Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চীন-মার্কিন সুসম্পর্কে টানাপড়েন

| প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গত এপ্রিলে ফ্লোরিডায় রিসোর্ট মার-এ-লাগোতে যুক্তরাষ্ট্র সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ‹খুবই, খুবই ভালো সম্পর্কের যে অভিব্যক্তি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, এর ১০০ দিন না যেতেই এতে ভাটা পড়েছে। চীন-মার্কিন এই সুসম্পর্কের ছেদ পড়েছে চীনের ব্যাংক, জাহাজ কোম্পানি, ব্যক্তির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং তাইওয়ানের সঙ্গে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির চুক্তিতে। নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন ওয়াশিংটন সফরের সময় এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসে। আর গত ২ জুলাই তো বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে টহল দিয়েছে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ডেস্ট্রয়ার ‹ইউএসএস স্টেথেম’। যাকে চীন অভিহিত করেছে ‘গুরুতর রাজনৈতিক ও সামরিক প্ররোচনা› হিসেবে। এর আগে, উত্তর কোরিয়ার অর্থ পাচারের অভিযোগে ড্যানডং ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা, পণ্য পাচারের অভিযাগে চীনের জাহাজ কোম্পানি ও দুই ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞায় ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। আবার নিজেদের ‹বিদ্রোহী এলাকা› দাবি করা তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির চুক্তিও রুষ্ট করেছে চীনকে। তাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ক্ষতি করেথ এমন ‹ভুল পদক্ষেপ বন্ধ› করার আহŸান জানিয়েছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‹যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিপরীত, যার সূচনা হয়েছিল ট্রাম্পের ফ্লোরিডা রিসোর্টে চীনা প্রেসিডেন্টের বন্ধুত্বপূর্ণ সাক্ষাতের সময়। জাতিসংঘ এরই মধ্যে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর কয়েক পর্যায়ে অবরোধ আরোপ করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, উত্তর কোরিয়াকে আর্থিক যন্ত্রণায় ফেলতে সবচেয়ে সক্ষম কেবল মাত্র চীন। পিয়ংইয়ংয়ের ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বেইজিংকে তাগিদ দিয়ে আসছিল। তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করলে আরও ভালো বাণিজ্য চুক্তির আশ্বাস জিনপিংকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু গত মাসের শুরুতে ট্রাম্প এক টুইটে বলেছিলেন, চীনের পদক্ষেপ ‹কাজ করছে না›। তাহলে কি চীনের ওপর চাপ বাড়াতেই এসব পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র? তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি, যেটা ট্রাম্প প্রশাসনের এমন প্রথম উদ্যোগ। যার ফলে তাইওয়ানকে নিজেদের সীমান্তে স্বশাসিত দ্বীপ বলে মনে করা চীন ক্রুদ্ধ হয়েছে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস এই সীদ্ধান্ত বাতিলের আহŸান জানিয়ে বলেছে, এই পদক্ষেপে চীন ক্ষুব্ধ হতেই পারে। এ ছাড়াও মানব পাচার এবং জোরপূর্বক শ্রমের জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্টের তালিকায় গত মাসের শেষের দিকে চীনকে স্থান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেটা বেইজিংয়ের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আর এসবের মাধ্যমে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কের এমন নৈরাশ্য নিঃসন্দেহে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের নতুন মেরুকরণই স্পষ্ট করেছে। চীনা বিশ্লেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের একতরফা সিদ্ধান্তকে অকার্যকর এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে মন্তব্য করেছেন। উত্তর কোরিয়ার ওপর অতিরিক্ত অবরোধ আরোপে চীনকে দোষারোপের কোনো সুযোগ নেই বলেও অভিমত তাদের। তারা বলেন, চীন এরই মধ্যে অনেক কিছু করেছে। আর তারা উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণও করে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার অর্থ পাচারের অভিযাগে চীনা ব্যাংকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির খবর এমন সময় এলো, যখন এই দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির দেশ আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরই তাদের বাণিজ্য সম্পর্কে সমতা আনতে প্রাথমিক পর্বের আলোচনা সম্পন্ন করতে যাবে। অথচ এই দুই পদক্ষেপের ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই চীন সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরুর মাংস আমদানির ওপর দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় গত ২৯ জুন বেইজিংয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন রাষ্ট্রদূত টেরি ব্র্যান্সট্যাড ওই আলোচনার ‹প্রাথমিক ফল› উদযাপন করেছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‹আমরা ১৪ বছর এর জন্য অপেক্ষা করেছি।› তার মতে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোই মার্কিন প্রেসিডেন্টের মূল অগ্রাধিকার এবং এটা একটা অন্যতম মাধ্যম (মাংস রপ্তানি), যার মাধ্যমে সেটা সম্ভব। চীনে মাংস রপ্তানি পুনরায় শুরুকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের নতুন সূচনা বলেও অভিহিত করেছিলেন তিনি। জার্মানিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে এই দুই দেশের প্রেসিডেন্টের বৈঠকেরও কথা রয়েছে। কিন্তু গত এপ্রিলে মার-এ-লাগোতে তাদের প্রথম বৈঠকের চেয়ে সেই সাক্ষাৎ যে শীতল হবে, এটা ধরে নেয়া যায় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সিএনএন, ফিনানশিয়াল টাইমস।
চীন ও ভারতের সীমান্ত বিরোধ দীর্ঘদিনের
যে কারণে নতুন বিরোধের সূচনা
চার সপ্তাহ যাবত ভারত ও চীনের মধ্যেকার সীমান্তে এক ধরনের উত্তেজনা চলছে। উভয় দেশের মাঝে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধও হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় বিরোধ এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং মাঝে-মধ্যেই সেটি মাথা চাড়া দেয়। চীন, ভুটান আর ভারতের সিকিম প্রদেশের সংযোগস্থলে একটি উপত্যকার ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে নতুন বিরোধের সূচনা। চীন চায় সেখানে একটি রাস্তা তৈরি করতে। কিন্তু যে জায়গাটিতে চীন রাস্তা তৈরি করতে চাইছে সেটি ভুটান ও চীনের মধ্যকার একটি বিরোধপূর্ণ এলাকা। সে উপত্যকাকে চীন এবং ভুটান-উভয় দেশই দাবী করে। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ভুটানের পক্ষে। ভারত মনে করে, চীন যদি এ রাস্তাটি তৈরি করে তাহলে কৌশলগতভাবে ভারত পিছিয়ে পড়বে। এ রাস্তাটির মাধ্যমে চীন এমন একটি জায়গায় পৌঁছে যাবে যেটি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। চীন এমন জায়গায় সড়ক নির্মাণ করতে চাইছে যার পাশেই ভারতের ২০ কিলোমিটার চওড়া একটি করিডোর আছে। এ করিডোরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো মূল ভারতের সাথে সংযোগ রক্ষা করে। উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে উভয় দেশ সীমান্তে তাদের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে এবং একটি মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক নির্মাণ না করার জন্য ভুটানের তরফ থেকে চীনকে আহবান জানানো হয়েছে। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ