Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তিস্তায় ভাঙনকবলিতদের আহাজারি ‘কাঁই আছেন বাহে হামাক বাঁচান’

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখাঁ এলাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে চলছে তিস্তা নদীর ভাঙন। ভয়াবহ ভাঙনে গত তিন দিনে প্রায় ৪৫টি বসতবাড়ি সড়ানো হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মন্দির, বাজারসহ প্রায় দেড়শ বাড়িঘর। ভাঙন কবলিতরা থাকার স্থান না পাওয়ায় আহাজারিতে ভাসছে আকাশ।
মুদি দোকানদার আব্দুর রহিম জানান, তিস্তায় আবাদ-কিস্তি, বাড়িঘর সউগ খায়া নিছে। লোকগুলার থাকপের জায়গা নাই। ‘কাঁই আছেন বাহে হামাক বাঁচান’। এই এলাকার রতি, সোলাগারী পশ্চিম মাথার বাসিন্দা আইজার রহমান (৬৫) ও হালিমা খাতুন (৪২) ৫ থেকে ৭ বার বাড়ি সরিয়েছেন। তবু নদী যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। বাড়িঘর নিয়ে কোথায় যাবেন এ চিন্তায় তারা অস্থির!
সরজমিন তৈয়বখাঁ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তিস্তার ভয়াবহ রুদ্র রুপ! উজানে গাবুরহালান, মাজা পাড়া, রতি মৌজা, তৈয়বখাঁ, সোমনারায়ণ, রতিদেব গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙন। তিস্তার মূল ¯্রােত এসব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন কবলিতরা নিরাপদ জায়গায় ঘরবাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছে। পরিবারের লোকজনসহ গৃহস্থালি জিনিসপত্র সড়াতে ব্যস্ত। ভাঙনের কবলে পড়েছে তৈয়বখাঁ জামে মসজিদ, বিদ্যানন্দ নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়, তৈয়বখাঁ সার্বজনিন মন্দির এবং তৈয়বখাঁ বাজারের প্রায় ৩৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
মসজিদের মেয়াজ্জেম আব্দুল হাই (৬৬) জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই মসজিদে আজান দিয়ে আসছি। কতজন এল-গেল কিন্তু কাজের কাজ কেউ করল না। এই বৃষ্টি-বাদলার দিনে সরকারিভাবে নদীর গভীরতার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যরে বাঁশ দিয়ে পাইলিং দিচ্ছে। এগুলা দিয়ে কিচ্ছু হবে না। শুকনা মৌসুমে স্থায়ী ভাঙনরোধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকার গরীব মানুষ আরো নি:স্ব হয়া গেল।
দিনমজুর আজিজুল ইসলাম ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য ঘর সরিয়ে স্কুলের প্রাঙ্গনে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বললেন, তৈয়বখাঁ বাজারের পাশে ৬টি বাড়ি, ৫টি দোকান এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। গত কয়েক দিনে নুরজামাল, সুরতজামাল, রফিকুল বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। নদীর ধারে অবস্থিত ঘরবাড়ি অনেকে সরাতে পারছে না জায়গার অভাবে। এঁদের মধ্যে দিনমজুর রেজাউল বলেন, ‘আমার বাড়ি-ঘর ভাঙি যাচ্ছে। ঘর তোলার জাগা নাই। কেউ জাগা দেয় না। যার বাড়ি যাই, কয় আমার জাগা নাই। এখন পরিবার নিয়া ঢাকা যাওয়া ছাড়া উপায় নাই। ’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভাঙন কবলিত তৈয়বখাঁর ২৫০ মিটার এলাকায় অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। পাইলিং ও জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে।
তৈয়বখাঁ বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ঢাকায় তদবির করে তৈয়বখাঁ বাজার রক্ষায় ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ এনেছে। দরপত্রও হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী ঠিকাদার এই কাজ ভাঙন প্রবণ তৈয়বখাঁ বাজারে না করে রতি মৌজার কাছে যেখানে ভাঙন কম সেখানে গিয়ে করছেন।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউনিয়নের সত্তুরভাগ এলাকায় ভাঙনে শতশত বাড়িঘর বিলিন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোন ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এবার তৈয়বখাঁ এলাকার হাট-বাজার, স্কুল, মসজিদ-মন্দিরসহ ঘরবাড়ি বিলিন হবার উপক্রম। কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। শুকনো মৌসুমে প্রটেকশনের ব্যবস্থা গ্রহন না করে বর্ষায় পাইলিং’র কাজ কতটুকু কাজে দিবে তা নিয়ে ভাঙন কবলিতদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। পাওয়া গেছে ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও গত বছর পাওয়া গেছে ৭ কোটি টাকা। এসব অর্থ দিয়ে জেলার ১০টি স্পটে কাজের জন্য দরপত্রের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিস্তা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ