Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সহায়ক সরকার নয় শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সরকারি দলের এমপিরা

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি’র নির্বাচনকালীণ সহায়ক সরকারের দাবির সমালোচনা করে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা বলেছেন, ওই দাবি উত্থাপন করে বিএনপি-জামায়াত জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু অসাংবিধানিক কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বিএনপি না আসলে তাদের মৃত্যু ঘটবে বলে তারা দাবি করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে এই আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের সদস্য শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, আলহাজ্জ বজলুল হক হারুন, একাব্বর হোসেন, ওয়াশিকা আয়েশা খান, মমতাজ বেগম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ও ঊষাতন তালুকদার এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগ দাবি করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, কেবিনেট বৈঠকে বাজেট অনুমোদন হয়। সব মন্ত্রীরা তো এই বাজেটের অংশ। মন্ত্রীরা চাইলে এর সমালোচনা করতে পারেন না। তিনি আরো বলেন, এই বাজেট শুধুই নেগেটিভ? পজেটিভ (ভাল) কিছু নেই? আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর সংসদে যে বাজেটটি পাস হবে সেটি হবে এ দেশের শ্রেষ্ঠ বাজেট। আর সহায়ক সরকার নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে বিএনপি না আসলে অনেকেই বলছেন তাদের অবস্থা হবে খুবই খারাপ।
ইফতার পার্টিতে প্রতিদিন বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়ার নানা মন্তব্যের সমালোচনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়া ইফতার পার্টিতে আমাদের বলেছেন জালেম সরকার। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ইফতার করেন, কিন্তু কোন বক্তব্য দেন না। খালেদা জিয়া বলেছেন শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নামটা যখন বলেন, তখন নামের আগে কোন বিশেষণ ব্যবহার করেন না। এর মানে হলো তাঁর (খালেদা জিয়া) মনের মধ্যে ক্রোধ, হিংসা, প্রতিহিংসা। এসব শুনতেও খারাপ লাগে। আমরাও চাইলে তাকে সেভাবে বলতে পারতাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যদি না আসেন তাহলে অনেকেই বলেছেন তাঁর (খালেদা জিয়া) দলের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। সেটা আমি বলতে চাই না।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবী নাকচ করে দিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ ঘোষণা দেওয়ার পর দেশে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর তখনই বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন নিয়ে তাদের পুরানো খেলায় মেতে উঠেছে। তারা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের বদলে এখন সহায়ক সরকারের কথা বলছেন, যার কোন ধরনের সাংবিধানিক বৈধতা নেই। তাই নির্বাচন হবে এবং সাংবিধানিক ভাবেই শেখ হাসিনার অধিনেই হবে। এবার যদি বিএনপি নির্বাচনে না করে তবে তরা তাদের জীবনের সর্বশেষ ভুলটি করবেন। আর নির্বাচন প্রতিরোধ, বেগম জিয়ার অবরোধের মত কথার ফানুসই থেকে যাবে। তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানান।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে তার পরিণতি কী হবে, অর্থমন্ত্রী জানেন না। এতে নিম্ন–মধ্যবিত্তদের ওপর আঘাত আসবে। তিনি আশা করেন, অর্থমন্ত্রী এটি পুনর্বিবেচনা করবেন এবং প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে এখানে হস্তক্ষেপ করবেন। ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ শুল্কের নাম বদলালে তা যথেষ্ট হবে না। প্রত্যাহার করতে হবে। ভ্যাটের আওতা না বাড়িয়ে সহজে আদায় করা যায় এমন করের ওপর বাজেটে জোর দিতে হবে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. ফখরুল ইমাম প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে খোদ সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, দেখা যাচ্ছে সরকারি দলের নেতারাই বাজেটের সমালোচনা করছেন। এ নিয়ে আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত। সরকারি দল কী বিরোধী দলের ভ‚মিকায় নামতে চাইছেন কিনা। সামনে আবার নির্বাচন আছে। বঙ্গোপসাগরের মাঝখান দিয়ে নৌকা চলছে। নৌকা ভেসে চলছে, তাতে আপনারা সবাই আছেন। আমার মনে হয়, যাঁরা নৌকায় ছিলেন তাঁরা আর সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বেড়াজালে আটকে থাকতে চাচ্ছেন না। এটাকে স্বাগত জানাই। অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনার সহকর্মীরা হয়তো আপনাকে পরিত্যাগ করেছেন। কেবিনেটে অনুমোদনের পর সংসদে যেসব বক্তৃতা হচ্ছে শুনতে ভাল লাগে। এটা ঠিক না। সাধারণ আলোচনায় এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক এমপি বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্যের স্প্রীড দেখলে মনে হয়, তাঁদের প্রস্তাবগুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন না অর্থমন্ত্রী। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, দেশের বর্তমান উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অথচ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমাদের এক কাপড়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। অথচ কানাডার ফেডারেল কোর্ট রায় দিয়েছে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল ছিল, আছে ও থাকবে। বিএনপি-জামায়াত অতীতে নির্বাচন বানচাল করার অনেক চেষ্টা করেছে। আমার ভয় হয়, তাদের যদি মোকাবেলা করতে না পারি, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি তাহলে হয়তো আমাদের আরো মূল্য দিতে হবে।



 

Show all comments
  • Nur-Muhammad ২২ জুন, ২০১৭, ৫:৩২ পিএম says : 0
    জনাব তোফায়েল, ক্ষমতা পেয়ে সব ভুলে গেলেন। এরশাদ বিরুধী আন্দোলনে ঢাঃ বিঃ ক্যান্পাসে অনেক আসছেন, আমরা এই আন্দোলনের কর্মী ছিলাম বিধায় আমাদের সাথে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে কত কথাই না বলছেন। সকলের মতামতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলো। সংবিধানে অন্তভূক্ত হলো। অতএব নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ই হলো সংবিধান সম্মত। ভোটারবিহীন সংসদ কতৃক নিরপেক্ষ সরকার বাতিল করা, জনগণ মানে না। অতএব এটা জনগণের জন্য সংবিধান সম্মত ও নয়। তাই জনগণ গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। ধন্যবাদ। সবায়কে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ