Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কারণে উভয় দলে গ্রুপিং

ঝালকাঠির দুইটি আসনে নির্বাচনী হাওয়া

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজাপুর (ঝালকাঠি) উপজেলা সংবাদদাতা : ঝালকাঠি-১ ও ২ আসনেই বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। ইতো মধ্যে ভোটারদের মন জয়ে ঘর গোছাতে তৎপর বড় দুই দল আ’ লীগ ও বিএনপি। তবে দুই আসনেই উভয় দলে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। সাংগঠনিক দিকে দিয়ে বিএনপির চেয়ে আ’ লীগ এখন সুসংগঠিত ও তৎপর। আসন ধরে রাখতে ইতিমধ্যেই ভোট চেয়ে প্রচারনা শুরু করেছে আ’লীগের এমপিদ্বয়। শিল্পমন্ত্রী ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএইচ হারুন ইতোমধ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন পুরোদমে। আ’লীগের উন্নয়ন ও গুনগান প্রচারে কাজ শুরু করেছে দলের নেতাকর্মীরাও। অন্যদিকে দলীয় কোন্দল ও মামলার কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্য গড়ার চেষ্টা করলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিরোধ জিইয়ে রাখছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে ছন্নছাড়া জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সরিক হয়ে মাঠে থাকবে। আর জোট ছাড়া নির্বাচনে শক্ত প্রার্থীর সংকটে ভুগতে হবে দলটিকে। জেলা বিএনপি নিজের কোন্দলে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির পালন করলেও তা দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পুলিশের বাধার দাড়াতে পাড়ছে না তারা। নানা ঘটনায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। এরপর থেকে কিছুটা আন্দোলন বিমুখ হয়ে পড়া দলটি সাংগঠনিকভাবে ঝিমিয়ে রয়েছে। যদিও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ব্যবসায়ী মিঞা আহম্মেদ কিবরিয়ার সহায়তায় জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান খান বাপ্পিসহ জেলার কয়েকজন নেতার নেতৃতে কিছুটা চাঙ্গা রয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ হয়ে আলাদা ভাবে কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নুর সহায়তায় জেলা যুবদলের সভাপতি এমআর কামরুল। এসব বিরোধের পরেও তৃণমূলে এখনো শক্তিশালী দাবি করে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা এভাবের নির্বাচনে আসুন দলটি। আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা: ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে টানা দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নিজের কেন্দ্রে ও স্থানীয় পর্যায় শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বর্তমান এমপি রাজাপুর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি বজলুল হক হারুন। একটি মহল রাজধানীর বনানী রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করলেও প্রশাসন তার বা তার ছেলেদের কোন সম্পৃক্ততা না পাওয়া এখন ফুরফুরা মেজাজে আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকায় ভোট চেয়ে ব্যাপক সভা সমাবেশ ও আ’লীগের উন্নয়নের গুনগান প্রচারে ব্যস্ত এমপি বিএইচ হারুন। ফলে দুই উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, দলীয় সিনিয়র ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে কয়েকগুন। এছাড়া গত ৮ বছরে তিনি ক্ষমতায়থাকাকালিন সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খানসহ দুই উপজেলা প্রায় অর্ধশত স্থাপনা ও ব্রীজ নির্মাণ করে সাধারণ মানুষেরও আস্থা অর্জন করেছেন। এসব কারণ তার দলীয় মনোনয়ন শতভাগ নিশ্চিত তার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করে নেতাকর্মীরা। এছাড়া মনোনয়নের আশায় র্দীঘদিনের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্র্রীয় আ’লীগের উপ কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মো. মনিরুজ্জামান মনিরও এলাকা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য গনসংযোগ, সভা, সমাবেশ, অনুদান প্রদান করছেন। পাশাপাশি টেলিভিশনে টকশোর কারণে কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মহলে বেশ ভাল একটা অবস্থানও তৈরি করেছেন, ফলে মনিরও অবস্থানও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন এবং মনোনয়ন পেলে পেস্ট্যোমফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হান্নান ফিরোজও নির্বাচন করতে পারেন। যদিও এলাকায় তাদের কোন প্রদচারনা বা নির্বাচনী প্রচারনা নেই। এছাড়া জাতীয় পার্টি শক্ত কোনো প্রার্থী নেই, তবুও নাসির উদ্দিন, সেলিনা খান ও জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন এনামুল হক রুবেল। নির্বাচনে অংশ নিবেন জাকের পার্টির আবু বককর সিদ্দিক ও ইসলামী আন্দোলনের জয়নুল আবেদিন। অপরনদিকে ঝালকাঠি-২ (সদর ও নলছিটি) আসনের হেভিওয়েট নেতা আ’লীগের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর দলীয় মনোনয়ন শতভাগ নিশ্চিত। এখানে আমির হোসেন আমুর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করে নেতাকর্মীরা। ঝালকাঠি ও নলছিটিতে ব্যাপক উন্নয়ন করে শুধু নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয়, জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন সাধারণ মানুষের মধ্যেও। এ আসনের মানুষ চায় তাঁদের এলাকার কেউ মন্ত্রী থাকুক। সে বিবেচনায় তাঁরা আমির হোসেন আমুকেই আগামী নির্বাচনে জয়ী করে পুনরায় মন্ত্রী হিসেবে তাকেই পেতে চান। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা: ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে বিএনপির নিশ্চিত প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন হেভিওয়েট নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যরিষ্টার শাহ জাহান ওমর বীরউত্তম। তার নেতৃত্বে দলীয় বিরোধহীন সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী দলটি। এছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জামালও মনোনয়ন প্রত্যাশী। ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে নিজেদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী, এদের মধ্যে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য জুলফিকার আলী ভুট্টোর স্ত্রী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় মুখ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মিঞা আহম্মেদ কিবরিয়া, বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহ সভাপতি (ভিপি) বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ও জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট একসঙ্গে নির্বাচন করলে মনোনয়ন চাইতে পারেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ জামাল উদ্দিন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন দলের জেলা শাখার সভাপতি এম এ কুদ্দুস খান। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই সমর্থন দিবে দলটি। জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর জানান, ‘বিএনপি তৃণমূলে এখনো শক্তিশালী। নির্বাচনকে সামনে রেখে যে যার মতো করে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে বসন্তের কোকিলরা এসে মনোনয়ন চায়। তারা ঢাকায় বসে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আন্দোলন-সংগ্রামে তারা কোনো ভূমিকা রাখছে না। তারাই দলের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ’ ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মো. শাহ আলম জানান, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো নতুন করে করা হচ্ছে। দলকে আরো গতিশীল রাখার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নেই আমরা যাচ্ছি। খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবাই শিল্পমন্ত্রীর হাত ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও আমরা আসন দুটি ধরে রাখতে পারব। ’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মনোনয়ন

১৭ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ