Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুইস ব্যাংকের গোপন রহস্য

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 স্টাফ রিপোর্টার : সিনেমা, থ্রিলার উপন্যাসে কিংবা মিডিয়া বহুল প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে, সুইস ব্যাংকগুলোতে বেনামি বা অনামি (এনোনিমাস) অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। কিন্তু বাস্তবে এটি সত্য নয়। তারপরও কেন বিশ্বের ধনী এবং বিখ্যাত লোকজন তাদের টাকা রাখার জন্য সুইস ব্যাংক এত পছন্দ করেন? সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার কারণ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন করেছে। ওই প্রতিবেদনে সুইচ ব্যাংকে টাকা রাখার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়, গ্রাহকের গোপনীয়তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলোর সুনাম আছে। কোনো সুইস ব্যাংকে কে কত অর্থ জমা রেখেছে, সেই তথ্য সুইস ব্যাংক পারতপক্ষে ফাঁস করবে না। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, অ্যাসোসিয়েশন অব সুইস প্রাইভেট ব্যাংকার্স এর প্রধান মিশেল ডি রবার্ট কয়েক বছর আগে ব্যাখ্যা করছিলেন কিভাবে এই গোপনীয়তার নীতি কাজ করে। একজন ডাক্তার বা আইনজীবী যেভাবে তার রোগী বা মক্কেলের গোপনীয়তা বজায় রাখেন, এখানেও ব্যাপারটা তাই, বলছিলেন তিনি। সুইস ব্যাংকের নীতি হলো একজন সুইস ব্যাংকার তার গ্রাহকের কোনো তথ্য কাউকে দিতে বাধ্য নন, এটা রীতিমত নীতি এবং আইন বিরুদ্ধ। এ কারণেই সুইটজারল্যান্ড হয়ে উঠেছে বিশ্বের ব্যাংকিং সেবার এক বড় কেন্দ্র। তিনশোর উপরে ব্যাংক এবং আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি ব্যাংক হচ্ছে ক্রেডিট সুইস এবং ইউবিএস।

সিনেমা, থ্রিলার উপন্যাসে কিংবা মিডিয়া বহুল প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে, সুইস ব্যাংকগুলোতে বেনামি বা অনামি (এনোনিমাস) অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। কিন্তু বাস্তবে এটি সত্য নয়। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের সাইটে বলছে, অনামি অ্যাকাউন্ট বলে কিছু সুইটজারল্যান্ডে নেই। কোনো ব্যাংক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টটি হয়তো কেবল সংখ্যা দিয়েই চিহ্নিত করা থাকবে, কিন্তু এই গ্রাহকের আসল পরিচয় ব্যাংকের খুবই অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা অবশ্যই জানবেন। কিন্তু সুইস ব্যাংকগুলোর এই কঠোর গোপনীয়তার নীতি সা¤প্রতিক বছরগুলোতে অনেক শিথিল করতে হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাপের মুখে।
মূলত কর ফাঁকি দেয়া, কিংবা দুর্নীতি বা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাখার জন্যও অনেকে সুইস ব্যাংক বেছে নেয়। বিশ্বের অনেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা নামকরা তারকা সুইস ব্যাংকে তাদের অর্থ পাচার করেছেন, এমন খবর বিগত দশকগুলোতে বহু বার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এনিয়ে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সুইটজারল্যান্ডের ওপর চাপ বেড়েছে এরকম অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অনেকেই দাবি জানিয়েছে, সুইটজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোকে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। বাধ্য হয়ে তাতে নতি স্বীকার করতে হয়েছে তাদের।
সুইটজারল্যান্ড কীভাবে সারা দুনিয়ার ব্যাংকিং সেবার বড় কেন্দ্র হয়ে উঠলো তার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। বলা হয়ে থাকে, ১৯৩০ এর দশকে জার্মানিতে যখন ইহুদিরা নাৎসিদের শুদ্ধি অভিযানের মুখে পড়ে, তখন তাদের অর্থ গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখার মাধ্যমে সুইস ব্যাংকগুলোর এই ব্যবসার শুরু। তবে তারও আগে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তার রক্ষার আইন করে। ফ্রান্সের কয়েকজন রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ী তাদের বিপুল অর্থ সুইস ব্যাংকে রেখেছিলেন। সেই তথ্য ব্যাংক থেকে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। এরপর সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়।
এই গোপনীয়তা আইনের সুযোগে সুইটজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো ফুল ফেঁপে উঠে। তৃতীয় বিশ্বের দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে ইউরোপ-আমেরিকার কর ফাঁকি দেয়া বিত্তশালী ব্যবসায়ী, সবাই তাদের অর্থ গোপন রাখার জন্য বেছে নেন সুইস ব্যাংকগুলোকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ