Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সীতাকুন্ডে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত আরো ১৩ শিশু

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি পাহাড়ের ত্রিপুরা পাড়ায় অজ্ঞাত রোগ এখনও সনাক্ত হয়নি। নতুন করে রোগাক্রান্ত হয়েছে আরো ১৩ জন শিশু। গতকাল (শুক্রবার) তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এদের মধ্যে একজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগিও আছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫৮ শিশুর মধ্যে অর্ধেকর অবস্থা উন্নতির দিকে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে তাদেরকে পুষ্টিকর খাবারসহ আরো যত্ম নেওয়ার উদ্দেশ্যে এখনো হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গতকালও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা। এদিন ত্রিপুরাদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল করিম রাশেদ ইনকিলাবকে বলেন, ত্রিপুরা পাড়ায় প্রতিদিন যেমন নতুন করে রোগি পাওয়া যাচ্ছে তেমনি ইতিপূর্বে আক্রান্ত রোগি দ্রæত সুস্থও হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও ফৌজদারহাট সংযুক্ত সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫৮ জন শিশুর মধ্যে অর্ধেকই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। তবে তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহসহ আরো যতœ নিতে বাড়ি যেতে না দিয়ে এখনো হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। এছাড়া গতকাল শুক্রবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৩জন। এদের মধ্যে ১২ জন হালকা জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হলেও কোন ঝুঁকি না নিয়ে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া একজন রোগি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু এসময় তাকেও পাড়ায় রাখা ঠিক নয়, চিন্তা করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আরো জানান, ত্রিপুরা বাসিন্দাদের সর্বশেষ অবস্থা দেখতে গতকালও সেখানে এসে পৌঁছান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী। এদিন তিনি ত্রিপুরাদের সাথে কথা বলেন, তাদের অবস্থার খবরাখবর নেন এবং চিকিৎসা নিয়ে তাদের অভিমত শোনেন। এসময় সিভিল সার্জন সাংবাদিকদের বলেন, ত্রিপুরা শিশুদের চিকিৎসায় যা যা করা দরকার সরকারের নির্দেশে তারা সবই করছেন। আক্রান্ত শিশুদের প্রায় সবার উন্নতি বেশ লক্ষনীয়। নতুন করে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সমস্যাও তেমন গুরুতর নয়। তবুও তারা হালকা ভাবে না নিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এদের সবাইকে চিকিৎসার ঔষধ পত্রের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে। তিনিও আশা করছেন কয়েকদিনের মধ্যেই তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নিজ বাড়ি ফিরে আসবেন।
এদিকে গতকাল সকালে ত্রিপুরা পাড়ায় পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করেন সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূইয়া। তিনি জানান, প্রত্যেক পরিবারকে চাল, ডাল, আলু, পেয়াজ, তেল, ডিমসহ বিভিন্ন খাবার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ফৌজদারহাট হাসপাতালে রোগির চাপে গতকাল পানি সংকট সৃষ্টি হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে সেখানে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান ঐ এলাকা পরিদর্শনকালে ত্রিপুরাদের বিশুদ্ধ পানির উৎস সৃস্টির জন্য অন্তত ১০টি টিউবয়েল স্থাপন করার আশ্বাস দেন।
এছাড়া তাদের চাওয়া পাওয়া বিবেচনায় সাধ্যমত সহযোগিতা করছেন সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মুনীর হোসেনও। মুনীর হোসেন বলেন, আগেও ত্রিপুরা বাসিন্দাদের প্রয়োজনমত সহযোগিতা করতাম আমরা। এখন সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করছি। এদিকে সবার সন্মিলিত প্রচেষ্টায় ত্রিপুরা পাড়ায় এখনো রোগ থাকলেও তা আর বিপজ্জনক নয় জানিয়ে ডাঃ রাশেদ বলেন, সেখানে প্রথম কয়েকদিনে আমরা ঘটনা না জানার আগে যে ৯জন মারা গিয়েছিলো তার বাইরে আর কোন শিশুর প্রানহানি হয়নি। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আন্তরিকতায় সবাই নিরাপদে আছে। আইসিইউতে যে দু’জন শিশু ছিলো তাদেও অবস্থা ভালোর দিকে। আর এ কয়েকদিনে যা দেখা গেছে তাতে রোগটি যে ছোঁয়াছে নয় তাও স্পষ্ট হয়েছে। তাই এ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা থেকে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসলে আমরা এটি ঠিক কোন ভাইরাস ছিলো নিশ্চিত হওয়া যাবে। আর ত্রিপুরা পল্লীতে ইতিপূর্বে টিকা প্রদানসহ স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোন স্বাস্থ্য কর্মীর গাফিলতি ছিলো কিনা তা জানতে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রদান করে ৩ সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে যদি কোন স্বাস্থ্য কর্মীর গাফিলতির প্রমাণ মেলে তাহলে অবশ্যই তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোগ

১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ