Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কাতার সঙ্কট : রেক্স টিলারসন কি সমাধান করতে পারবেন

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল : গত ছয় মাস ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন পানি নাড়াচাড়া করছেন। মঙ্গলবার এ মার্কিন কূটনীতিক মধ্যপ্রাচ্যের শাটল কূটনীতির ঝড়ো সমুদ্রে তার প্রথম সফর শুরু করেন। তিনি তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয় হয়ে উঠেছে।
কাতারের সাথে তিক্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে সউদি আরব, ইউএই, বাহরাইন ও মিসর। এ সবগুলো দেশই মার্কিন নিরাপত্তা অংশীদার, ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
টিলারসনের কাজটি ধন্যবাদহীন। একটি সুনির্দিষ্ট সমাধানের বিরুদ্ধে তিনি দীর্ঘ সমস্যার মুখোমুখি, কিন্তু একটি অস্থায়ী সমাধানে পৌঁছার সম্ভাবনাও তার আছে।
টিলারসন যদি তার প্রয়োজনীয় ফলাফল পাওয়ার আশা করতে চান তাহলে তাকে নিন্মোক্ত পাঁচটি প্রশ্নের সঠিক জবাব পেতে হবেঃ
আমার প্রতি কি প্রেসিডেন্টের সমর্থন আছে?
যদি এর জবাব না হয় তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর করা উচিত হবে না এবং এখন পর্যন্ত এর জবাব স্পষ্ট নয়।
সংকটের শুরু থেকেই মনে হচ্ছে যে টিলারসন নিরপেক্ষভাবে মধ্যস্থতা করতে চান।
অন্যদিকে সউদি বাদশাহ ও যুবরাজে মুগ্ধ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি ভাবে সউদি পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর যদি একই পৃষ্ঠায় না থাকে তাহলে সাফল্য টিলারসনের নাগালের বাইরে রয়ে যাবে। ন্যূনতমভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত সউদি, কাতারি ও আমিরাতিদের ডেকে এটা নিশ্চিত করে জানানো যে তিনি টিলারসনকে একটি চুক্তিতে পৌঁছার ক্ষমতা দিয়েছেন এং তিনি চান যে তারা নমনীয় হবে। টিলারসনের মিশনের সময় প্রেসিডেন্টের অন্য যে কোনো বার্তা ক্ষতিকর হবে। সউদিরা যদি মনে করে যে তার নিজের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বদলে তাদের প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন রয়েছে তাহলে তারা নমনীয় হবে না।
এটা সঠিক সময় কিনা
এটা স্পষ্ট নয়। আদর্শ সমাধান হচ্ছে যদি পক্ষগুলো বা কোনো আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে তা হয়। এ পর্যন্ত, কুয়েতীরা মধ্যস্থতায় সফল হয়নি।
যদি কোনো আলোচনা শুরু হয় , মধ্যস্থতাকারীর সাফল্যের জন্য সময়কালটি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো পক্ষই জরুরি সমাধানের জন্য যথেষ্ট আগ্রহ বোধ করছে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে।
যদি সকল পক্ষের মধ্যে জরুরি প্রয়োজন বোধ না থাকে তাহলে টিলারসনের শিগগিরই দেশে ফিরবেন না অথবা সপ্তাহখানেক ধরে ঠক খেয়ে ও দু’পক্ষের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরবেন। নিশ্চিত সম্ভব যে টিলারসন এ সংকেত পেয়েছেন যে দু’পক্ষই সমঝোতা করতে আগ্রহী , কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেবে, এক অন্যকে নয়।
টিলারসনের কি কোনো সুবিধা আছে?
সম্ভবত বেশী নেই। সিনেট বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান বব ক্রোকার এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এ বিরোধের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উপসাগরে আমাদের অংশীদারদের কাছে অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে অগ্রসর হতে তিনি প্রস্তুত নন।
ট্রাম্প প্রশাসন কোনো একজনকে সংকোচনের শিকার করে উভয় দেশের সাথে তার সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ অঞ্চলে সামরিক অভিযানের জন্য কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি এক কথায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
সউদিদের বেলায় তাদের সাথে ট্রাম্পের মাখামাখির অর্থ তিনি তাদের প্রতি কঠোর হতে চান না। এতে টিলারসনের হাতে কয়েকটি মাত্র তাস থাকবে এবং আলোচনা দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
কাতারকে সাইজ করার ক্ষেত্রে আবেগ তাড়িত নয়া সউদি যুবরাজের বিরাট ঝুঁকি রয়েছে এবং তিনি সহজে কোনো সমঝোতায় যাবেন না। এর অর্থ এই যে টিলারসন যতক্ষণ না প্রকাশ্যে উভয়ের বা দু’পক্ষের নিন্দা করছেন, ততক্ষণ ঐকমত্যে পৌঁছার পথ হিসেবে তাদের রাজি করানোর চেষ্টার বদলে শক্তির প্রয়োগ দেখা কঠিন।
ওয়াশিংটন কি কোনো চুক্তির দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক?
কোনো চুক্তি যদি টেকসই করতে হয় তবে তা মনিটর করা ও বলবত করা প্রয়োজন। উপসাগরীয় দেশগুলোর চুক্তি পৌঁছা ও তা বাস্তবায়নে অক্ষমতার ইতিহাস আছে।
আসলে ২০১৪ সালে যে ইস্যুতে কাতারের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন বা হ্রাস করেছিল, এবারো সেই বিষয়ই টেবিলে রাখা হয়েছে। যারা তা করেছিল, সে সব দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের দোহায় ফিরতে নয় মাস লেগেছিল। দু’পক্ষই বিভিন্ন অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে যে সমঝোতা করেছিল তা কার্যকর করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু বিষয় মনিটর করতে হত, বিশেষ করে সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের বিষয়।
টিলারসন কি একটি চুক্তি করতে পারবেন?
তিনি একটি আংশিক বা অস্থায়ী চুক্তি করতে পারেন। সউদি/ইউএই-কাতারি বিরোধ দীর্ঘদিনের যা দু’টি বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে।
প্রথমটি হচ্ছে সউদি আরবের আরব উপসাগরের ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) প্রভু হওয়ার খায়েশ এবং কাতারকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেয়ার পাশাপাশি নিজের পছন্দ মত মিত্র যেমন ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুড বেছে নেয়ার ক্ষমতা না দিয়ে নিজের তাবে রাখা। সউদি, আমিরাতি ও মিসরীয়রা এ ধরনের অন্যান্য ইসলামী গ্রæপকে বড় হুমকি বলে মনে করে।
দ্বিতীয় হচ্ছে নিজস্ব সত্তা রক্ষায় কাতারের প্রচন্ড দৃঢ়তা যা তাার স্বাধীনতা ও নিজের মত চলার রীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কাতারের বিরুদ্ধে কিছু ক্ষোভ বৈধ এবং টিলারসন সম্ভবত তা নিরসন করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের অর্থ প্রদান মনিটর করতে পারে এবং এ ব্যাপারে উত্তেজনা হ্রাস করতে একটি প্যাকেজের মধ্যে ফেলতে পারে।
কিন্তু টিলারসন সংকট প্রশমনে যদি কোনো চুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেনও , তা সমস্যার সমাধান করবে না। সউদি আরব, বিশেষ করে যুবরাজের নেতৃত্বে মনে হয় কাতারকে একটি আধা সামন্ত রাষ্ট্রে পরিণত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং যদি তিনি পারেন তবে শাসক পরিবর্তনের রূপকার হবেন।
কাতার যদি এমনকি আল-জাজিরার অনুষ্ঠান কমাতে, সন্ত্রাসীদের অর্থ বন্ধ এবং অপর পক্ষের বন্ধু নয় এমন ইসলামপন্থীদের জায়গা দেয়া বন্ধ করতে রাজি হয়ও, তারা তাদের স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি ত্যাগ করবে না বাা ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না।
একটি ধন্যবাদহীন স্থানে টিলারসন থেমে যেতে পারেন। তিনি যদি তার প্রথম উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিগতকৃত কূটনৈতিক ভূমিকায় ব্যর্থ হন তাহলে মিডিয়ার সমালোচনার সম্মুখীন হবেন যেমন সউদির উপর খুব চাপ সষ্টি করলে তার বস করবেন। যদি তিনি সফল হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্থায়ী সমাধান টানতে পারে।
টিলারসন মনে হয় নিজে থেকেই তার এ মিশন শুরু করেছেন। আর ঝুঁকি প্রসুতির আমরা প্রশংসা করতে পারি। কিন্তু টিলারসন হয়ত প্রায়-আবিষ্কার করতে পারেন, যেমনটি লেবাননী ঐতিহাসিক কামাল সালিবি বলেছেন, বড় শক্তিরা ছোট গোত্রগুলোর বিষয়ে তাদের নিজের ঝুঁকিতেই অনধিকার চর্চা করে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ