Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যোগসাধনার সাথে মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক নেই -হেফাজতে ইসলাম

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ভারতীয় হাইকমিশনের বিশেষ উদ্যোগে আগামী ২১ জুন রোববার বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য যোগব্যায়ামের বিশ্বদিবস পালনের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী গতকালএক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, হিন্দু দর্শনের যোগসাধনার সাথে মুসলমানদের কোনো ঐতিহাসিক সম্পর্ক নেই এবং এটি মুসলমানদের ঈমান আকিদার বিরোধী। মুসলমান হয়েও যারা হিন্দুদের একান্ত ধর্মীয় যোগসাধনায় অংশগ্রহণ করবেন, তারা ঈমানহারা হয়ে যাবেন। হিন্দু দর্শনের ছয়টি প্রাচীনতম শাখার একটি হচ্ছে যোগ। ‘যোগ’ শব্দটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের ধ্যানপ্রণালীকেও নির্দেশ করে। হিন্দু দর্শনের নির্দেশিত বিশেষ ব্যয়াম ও শারীরিক কসরত এবং ধ্যান ও তপস্যার সংযোগে যোগচর্চা করা হয়। সুতরাং যোগসাধনা বা যোগদর্শন নিছক শারীরিক ব্যয়াম মাত্র নয়, বরং এর সাথে ধর্মীয়ভাবে হিন্দু দর্শনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যোগসাধনা সম্পর্কে বিভিন্ন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে, যেমন: উপনিষদ, ভগবতগীতা, বেদান্ত, শিব সংহিতা, বিভিন্ন তন্ত্রগ্রন্থ এবং যোগশাস্ত্রবিদ পতঞ্জলির ‘যোগসূত্র’ নামক সংকলনগ্রন্থ। আর ‘যোগাসন’ হচ্ছে হিন্দু দর্শনের একটি বিশেষ তপস্যার আসনভঙ্গি। সুতরাং আমরা মনে করি, এই যোগসাধনায় মুসলমানদের অংশগ্রহণ করা তাদের ঈমান-আকিদার হানি ঘটাবে। বরং মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই হচ্ছে সর্বোত্তম, যা ফরজ এবাদত এবং আধ্যাত্মিক, মনোসংযোগ, চিন্তন ও শারীরিক সব ক্ষেত্রেই উপকারী।        
তিনি বলেন, শরীরচর্চার জন্য আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণে জিমন্যাশিয়াম গড়ে উঠেছে এবং সেসবগুলোতে জিম করে তরুণ প্রজন্ম তাদের শরীর-স্বাস্থ্য সুস্থ-সবল রাখছে। এর সাথে ঈমান-আকিদার বিরোধ নেই। কিন্তু হিন্দু ধর্মের যোগশাস্ত্রকে ‘সার্বজনীন’ বলে মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় এবং সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা মনে করি, ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন মৌলবাদী দল বিজেপি হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে যোগশাস্ত্রকে ব্যবহার করছে। এমনকি ভারতের মুসলমানদের অভিযোগ, যোগ হিন্দু উপাসনার একটি অংশ, কিন্তু মোদি তা সবার ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন। তবে আমরা ভারতকে প্রকৃত বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবেই পেতে চাই, আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদীমূলক আচরণ আশা করি না। এই পবিত্র মাহে রমজান মাসে হিন্দুধর্মের যোগসাধনা নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনের এমন অনুষ্ঠানকে আমরা আমাদের জাতীয় ইসলামী মূল্যবোধ ও স্বাতন্ত্র্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে করছি না। আমরা চাই প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশ হিসেবে ভারত আমাদের নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
তিনি আরো বলেন, যোগসাধনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা নেই, তাই তাদের বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতাকে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহŸান জানাই এবং আপনারা ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে হতে যাওয়া এই তথাকথিত যোগব্যয়ামের বিশ্বদিবস পালন অনুষ্ঠানের প্রতিবাদ করুন। ঈমান-আকিদা রক্ষায় বাংলাদেশে যোগশাস্ত্রের প্রচারণার ভারতীয় উদ্যোগের প্রতিবাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায় এটি পালন করলে আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই, কারণ এটি তাদের একান্ত ধর্মীয় ব্যাপার। কিন্তু একে সার্বজনীন বলে মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদী উদ্যোগ আমরা মেনে নেবো না।   



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হেফাজতে ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ