Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বস্তির বৃষ্টিতে ভরসা খুজছে ২৩ হাজার চাষি

সীতাকুন্ডে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রমা) থেকে : সীতাকুন্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান এখন আউশ ধানের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা তার কেটে যাচ্ছে ক্ষেতেই। এবারের আগাম বৃষ্টির সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে চান তিনি। তাই কোন গাফিলতি না করে চাষাবাদে মনযোগি এই কৃষক। এই আউশ নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। চাষাবাদ ভালো হলে সারাবছর আর চিন্তা থাকে না। তাই একটু বাড়তি পরিচর্যা তো করতেই হয়। তবে আতঙ্কও আছে। মোটামুটি বৃষ্টি আউশের চারা রোপনের জন্য উপযোগি হলেও অতি বৃষ্টি অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। ক্ষেতে ব্যস্ত সময় কাটানোর ফাঁকে ফাঁকে এ কথাগুলোই বলছিলেন মান্নান। আউশ চাষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই কৃষক আরো বলেন, আমরা সুদীর্ঘকাল ধরে আউশ চাষ করে আসছি। সচরাচর বৈশাখে তেমন একটা বৃষ্টির দেখা মেলে না। আর যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় বেশিরভাগ সময়েই চারা রোপনে দেরি হয়ে যায়। আর যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন বর্ষার কারণে টানা বৃষ্টি চলতে থাকে। এতে নতুন রোপন করা চারাগুলো ভেসে গিয়ে ডুবে গিয়ে দারুন ক্ষতি হয়ে যায়। ক্ষতি বাড়িয়ে দেয় পাহাড়ী ঢল। তাই বর্ষার এ ঢল কৃষকদের কাছে রীতিমত আতঙ্কের কারণ।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে তাকে ১০ কেজি আউশের নতুন প্রজাতি (আফ্রিকার নেরিকা) ধানের বীজ, সার অন্যান্য সামগ্রী বিনা মূল্যে কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়। তিনি মোট ১৪৪ শতক জমিতে বিভিন্ন রকম আউশের চারা রোপন করেছেন। তিনি বলেন, আরো কিছু বৃষ্টি হলে ভালো হয়। তবে অতি বৃষ্টি চাই না আমরা। টেরিয়াইল এ বøকের দায়িত্বে থাকা সীতাকুন্ড কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, যথাসময়ে বৃষ্টি পেয়ে গ্রামের কৃষকরা এখন কোমর বেঁধে আউশ রোপনে নেমে পড়েছে। সব কৃষকই এখন মাঠে সময়ে কাটাচ্ছেন। শুধু তার টেরিয়াইল বøকেই ৩৭২ হেক্টর জমিতে প্রায় ১হাজার কৃষক বিভিন্ন জাতের আউশের চারা রোপন করেছেন। শুধু টেরিয়াইল বøকেই নয়, আউশ রোপনে ব্যস্ত সমগ্র উপজেলার অন্তত ২৩ হাজার কৃষক। বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের নডালিয়া এলাকার কৃষক আখেরুজ্জামান বলেন, আউশ রোপনে তাদেরকে কৃষি অফিস থেকে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়। এবছরও বিনা মূল্যে ১০ কেজি উপশী জাতের ব্রী-ধান ৪৮ দেওয়া হয়েছে তাকে। এসব ধান ৩০শতক জমিতে রোপন করা হয়। এ ছাড়াও অন্যান্য প্রজাতির মিলিয়ে তিনি মোট ১৬০শতক জমিতে আউশ চাষ করেছেন। তিনি আরো বলেন, আউশ আমাদের অন্যতম প্রধান ফসল। এটি নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। কিন্তু প্রতিবছর আমরা পাহাড়ী ঢল ও জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ি। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা যথাযথ হলে আমরা বড় ধরণের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতাম। আর যদি মাঝারি রকমের বৃষ্টিপাত হয় তাহলে ফসল ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা বলেন, সীতাকুন্ডে অন্তত ৭ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৩ হাজার কৃষক আউশ ধান চাষ করেন। আমরা সবসময় কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহিত করে থাকি। চলতি মৌসুমের চৈত্র মাসে প্রনোদনা প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নের ১১শ’কৃষককে মাঝে উপশী জাতের বীজ ৫ কেজি, নেরিকা ১০ কেজি, ইউরিয়া সার ২০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি ও ডিএপি সার ১০ কেজি করে বিনা মূল্যে বিতরন করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্ত পরিচর্যার জন্য প্রত্যেককে ৮০০ টাকা হারে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আগের চেয়ে আরো বেশি ধান উৎপাদন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, আউশ আবাদ বৃদ্ধির জন্য চট্টগ্রামে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। যেখানে খালি জমি আছে সেখানে আউশ রোপনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার খুবই কৃষি বান্ধব জানিয়ে তিনি বলেন, এ সরকার কৃষির জন্য সহযোগিতা মূলক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা আর কোন সরকার নেয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ