগ্রপন্থা মোকাবেলার প্রয়াস চালাচ্ছে সউদী আরব

রিয়াদের আবদুল আজিজ সেন্টার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সাইবার প্রচারণা চালাবে

প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সউদি আরবকে সবচেয়ে বেশি রক্ষণশীল দেশ মনে করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সুন্নি ধর্মীয় নেতা শায়েখ মোহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবের মতবাদে বিশ্বাসী সউদিরা। এই মতবাদকে ইসলামে গোষ্ঠীগত বিভাজন সৃষ্টিকারী হিসাবে দেখা হয়। একই সাথে আল কায়েদা কিংবা ইসলামী স্টেট বা আইএসের জন্য এই মতবাদ প্রধান উৎসাহদাতা।
কিন্তু সউদি কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারা চরমপন্থা বিকাশের সহায়ক এমন যে কোনো মতবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। রিয়াদভিত্তিক বাদশা আবদুল আজিজ সেন্টার সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য তাদের তৎপরতা জোরদার করেছে বলে দাবি করে। বলা হয়, ওয়াহাবি মতবাদের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরো বলা হয়ে থাকে, এই মতবাদের জন্য মুসলমানদের নানা ধরনের গোষ্ঠীদাঙ্গা শুরু হয়েছে, সেই সাথে জন্ম নিয়েছে আল কায়দা ও ইসলামিক স্টেটের মত যুদ্ধে উৎসাহী গোষ্ঠীগুলো। তবে এই বিষয়টিকে সউদি শাসকেরা বিশ্বাস করেন না। তাদের মত হলো, তারা সন্ত্রাসবিরোধী কোনোভাবেই সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেন না। তারা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চেষ্টা করে চলেছেন। এই কথা বলা হয়েছে রিয়াদ কেন্দ্রিক কিং আবদুল আজিজ সেন্টার ফর ন্যাশনাল ডায়লগ-এর জাতীয় পর্যায়ের এক আলোচনা বৈঠকে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামিক স্টেট সউদি আরবে সুন্নি-শিয়া বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য সউদি আরবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে রাজপরিবারের শাসনের অবসান ঘটানো। রাজপরিবারও কিছুটা সাম্প্রদায়িক মনোভাব বিবেচনা করে থাকে। রাজপরিবার মূলত ওয়াহাবি সুন্নী ইসলামি চিন্তাবিদদের সমর্থন দিয়ে থাকে। তাই সউদি আরবে শিয়ারা নিগৃহীত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে ইয়েমেন যুদ্ধ। আইএস মনে করছে, তারা এই হামলার মাধ্যমে দেশটিতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা শিয়াদের প্রতি সুন্নিদের বিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে রাজতন্ত্রে আঘাত হানার চেষ্টা চালাচ্ছে। আইএস নেতা খলিফা ইব্রাহিম যার নাম আবু বকর আল-বাগদাদি যিনি প্রকাশ্যেই সউদি আরবের রাজতন্ত্রের পতন ঘটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি সউদির আইএস সদস্যদের বলেছিলেন, তোমাদের বাইরের দেশে হামলা করার প্রয়োজন নেই। নিজ দেশেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে হামলা চালাও। আইএস ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, দেশটিতে আন্ডারগ্রাউন্ডে অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে যাকে বিলায়েত অব দ্য নেজদ বলা হচ্ছে। সউদি পরিবার হামলার ঘটনার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন এবং আইএসের সব সেল ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। দেশটিতে সরকার সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও অনেকেই আইএসে যোগ দিয়ে ইরাক এবং সিরিয়ায় যাচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার এসব জেহাদিই আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে আসছে এবং সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগাচ্ছে।
এই বৈঠকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সহনশীলতা প্রদর্শনের উপর করার জন্য। বৈঠকে বিখ্যাত সাংবাদিক হাবব্বেব আল সামমারি বলেন, সন্ত্রাসকে প্রতিহত করতে হলে নীতিগতভাবে আইএস-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হবে। তিনি বলেন, আইএস-এর বিকল্প হিসেবে সংগঠন দাঁড় করাতে হবে। বৈঠকে আরো বলা হয়েছে, প্রথমে যেটি প্রয়োজন সেটা হলো, ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে শুরু হওয়া সন্ত্রাসী যুদ্ধকে থামিয়ে দেয়া। আরো বলা হয়েছে, আইএস জিহাদিরা যেসব প্রোগ্রাম তৈরি করছে তা প্রতিহত করতে হবে। তারা যে প্রচারণা চালায় সেখানে বহু নিষ্ঠুর দৃশ্য দেখানো হয়ে থাকে, তারা তাদের সন্ত্রাসের পক্ষে প্রচারণা চালায় সেই  জন্য আমাদের অন লাইন প্রচারে নামতে হবে যাতে তাদের কর্মকা-ের উপযুক্ত জবাব দেয়া যায়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলা যায়। এখানে সউদি আরবের বাদশাহি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা মৌলবাদ বিরোধী প্রচারে কাজ করে চলেছেন। আরো বলা হয়েছে, এর জন্য সহিঞ্চুতাকে উৎসাহিত করতে হবে সবাইকে।
আবদুল আজিজ সেন্টার নিষ্ঠুরতা ও আইএস প্রোপাকান্ডা থামানোর চেষ্টা করছে। আমরা সোস্যাল মিডিয়ায় কাজ করছি সন্ত্রাস বিরোধিতা মাথায় রেখে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণকে পক্ষে রাখা। জনগণের সঙ্গে থাকা। নিউ মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের পক্ষে আলি আল সেহেরাই এসব কথা জানিয়েছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, আমরা আইএস  প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে ইউ টিউব মিডিয়াকে সহজে ব্যবহার করতে পারি। আবদুল আজিজ সেন্টান থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, এখানে সউদি আরবের সুন্নি ও শিয়াদের নিয়ে এক হৃদ্যতাপূর্ণ  আলোচনা অনুষ্ঠান করা হবে। যার উদ্দেশ্য হলো, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে যে সব মতভেদ রয়েছে তা দূর করা। উল্লেখ্য, সউদি আরবের ১০ ভাগ মানুষ শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী।  এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উগ্রপন্থা মোকাবেলার প্রয়াস চালাচ্ছে সউদী আরব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ