Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিতেই ইসির রোডম্যাপ -মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিতেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার নীলনকশার অংশ। ইসির মাধ্যমেই সেই যাত্রা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে তা জাতির আশা-আকাক্সক্ষাকে উপেক্ষা করেছে। নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ ঘোষণার দুইদিন পর গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে রকিব মার্কা নির্বাচন কমিশন আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার সুরাহা হওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশনের দেওয়া রোডম্যাপ কোনো সুফল দেবে না।
নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সুযোগ
ব্যবহার করে তিনি সারা দেশে ঘুরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই রোডম্যাপটা কেনো? নির্বাচন করানোর জন্য। নির্বাচন করবে কারা, রাজনৈতিক দলগুলো তো। সেই রাজনৈতিক দলগুলো তো কাজ করতে পারছেন না, সভা-সমাবেশ করতে পারে না, ঘরোয়া মিটিং করতে পারে না। আমাদের কথা বাদ দিলাম, রব সাহেব (আ স ম আবদুর রব) তার বাসায় বরণ্যে কয়েকজন ব্যক্তিকে ডাকলেন, সেখানে পুলিশ বাঁধা দিলো। এটা কোন গণতন্ত্র, কোন নির্বাচন? কে নির্বাচন করবে?”
নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি- মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্যে রোডম্যাপ দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এটা প্রমাণিত হয়েছে সেই ইচ্ছাও তাদের নেই। তিনি জনগণকে আরো হতাশ করেছেন এই কথা বলে যে, বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। তার এই বক্তব্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যের প্রতিফলনই ঘটেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন,বিরোধী দলগুলোকে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয় না। সভা-সমাবেশ ও ঘরোয়া সভা করতে বাঁধা দেয়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, গুম, খুন, হত্যা এখন নিত্য দিনের ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন বলেন, এসব দেখার দায়িত্ব তাদের নেই। তখন সহজেই বুঝা যায়, এই নির্বাচন কমিশন আরেকটি রকীব মার্কা নির্বাচন কমিশনের পরিণত হতে চলেছে। সুতরাং এই ধারণা স্পষ্ট হয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন সকলের কাছে কোনো গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যোগ্য নয়।’ দেশে বর্তমানে ‘রাজনৈতিক ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে’ মন্তব্য করে এক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘সম্পূর্ণ নিরব’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি প্রস্তাাব শিগগিরই পেশ করা হবে বলেও তিনি জানান।
বিএনপি’র এই নেতা বলেন, দেশের সবাই বিশ্বাস করে এই সরকারের অধীনে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নজিরবিহীন নির্বাচনী তামাশা করে ক্ষমতায় এসেছে। তথাকথিত গঠিত সংসদে কোনো বিরোধীদল নেই। তাদের নৈতিক ভিত্তি নেই; তাই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আরেকটি নির্বাচন করতে চায়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন আরেকটি ‘রকিবমার্কা’ কমিশনে পরিণত হতে চলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। ইসির সংলাপে বিএনপি সাড়া দিবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সংলাপে সারা দেয়া অনেক পরের কথা। বিএনপির প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশন বাস্তবতা উপলব্ধি করে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিবেন। সরকারের কাছে আমরা আবারো বলছি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটা জায়গায় পৌঁছানোর জন্য। যা বাংলাদেশকে শুধু রাজনৈতিক সংকটকে নিরসন করবে না, বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আলোচনায় বসুন। এভাবে একতরফা, একগুয়েমি অবস্থানে থেকে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, মানুষের ক্ষতি হচ্ছে, গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের কাতারে এসে দাঁড়ান, জনগণের চাহিদা পুরণ করুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকারের কোনো নৈতিক বৈধ্যতা নেই। আজকে তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই অনুগত নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে সেই লক্ষ্যেই তারা এগিয়ে চলেছে। বর্তমান যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের রোডম্যাপ সমস্যার করতে পারবে না, উপরন্তু আরো ঘণীভূত করবে। আমরা নির্বাচন চাই, আমরা একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাই। সেই কারণে আমরা একটি সহায়ক সরকারের কথা বলেছি। যে সহায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সকল কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন সম্ভব নয় ক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, রাজনৈতিক ইস্যু, এটাকে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হয়। এখানে সংবিধানের কথা বলে লাভ নেই। জনগণের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়। সংবিধান জনস্বার্থের উর্ধ্বে হতে পারে না। তিনি বলেন, অতীতে যত সমঝোতা আমরা দেখেছি, যেমন ১৯৯১ সালে যে নির্বাচনটা হলো। সেই নির্বাচনে কী লেখা ছিলো যে, একজন প্রধান বিচারপতি তার অফিস থেকে, তিনি তার পদে থেকে উপরাষ্ট্রপতি হবেন। তারপরে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হবেন- এটা কী লেখা ছিলো? সুতরাং পুরো বিষয়টা একটা পলিটিক্যাল ক্রাসিস। এটাকে রাজনৈতিকভাবে একটা সমাধানে আসতে হবে। তারপরে প্রশ্ন উঠবে যে, সংবিধান কতটুকু থাকবে, কতটুকু থাকবে না, সংবিধান সংশোধন করতে হবে কি হবে না। এটা একটি রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করবে।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের কি ভূমিকা পালন করবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে, সহায়ক সরকারের ব্যাপারে সমঝোতার করার আগে রোডম্যাপ দিয়ে অগ্রসর হয়ে যাওয়াটা এরমধ্যে আমরা মনে করছি এখানে একটা ষড়যন্ত্র আছে। সরকারের যে নীল নকশা, তার দিকে নির্বাচন কমিশন অগ্রসর হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। রোডম্যাপ ঘোষণার দিন থেকে সব দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে থেকে হবে বলেও দাবি করেন তিনি। সরকার যা ইচ্ছা তাই করবেন, নির্বাচন কমিশন কিছু করবেন না-এটা হতে পারে না। আমরা(বিরোধী দল) তফসিল ঘোষণার পরে প্রচারণা শুরু করতে পারবো- এর থেকে নির্বাচনে বড় অসমতল ভূমি আর হতে পারে না। যদি সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হয়, যেদিন রোডম্যাপ ঘোষণা হয়েছে, সেদিন থেকেই সব দলের সমান অধিকার থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Rahman Sadman ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১১:৪৪ এএম says : 0
    প্রয়োজনে জাতিসংঘের আন্ডারে নির্বাচন দিতে হবে।সব দায় দায়িত্ব থাকবে জাতিসংঘের নিকট।প্রসাশনে যারা ইতি মধ্যে বিতর্কিত তারা কোন দায়িত্বে থাকবে না।এবং জাতিসংঘের যে আর্মি ইউনিট আছে তারা পরিচালনা করবে নির্বাচন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ