Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কতদিন বাঁচবেন আল্লামা শফী

প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৭, ৮:০২ পিএম | আপডেট : ৯:৪১ পিএম, ২৯ জুলাই, ২০১৭

রাজনৈতিক ভাষ্যকার : আল্লামা আহমদ শফী কতদিন বাঁচবেন সে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে। এখানে আমরা তাঁর দৈহিক মৃত্যুর কথা বলতে চাইছিনা। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ হায়াত দান করুন। আমরা বলছি, তাঁর আদর্শিক মৃত্যুর কথা। যেমন উর্দু কবিতায় আছে, ইমাম হোসাইনের শাহাদাত মূলত এজিদেরই মৃত্যু। একেকটি কারবালা পিছনে ফেলেই ইসলাম জিন্দা হয়। যদিও এজিদের ইচ্ছায় শহীদ হয়েছেন ইমাম হোসাইন রা.। এজিদ বেঁচে থেকে রাজা হয়েছে তথাপি প্রকৃত অর্থে, এটিই ছিল এজিদের মরণ। যুগে যুগে বাতিলের বিরুদ্ধে ঈমানী আন্দোলনে দেখা গেছে সত্যের পতাকাবাহী যোদ্ধারা নির্যাতিত ও নিহত হয়েছেন কিন্তু পরাজয় মেনে নেননি। ধ্বংস হয়ে গেছেন কিন্তু আদর্শচ্যুত হননি। জান মাল ইজ্জত হারিয়েছেন কিন্তু বাতিলের সামনে মাথানত করেননি। ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছেন কিন্তু আপস করেননি। জালিমরা জয়ী হয়েছে, রাজত্ব করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তাদের গৌরব ধূলায় মিশে গেছে। অপর দিকে সত্যপন্থীরা ইতিহাসের উচ্চ শিখরে, গৌরবের আসন নিয়ে দুনিয়ায় আলোচিত হয়েছেন আর যুগে যুগে আদর্শের সৈনিকদের জন্য তাঁরা চিরদিন হয়ে আছেন প্রেরণার বাতিঘর।
ইসলামের ইতিহাসে হযরত সিদ্দীকে আকবর রা., হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ, হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের, ইমামে আজম আবু হানীফা, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, মুজাদ্দিদে আলফে সানি আহমদ সরহিন্দী, শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান রহ.সহ হাজারো মনীষীর সংগ্রামী জীবন, জেল, জুলুম, শহীদী মৃত্যু ইত্যাদি থেকে মুসলমানরা কী শিক্ষা লাভ করেন? হাজ্জাজের নির্মম নির্যাতন ও জল্লাদের তরবারির আঘাতের মুখে সাঈদ ইবনে জুবায়েরের ভ‚মিকা কী ছিল? গভর্নর ইবনে হোবায়রার চাবুক আর কারাগারে জোরপূর্বক বিষপানে শহীদ করার মুহূর্তে কী ভ‚মিকা ছিল ইমাম আবু হানীফার? খলিফা মু‘তাসিমের কোড়ার আঘাত আর অবর্ণনীয় জুলুমের মুখে কেমন ছিল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের সাহস? মোঘল স¤্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মুজাদ্দিদ আহমদ সরহিন্দীর আপসহীন সংগ্রামের কথা আলেমসমাজের চেয়ে কে বেশি জানে? শায়খুল হিন্দের কষ্টসাধনার জীবন তো আজ সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য প্রেরণা। আল্লামা শফী তো এদেরই উত্তরসূরি। এদেরই আদর্শের পতাকাবাহী। তাহলে তাঁর মৃত্যু হবে কেন? দৈহিক মৃত্যু হওয়া সত্তে¡ও যেহেতু তাঁর পূর্বসূরিরা আদর্শিকভাবে চিরঅমর হয়ে আছেন তাহলে তো আল্লামা শফী ও তাঁর মতো আলেমদেরও বেঁচে থাকারই কথা। পাঠক হয়ত ‘আল্লামা শফী কতদিন বেঁচে থাকবেন’ এ জিজ্ঞাসার জবাব ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন।
ব্যক্তি আর আল্লামা শফী বাংলাদেশের দশজন আলেমের মতোই একজন ব্যক্তি। কমবেশি ৯৭ বছর (মতান্তরে ৮৭ বছর) দুনিয়ায় বেঁচে আছেন এমন মানুষও বাংলাদেশে আরো আছেন। হাটহাজারি মাদরাসার প্রতিষ্ঠা থেকে আল্লামা শফীর পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেক মুহতামিমই (এখন চালু হয়েছে ‘মহাপরিচালক’) ছিলেন তাঁর চেয়ে অধিক যোগ্য, শিক্ষাদানে দক্ষ ও সর্বজনমান্য বুযুর্গ। হাটহাজারির প্রতিষ্ঠা ও এর প্রায় ১২০ বছরের অবদান ছিল হাকিমুল উম্মত হযরত থানভী রহ.-এর ফয়েজ ও বরকতের ধারা। মুহতামিমদের মধ্যে কেবল আল্লামা শফীই হলেন শায়খুল ইসলাম হযরত মাদানী রহ.-এর অনুসারী। ব্যক্তি আল্লামা শফীর বয়স বা মুহতামিম আল্লামা শফীর বয়স হয়ত ৯০ এর বেশি। কিন্তু দেশব্যাপী পরিচিত তওহীদী জনতার ধর্মীয় রাহবার আল্লামা আহমদ শফীর বয়স এখনও ১০ বছর হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে নাস্তিক মুরতাদদের আকস্মিক উত্থান এবং আল্লাহ, রাসূল, আহলে বাইত ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি একশ্রেণির বøগারের সীমাহীন বিষোদগারের ফলে সৃষ্ট আন্দোলনের পুরোভাগে থাকায় নতুন আল্লামা শফীর জন্ম। যাকে কিছুদিন আগেও দেশের কওমী শিক্ষার্থী, আলেমসমাজ ও তাদের সীমিত ভক্ত অভিভাবকরা ছাড়া আর কেউ চিনত না। তিনি জনআকাক্সক্ষার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে তুলে ধরায় এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হন। নিজেকে নিজে ধ্বংস করে না ফেললে যার মৃত্যু হবে না। ‘ব্যক্তি’ আহমদ শফীর মৃত্যু হলেও ‘ব্যক্তিত্ব’ আহমদ শফী অমর হয়ে থাকবেন। ৯৭ বছরের আহমদ শফীর চেয়ে ৭ বছরের নতুন আহমদ শফীর মূল্য, গুরুত্ব ও শক্তি শতগুণ বেশি। এটাই ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের পার্থক্য।
এখনও আমরা বাংলাদেশের তওহীদী জনতার মুখে মুফতী ফজলুল হক আমিনীর নাম শুনতে পাই। তাঁর সংগঠন এখনও এদেশে রয়ে গেছে। দেশের নানা জায়গায় আছেন ছাত্র ভক্ত ও সহকর্মীরা। সর্বস্তরের আলেম ও ধর্মপ্রাণ জনগণ তাঁর স্পষ্টবাদিতা, ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থে সোচ্চারকণ্ঠ এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে আধিপত্যবাদবিরোধী হুংকারকে পছন্দ করেন। মুফতী আমিনীর মৃত্যুর পর মানুষ তাঁর শূন্যস্থান পূরণ হবে না বলেও মন্তব্য করে এবং খুব হতাশ হয়ে যায়। বহু জুলুম নির্যাতন ও চাপের মুখেও মুফতী আমিনী একরকম তাঁর নীতি আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য নিয়েই দুনিয়া থেকে বিদায় হন। তাঁর জানাজায় আবেগ উদ্বেল লাখো মানুষের ঢল থেকে ধারণা করা যায় যে, তিনি কেমন জনপ্রিয়তা নিয়ে বিদায় হতে পেরেছিলেন এবং এ দেশের মানুষ আসলে আলেমদের কাছে কেমন নীতি, আদর্শ, ভাষা, বক্তব্য ও ভ‚মিকা আশা করে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ২০১৩-এর নাস্তিক মুরতাদবিরোধী আন্দোলন মুফতী আমিনী বেঁচে থাকলে তাঁর ডাকেই সংগঠিত হত। কিন্তু তিনি না থাকায় ও তাঁর অবর্তমানে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যক্তিত্ব না পাওয়ায় যে শূন্যতা বিরাজ করছিল তা পূরণ করে হেফাজতে ইসলাম। এটি চট্টগ্রামে কিছু আলেম-ওলামার হাতে গঠিত হয়। অনেকের মনেই ভাবনাটি আসে; তবে মাওলানা আবদুল মালেক হালিম চিন্তাটি লঞ্চ করেন, আল্লামা সুলতান যওক নদভী নামকরণ করেন, মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী কর্মনীতি প্রস্তাব করেন, বড়দের নির্দেশে মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী মিডিয়ায় প্রথম বক্তব্য দেন, আল্লামা আহমদ শফী আমির ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মহাসচিব মনোনীত হন, শুরা ও আমেলা গঠিত হয় ইত্যাদি। এক পর্যায়ে আল্লামা যওক চলে যেতে বাধ্য হন। আল্লামা তৈয়ব ও আল্লামা বোখারী শুরু থেকেই এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন বলে দূরে সরে থাকেন। দেশের সব আলেম সময়ের নাজুকতায় হেফাজতের ডাকে সাড়া দেন। আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদসহ অল্প সংখ্যক যারা দূরে সরে ছিলেন তারা ছাড়া দেশের আলেমসমাজ নানা কারণেই আল্লামা শফীর প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। এক. তিনি হাটহাজারির মুহতামিম দুই. তিনি বেফাকুল মাদারিসের সভাপতি তিন. তিনি একজন নবতিপর বুযুর্গ ব্যক্তি।
শতাব্দীর অন্যতম গণজাগরণ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের এই উত্থান বা ঐতিহাসিক ভ‚মিকা কঠিন বিতর্কিত হওয়ার পেছনে কে বা কারা দায়ী তা হেফাজত নেতৃবৃন্দ খুঁজে বের করেননি। হেফাজত তার শুরুর সময়কার প্রভাব ও জনপ্রিয়তা কেন ধরে রাখতে পারল না এ নিয়েও কোন গবেষণা হেফাজত নেতৃবৃন্দ করেছেন বলে জানা যায়নি। তবে যেসব কারণে আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ নিন্দিত ছিলেন হেফাজতও শেষ পর্যন্ত সেসব নীতি আদর্শকে প্রশ্রয় দিয়েছে। যে সমস্যার কারণে আল্লামা সুলতান যওক নদভী, আল্লামা বোখারী তরুণদের সমালোচনার মুখে পড়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েন সেসব সমস্যাই শেষ পর্যন্ত হেফাজতের কেন্দ্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে। যা বর্তমানে বাংলাদেশের তওহীদী জনতার জন্য ইতিহাসের সেরা দুঃখজনক বিষয়।
একটি দীনি আন্দোলন একদিনে সৃষ্টি হয় না। শত শত বছরের কাজের ধারা ¯্রােতস্বীনী নদীর মতো তরঙ্গায়িত হয় ইতিহাসের বাঁকে। অন্তত দেড় দু’শ বছরের আধুনিক ইসলামী আন্দোলনের ফসল এই হেফাজতে ইসলাম। অরাজনৈতিক অহিংস ঈমানী আন্দোলন। আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ ও তওহীদী জনতার আন্দোলন। কিন্তু এর নেতৃত্ব ও সংগঠন কখনোই এর বিশালত্ব দায়িত্ব ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। এতবড় একটি আন্দোলন কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে একান্তই ব্যক্তিনির্ভর ব্যক্তিকেন্দ্রিক। শুরা আমেলা বা উপদেষ্টা পরিষদের কোন কার্যকর ভ‚মিকা রাখার সুযোগ নেই। অরাজনৈতিক এ সংগঠনের মূল চালিকা শক্তিই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা অনেকেই তাদের কাজে-কর্মে অরাজনৈতিক চরিত্র কঠোরভাবে ধরে রাখতে পারেননি। যে জন্য হেফাজতের ৬ এপ্রিল ’১৩ ও ৫ মে ’১৩-এর বড় দুটি কর্মসূচিতে নানামুখী রাজনীতির প্রভাব বা রশি টানাটানি ছিল স্পষ্ট এবং ৫ মে পরবর্তী হেফাজতের অন্তর্নিহিত চরম বিপর্যয় দশার জন্যও এ রাজনৈতিক বিষবাষ্পই দায়ী। নেতারা যতই রাখঢাক করেন না কেন হেফাজতের স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রতিষ্ঠালগ্নের নেতৃবর্গ, সারাদেশে হেফাজতের বড় বড় শীর্ষ ব্যক্তি, ত্যাগী সাহসী আলেম-ওলামা, ছাত্র, তরুণ, আমজনতার চোখের ভাষা পড়লে বোঝা যায় তারা কতটা আশাহত। তাদের অনুভ‚তি ও আবেগ কতটা রক্তাক্ত।
হেফাজতে ইসলাম তার গুটিকয়েক আদর্শহীন নেতার কারণে বর্তমানে একটি অবমাননাকর অবস্থায় আছে। রাজনৈতিক শক্তি ও সরকারী মেশিনারি অন্তত যে ভাষায় হেফাজতকে স্মরণ করে থাকে। যেমন বিপ্লবী কণ্ঠস্বর মুফতী আমিনীর শক্তিটি এখন পরিণত হয়েছে বাজে লোকেদের খেলার পুতুলে। দেশী বিদেশী প্ররোচকদের দেখানো ভয়ভীতি, লোভ টোপ ইত্যাদিকে উপেক্ষা করে আদর্শের জন্য লড়াই করার মতো চরিত্র, সাহস, ধৈর্য, শিক্ষা, সাধনা ও আধ্যাত্মিক দীক্ষা না থাকায় এসব নেতা অতীত মুরব্বীদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বর্তমানে নানামুখী ক্রীড়নকদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। কারামুক্তি, মামলার হয়রানিমুক্তি, দু’একটি আসন ও নগদ টাকার লোভে অপমানজনক জীবনের পাশাপাশি তাদের কেউ কেউ এখন দেশী বিদেশী প্ররোচকদের কথায় রীতিমতো কানধরে ওঠবস করার পর্যায়ে চলে গেছে। সামান্য লোভের বিনিময়ে আজ তারা কেনা গোলামের ভ‚মিকায়। এমনকি ঈমান ইসলাম ও ধর্মীয় নীতি-আদর্শবিরোধী বক্তব্য দিতেও তারা এখন বাধ্য। যার বিস্তারিত তাদের ভ‚মিকা ও আচরণেই জাতি আগামী দিনে জানতে পারবে বলে বিশ্লেষক মহলের ধারণা। বিশেষ করে, অরাজনৈতিক এ সংগঠনের বিদেশ-কানেকশন, কোন কোন নেতার ভিনদেশী দূতাবাসে যাতায়াত, বিদেশ ভ্রমণ, টাকা-পয়সা লেনদেন ইত্যাদি যখন জনসমক্ষে আসবে।
হেফাজতের শীর্ষ মুরব্বীরা যদি এই মুহূর্তে সচেতন না হন, দায়ী ব্যক্তিদের সংশোধন না করেন তাহলে ‘মৃত্যুর ভয় ও দুনিয়ার লোভ’ নামক ক্যান্সার তাদের খেয়ে ফেলবে। জনগণের বিশ্বাস আস্থা ও শ্রদ্ধা থেকে তো বঞ্চিত হবেনই পরকালেও তারা ‘ওলামায়ে সু’ ও ‘দীন ধ্বংসকারী তস্কর’ আখ্যায়িত হবেন। দুষ্ট অনুসারী ও আপনজনদের পাপের কারণে তখন আক্ষরিক অর্থেই আল্লামা শফীর মৃত্যু ঘটবে। একশ্রেণির ভক্ত আবার গভীর সম্পর্কের দোহাই দিয়ে হাটহাজারি মাদরাসা, বেফাক ও হেফাজতকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে নানা কায়দায় জুড়ে বসার পাঁয়তারা করছে, নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে, স্বার্থচিন্তা ও সুযোগ সুবিধা তাদের অন্ধ করে রেখেছে, এসব দুর্বৃত্ত যদি বিনা বাধায় তাদের দুষ্কর্ম চালিয়েই যেতে থাকে তাহলে হুজুরের পক্ষে আর অমর হয়ে থাকা সম্ভব নয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এসব পাপিষ্ঠকে সরিয়ে দিয়ে অতীত মুরব্বীদের মতো নির্লোভ নিষ্ঠাবান সৎ ও সাহসী আলেমদের দিয়ে দীনের খিদমত ও হেফাজত করাবেন। আল্লাহ যখন কাউকে নিজে ভালোবাসেন তখন মানুষের মধ্যেও তার ভালোবাসা তৈরি করে দেন। যখন কারো নাম কেটে দেন তখন আর কেউ তাকে ভালোবাসে না। ঘৃণা করে, ধিক্কার দেয়। গায়ের জোরে সবই করা যায় কিন্তু আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। দীনের কাজে নেমে দু’নম্বরী করলে তার অভিশাপ থেকে বাঁচার উপায় থাকে না।
তুরস্কের নবজাগরণের দোহাই দিয়ে বিশ্বব্যাপী কত বিশাল দীনি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন গুলেন। কিন্তু দেশ ও জাতির মূল শক্তির সাথে সংযুক্ত না থেকে পরাশক্তির ক্রীড়নক হওয়ায় আজ তার কী অবস্থা। পাকিস্তানের পীর ড. তাহিরুল কাদেরী বহুমুখী আধুনিক ও দীনি আন্দোলনের ফলে ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। সর্বশেষ রাজধানীতে নওয়াজবিরোধী দীর্ঘ কর্মসূচিতে ইমরান খানের সাথে তিনিও হাজার হাজার ভক্ত কর্মী নিয়ে যোগ দেন। কিন্তু তার পশ্চিমা যোগাযোগ প্রকাশ হয়ে পড়ায় ধর্মপ্রাণ জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তিনি আগের জনপ্রিয়তা হারিয়ে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েন। নিরেট ইসলামী ইস্যুর জন্য জন্ম নেওয়া হেফাজতে ইসলাম যতদিন শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য সাহস ও কৌশলের সাথে সংগ্রাম করে যাবে, অহিংস দাওয়াত ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে, ততদিনই এর জনপ্রিয়তা আর নেতাদের সম্মান ও কদর থাকবে। কোন দেশের এজেন্সি নিলে, রাজনৈতিক শক্তির দালালি করলে বা দীনি কাজে ভয় বা লোভের বশবর্তী হয়ে চালাকি করলে আল্লাহ আর কাজ না-ও নিতে পারেন। দেখা যাবে, ভিন্ন নেতৃত্ব সাধারণ মুসলমানদের সাথে নিয়ে ইসলামের হেফাজতে অতীত মুরব্বীদের মতোই আমৃত্যু সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। যারা ভয় বা প্রলোভনে নিজেদের ঈমান ও আখেরাত বরবাদ করবে না।



 

Show all comments
  • Abdul momen ২৮ জুলাই, ২০১৭, ২:৫৯ এএম says : 0
    the directions of Mufti Amini is not correct and the best way for future Islamic generations ! 1. what is the contributions of Mufti Amini for political Islamic field ? And: nothing 2. what is his coalition that which supported by Islam ? And: not supported by Islam
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ২৮ জুলাই, ২০১৭, ১০:৩৬ এএম says : 0
    আল্লাহ শফি হুজুর কে হায়াত দির্ঘ করে দাও
    Total Reply(0) Reply
  • Osman ৩০ মে, ২০১৮, ৯:০৮ এএম says : 0
    আমিতো কিছুই বুজিনী।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আল্লামা শফী

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ