Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তুলোধুনো হওয়ার আগে সংসদ ত্যাগ অর্থমন্ত্রীর

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম



নির্বাচনী বিরোধী বাজেট প্রত্যাহারের দাবি আওয়ামী লীগের এমপিদের
পঞ্চায়েত হাবিব :ব্যাংক আমানতের ওপর অতিরিক্ত আবগারী শুল্ক আরোপ ও ঢালাওভাবে ভ্যাট ধার্যের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটকে নির্বাচন বিরোধী বাজেট বলে অভিহিত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র এমপিরা। সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর ঘোষণার বিষয়েও প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন তারা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এবারের বাজেট নির্বাচন বান্ধব হওয়া উচিত ছিল জানিয়ে তারা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলানোর প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করায় অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। নিজ দলের সিনিয়র এমপিদের অব্যাহত বাক্যবাণে জর্জড়িত হয়ে একপর্যায়ে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক (১১ বার) বাজেট পেশকারী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অংশ নিয়ে বক্তৃতা শুরুর প্রথমেই অধিবেশন কক্ষে বসে থাকা অর্থমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথাবার্তায় সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন ভালোকথা। কিন্তু জনগণের কষ্ট আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করেন। আপনার কিছু কথা বার্তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। আপনি কম কথা বলেন। বয়স হয়ে গেছে কখন কি বলে ফেলেন।
বাজেটে সমস্যা থাকলে তা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস দিলেও অর্থমন্ত্রীর ভিন্ন সুরের সমালোচনা করেন দলের সভাপতিন্ডলীর এই সদস্য। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বিভ্রান্তির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি বললেন, একলাখ টাকা যার আছে সে সম্পদশালী। আবার চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা না বললেন-এটা কেমন হলো? আপনি অর্থমন্ত্রী, আপনার কাজ বাজেট পেশ করা। এই সংসদের ৩৫০ জন জনগণের প্রতিনিধি ঠিক করবেন জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে, আর কোনটা থাকবে না। একগুয়েমি সিস্টেম বন্ধ করেন, কথা কম বলেন।’
আবগারি শুল্ক আগের অবস্থায় রাখার দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক করেছেন জানা নেই। হল-মার্কের চার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এ টাকা কিছু নয়। তাহলে কেন সামান্য টাকার জন্য সারা দেশে মানুষের মধ্যে আক্ষেপ তৈরি করলেন। ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সরকারি দলের এই এমপি বলেন, অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেছেন গণহারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বছরে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট আহরণের নজির নেই। এটা যৌক্তিক নয়।
হানিফ বলেন, বাজেট নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় চলছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা নির্বাচনী বাজেট নয়। তাহলে মাননীয় অর্থমন্ত্রী কবে নির্বাচনী বাজেট দেবেন? তিনি বলেন, আগামী বাজেট কার্যকর হবে জুলাইয়ে। তখন বর্ষা শুরু হবে। সেপ্টেম্বরে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গেলে, অক্টোবরে নির্বচনের তফসিল। এবারই নির্বাচনমুখী বাজেট করা উচিত ছিল। বলা যায় অর্থমন্ত্রী এবার নির্বাচনবিরোধী বাজেট করেছেন। ব্যাংক খাতে লুটপাটের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংককে একহাজার কোটি টাকা মূলধন দেয়া হচ্ছে। কার টাকা কেন দিচ্ছেন? তারা দুর্নীতির জন্য লুটপাট করবে আর মূলধন দিতে হবে আমাদের? প্রয়োজনে এ ব্যাংকগুলোর বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করা হোক। সরকারি টাকা এভাবে লুটপাট করতে দেয়া যাবে না। এসময় হানিফ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও আদালতের সরকারি কৌসুঁলিদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান।  
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সামনে আমাদের নির্বাচন আসছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করে দিলে ভোট আসবে না। যাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে তারা যাতে নির্বাচন করতে পারে সেটা খেয়াল করতে হবে। ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক প্রত্যহারের দাবি করে তিনি বলেন, এটা মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার না কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এটা কমানো ঠিক হবে না। ১০ শতাংশ বাড়ালে খরচ হবে এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু উপকার পাবে লাখ লাখ মানুষ। এটা সিনিয়র সিটিজেনরা পান। তারা কোথাও হাত পাততে পারে না। বাজেটের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক শ্রেণির মানুষকে ভর্তুকি দেন। ঋণ খেলাপিদের বিশাল লিস্ট দিছেন। কই তাদেরতো ধরতে পারেন না। ব্যাংকের টাকা পাচার বন্ধ করতে পারছেন না। আর নিম্ন মধ্যবিত্তের ওপর কর চাপিয়ে দিচ্ছেন। এটার প্রতিবাদ করছি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, অর্থমন্ত্রী অনেক পরিশ্রম করেছেন। উনার সাথে এনবিআর ও মন্ত্রণালয় পরিশ্রম করেছে। বাজেট বাস্তবায়ন করতে গেলে দক্ষ জনশক্তি থাকা দরকার। খালি কর বাড়ালে হবে না। উপজেলা পর্যায়ে এনবিআরের কর্মকর্তা দেন। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল পূরণের জন্য আমাদের দক্ষ কর্মকর্তা দরকার। প্রায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রজেক্ট ঠিকমতো করতে পারে না। প্রপোজাল করতে পারে না। এসময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদ্যুতের উন্নতি হয়েছে ঠিকই, অনেক লাইন হয়েছে। কিন্তু রমজানের সময়, সেহরির সময় বিদ্যুৎ নেই। ১৪-১৫ বার যদি বিদ্যুৎ যায় তাহলে এনিয়ে আর কি বলার থাকতে পারে। এগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নিন। আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন- আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, বিএনএফের এসএম আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।



 

Show all comments
  • Selina ২০ জুন, ২০১৭, ৩:০২ এএম says : 0
    Tax ,vat ,duty ,rationalize .cut all excess .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ