Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

| প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ক্স ব্রহ্মপুত্র তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে, যমুনায় সবকটি পয়েন্টে বৃদ্ধি, সুরমা-কুশিয়ারায় হ্রাস-বৃদ্ধি, ৮টি নদ-নদী ১২ পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে, নদী ভাঙনে আতঙ্কিত মানুষ, দশ জেলা বন্যাকবলিত, উজানে চীন-ভারতে বর্ষণ ও ঢল আরো দু’তিন দিন অব্যাহত থাকার আশঙ্কা, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা
ইনকিলাব ডেস্ক : দেশের ৮টি নদ-নদী ১২ পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে দিয়ে বইছে। বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন জেলা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া মানুষের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন আতঙ্ক। বন্যা ও ভাঙনের ফলে বাস্তুচ্যূত হয়ে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে অনেকে। এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট :
শফিউল আলম চট্টগ্রাম থেকে জানান, দেশে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক আরও অবনতি ঘটেছে। গতকাল সর্ব-উত্তর জনপদের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র, অন্যতম নদী তিস্তা এবং ঘাগট এই তিনটি নদী একযোগে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপর অন্যতম বৃহৎ নদ যমুনার পানি সবকটি পয়েন্টেই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ক্রমেই তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহত্তর সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উভয় নদী তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমা উপর দিয়ে, তিনটিতে কিছুটা নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। দেশের মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সর্বশেষ ৮টি নদ-নদী ১২টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এখনও ঝুঁকি বা সতর্ক পর্যায়ে আছে আরো ৬টি পয়েন্টে বিভিন্ন নদ-নদী। এ অবস্থায় বর্তমানে দেশের দশটি জেলা সরাসরি বন্যাকবলিত রয়েছে। এর বাইরে দক্ষিণ-পূর্বের কক্সবাজার জেলায় এখনো পাহাড় ধস ও ঢল-বন্যার ধকল কাটেনি। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রহ্মপুত্রের উজানের অববাহিকায় অর্থাৎ চীন তিব্বত হিমালয় পাদদেশীয় এলাকাগুলোসহ ভারতে (মূলত অরুণাচল ও আসাম) অতিবর্ষণ ও ঢলের মাত্রা বেড়েছে। বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আরও দু’তিন দিন সেসব অঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রংপুরের উত্তরের জেলাগুলোসহ উজানের দিকে ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় অতিবর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি ক্রমশ বেড়ে গিয়ে গতকাল থেকে বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যায়। অথচ এ মুহূর্তের ভয়াল তিস্তা কিছুদিন পূর্বেও ¯্রােতহারা মরা খালের রূপ নেয়। গাইবান্ধায় ঘাগট নদীরও পানি বৃদ্ধির কারণও একই।
উজানের পানি নামার বেগ বেড়ে যাওয়ায় ভাটিতে বাংলাদেশে বন্যার আরও অবনতি ঘটছে। আর ভাটির দিকে পানির চাপ বেড়ে গিয়ে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে করে লাখ লাখ বন্যার্ত মানুষ পরিবার-পরিজন দিয়ে চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে। নদ-নদী সংলগ্ন আরও শহর-গ্রাম-জনপদে বন্যা বিস্তৃত হওয়ার শঙ্কা-উৎকণ্ঠায় পড়েছেন অগণিত মানুষ। বন্যার অবনতি ও বিস্তৃতির সাথে সাথে নদ-নদী তীরের জনপদে এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। এতে করে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকি। এ অবস্থায় দিশেহারা অগণিত মানুষ। এদিকে গতকাল বিকেলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও মোকাবিলার সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে, উজানভাগ থেকে পানির ধারা নেমে আসা অব্যাহত থাকায় গত ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও বৃদ্ধি পায়। এই নদ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ব্রহ্মপুত্র নদ নুনখাওয়া পয়েন্টে গতকাল আরও ৮ সেঃ মিঃ বাড়লেও বিপদসীমার ৬৩ সেমি নীচে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ফুঁসে উঠে এর আগে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই থাকাবস্থায় সর্ব-উত্তরের বিস্তীর্ণ জনপদ তলিয়ে যায়। এখন বিপদসীমার উপরে গিয়ে গতকাল থেকে ব্রহ্মপুত্রের বানের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, উজানে চীন তিব্বত ভারতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় অতিবর্ষণ ও ঢলের পূর্বাভাস রয়েছে। এরফলে ব্রহ্মপুত্র ও একই সঙ্গে যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায়ও পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। যদিও তা এখনও উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি।
গত ২৪-৩০ ঘণ্টায় যমুনা নদের পানি আরও বেড়ে গেছে। সর্বশেষ বিপদসীমার উপর দিয়ে যমুনার প্রবাহ ছিল বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৩৭ সেমি, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ২৫ সেমি, কাজীপুর পয়েন্টে ২৬ সেমি এবং সিরাজগঞ্জে আরও বেড়ে গিয়ে ৩৩ সেমি। তবে আরিচা পয়েন্টে যমুনা আরো ৪ সেমি বাড়লেও ৭৪ সেমি নীচে রয়েছে। উত্তরের নদী তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ২৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গাইবান্ধায় ঘাগট নদী গতকাল আরও ৮ সেমি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৮ সেমি উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। ঢাকা বিভাগের নদী ধরেশ্বরী টাঙ্গাইলের ঈশানঘাটে আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেমি উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।
আর দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর সিলেট বিভাগে সুরমা নদী কানাইঘাটে গত ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৪ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে সুরমা সিলেটে গতকাল আরও কিছুটা বাড়লেও ১৬ সেমি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা সুনামগঞ্জে কিছুটা বেড়ে ১৫ সেমি নীচে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর প্রবাহ হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে শেওলা পয়েন্টে ৬৮ এবং অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদী শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার আরও খুব সামান্য কমে গিয়ে ৫ সেমি নীচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। কংস নদী (নেত্রকোনায়) জারিয়াজঞ্জাইলে গতকাল বাড়ে ও কমে এবং সর্বশেষ বিপদসীমার ২৫ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বিশেষজ্ঞ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা-গঙ্গা, সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল একযোগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা এ মুহূর্তে উদ্বেগের ও তাৎপর্যপূর্ণ। ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। যমুনা নদের পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে থাকতে পারে। গঙ্গার এপারের ধারা পদ্মা নদীর পানির সমতল আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীর পানি আগামী ২৪ ঘন্টায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা কেন্দ্রের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পায় ৫৫টিতে। যা রোববার ছিল ৫১টি, শনিবার ছিল ৪৯টি। এরমধ্যে সর্বশেষ বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল নদ-নদী ১২টি পয়েন্টে। যা শনি ও রোববার ছিল ৯টি। পানির সমতল অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টি পয়েন্টে। আর হ্রাস পায় ২৫টিতে। তবে গত রোববার হ্রাস পায় ৩৩টি পয়েন্টে। এ অবস্থায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র ও সূচক ফুটে উঠে।
সর্বশেষ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ইনকিলাবকে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ গত ক’দিন বিপদসীমার খুব কাছাকাছি প্রায় স্থিতিশীল ছিল। তবে উজানের অববাহিকায় গত ২৪ ঘন্টায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে পানি নেমে আসা অব্যাহত রয়েছে। আর বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গতকাল বিপদসীমা অতিক্রম করে। বর্ষার মৌসুমি বায়ু ভারত থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সক্রিয়। এর প্রভাবে উজানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। আরও ২ থেকে ৩ দিন উজানের পানি আসা অব্যাহত থাকতে পারে। এতে করে আরও বাড়তে পারে ব্রহ্মপুত্রের পানি। তিনি জানান, ব্রহ্মপুত্রে পানি অব্যাহত বৃদ্ধির প্রভাবে এর পাশাপাশি যমুনা নদেও পানি আরো বৃদ্ধির আলামত দেখা যাচ্ছে। যমুনার ধারায় এভাবে আরও ২ থেকে ৩ দিন পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। আবার যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাটিতে থাকা টাঙ্গাইলে (ঢাকা বিভাগ তথা মধ্যাঞ্চল) ধলেশ্বরী নদীতে (এলাসিন পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেমি ঊর্ধ্বে) পানি বাড়তে পারে। আর উজানে গত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণের ফলে তিস্তা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে (ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ সেমি উপরে) প্রবাহিত হচ্ছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত বেশি হলে তিস্তায় পানি আরও বেড়ে যাবে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ১৩২ মিলিমিটার, পঞ্চগড় জেলায় ১৪৭ দশমিক ৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উজানে ও ভাটিতে যদি মৌসুমি বৃষ্টিপাত একযোগে বৃদ্ধি পায় তাহলে দেশে বন্যা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটতে পারে। নদ-নদী স্ফীত থাকা অবস্থায় আষাঢ়ের বাকি কয়েক দিনে টানা ভারী বর্ষণ হলে অর্থাৎ বৃষ্টিই শঙ্কার কারণ হতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তাসহ উল্লেখযোগ্য নদ-নদীসমূহ বিপদসীমা অতিক্রম করায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কে গতকাল বিকেলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পানিসম্পদ সচিব ড. জাফর আহমদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোসাদ্দেক হোসেনসহ শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। সভা সূত্রে জানা গেছে, নদ-নদীর উজানের অববাহিকায় চীন, হিমালয় পাদদেশসহ ভারতে এবার বর্ষণ বেড়ে গেছে। মৌসুমি বায়ু আগেভাগে এবং অধিক সক্রিয় রয়েছে। এ অবস্থায় অতিবর্ষণ হলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। এখন বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত এবং নীচে তবে ফুঁসে থাকা নদ-নদীর পানি বেড়ে যেতে পারে। তবে বর্ষণ স্তিমিত হয়ে আসলে পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হবে।
সর্বশেষ গতকাল দেশের ৫টি বিভাগের বন্যা কবলিত ১০টি জেলা হচ্ছে- উত্তর জনপদের রংপুর বিভাগের নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা। উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ। উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর ও নেত্রকোনা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের সিলেট ও মৌলভীবাজার।
ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও জোয়ারের পানির স্রোতে ক্ষতবিক্ষত হালদা পাড়ের রাস্তাঘাট
এম. বেলাল উদ্দিন রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে জানান, চট্টগ্রামের রাউজানে টানা চার দিনের ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও হালদার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির ¯্রােতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে হালদা পাড়ের উরকিরচর ইউনিয়নের রাস্তাঘাট। এরমধ্যে একটি সড়কে গাড়ী চলাচলও সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। এ ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ ১০/১২টি পিচ ঢালা সড়কের অনেকাংশ ভেঙে ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে এ ইউনিয়নের হাজার হাজার বাসীন্দাদের।
সিলেটে আবারো বাড়ছে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি, বন্যার আতঙ্ক
ফয়সাল আমীন জানান, সিলেটের আটটি উপজেলায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যার পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হলে গত রবিবার রাতে থেকে ওইসব উপজেলায় আবারও বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত এবং সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যে, গত তিনদিন থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি অনেকটা কমেছিল। তাই বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু গত রবিবার রাত থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি ফের অবনতি হয়েছে। এতে সিলেটবাসীর মধ্যে বন্যার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়াও মানুষের দুর্ভোগও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি : ব্রক্ষপুত্রনদের পানিবিপদ সীমার ওপরে
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে ধরলা, দুধকুমর, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে চর-দ্বীপচর এলাকায় আরও ১৫টি গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে গেছে। জেলার ৮ উপজেলায় প্রায় ২শ’ ৭৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে।। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বিপদ সীমার ২ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত কোন মানুষ এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ পায়নি। এসব মানুষরা শুকনো খাবার চায়। বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে টিউবয়েল গুলি তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কটে পড়েছে। ৬দিন থেকে নীচু এলাকার মানুষ পানি বন্দী থাকতে থাকতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। মানুষের পাশাপাশি গবাদী পশুগুলি চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। এদিকে বন্যায় ৬৭টি স্কুল পানিবন্দি হয়ে পড়ায় পাঠদান বিঘিœত হচ্ছে। চরে গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দেয়ায় স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে গবাদিপশু। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে নলকুপ তলিয়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুদের বন্যার পানি ডিঙিয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এছাড়াও সেনিটেশন কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে অচলাবস্তা। জেলায় ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
নীলফামারীতে ১৫টি গ্রাম প্ল¬াবিত
মোশফিকুর রহমান সৈকত নীলফামারী থেকে জানান, উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢল আর ভারী বর্ষণে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে নদী বেষ্ঠিত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছয়টি ও জলঢাকা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্ল¬াবিত হওয়ায় ১০ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি ¯¬ুইচ গেট খুলে রাখা হয়েছে।
গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩০ সে.মি. উপরে
মোহাঃ ইনামুল হক মাজেদী গঙ্গাচড়া (রংপুর) থেকে জানান, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় মৌসুমী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি বিপদ সীমার ৩০ সে.মি উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি ফসলি জমি ও বীজ তলা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ছালাপাক এলাকা এলাকার নদীভাঙনে দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।
ফুলছড়িতে নদী ভাঙনে ২ শতাধিক পরিবার বাস্তুহারা
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টে ব্যাপক নদী ভাঙনে ২ শতাধিক পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। ভাঙনের শিকার মানষগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংশ্লিষ্টরা।



 

Show all comments
  • jahangir ১১ জুলাই, ২০১৭, ১:৪১ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি তাদের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(0) Reply
  • Miah Muhammad Adel ১১ জুলাই, ২০১৭, ২:৫৪ এএম says : 0
    That's why the neighbor built the ring of dams around the Bangladesh border with her. Bangladesh cannot raise a voice against it. Had any of those two independent minded heroes be alive today, the neighbor would not dare to do it. Today's politicians give precedence to power over patriotism.
    Total Reply(0) Reply
  • Moznur Rahaman ১১ জুলাই, ২০১৭, ৯:২৭ এএম says : 0
    দাদার আসির্বাদ বোলে কথা।
    Total Reply(0) Reply
  • Khan Shan Lu ১১ জুলাই, ২০১৭, ৯:২৭ এএম says : 0
    ভারতের জন্যই বাংলাদেশের এমন বেহাল অবস্থা।
    Total Reply(0) Reply
  • S. Anwar ১১ জুলাই, ২০১৭, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    দাদার পায়ে এতো তেল মালিশ করলাম তবুওতো দুর্গতি গেলো না। হায়রে পোড়া কপাল.!!!
    Total Reply(0) Reply
  • মকলেছুর রহমান ১১ জুলাই, ২০১৭, ২:৩৭ পিএম says : 0
    সব আল্লাহর ইচ্ছা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ