Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ছে আইএসপির লাইসেন্স ফি

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাড়ানো হচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের (আইএসপি) লাইসেন্স ও নবায়ন ফি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনার আলোকে লাইসেন্স ফি এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ লাখ এবং নবায়ন ফি ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। পাশাপাশি যেসকল আইএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের শর্তানুযায়ি কার্যক্রম পরিচালনা করছে না তাদের লাইসেন্স বাতিলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাতেই লাইসেন্স ও নবায়ন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। তবে ফি বৃদ্ধির ফলে গ্রাহক পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। এছাড়া বর্তমানে অপারেশনে থাকা ন্যাশনওয়াইড, সেন্ট্রাল ও জোনাল আইএসপি’র তিন ক্যাটাগরিতেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। নতুন করে ন্যাশনওয়াইড, আরবান এবং রুরাল এই তিনটি ক্যাটাগরিতে সারাদেশে দেয়া হবে আইএসপি লাইসেন্স। এর আগে লাইসেন্স গ্রহণকারী এবং কার্যক্রমে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে নতুন লাইসেন্স গ্রহণ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের উপস্থিতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনা সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আইএসপি লাইসেন্সের ফি বৃদ্ধি এবং প্রতিশ্রুত সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, অনতিবিলম্বে আইএসপি লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট ফি সমূহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইএসপি লাইসেন্স নবায়নের সময় লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী সেবা প্রদান করছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নবায়ন করতে হবে। অধিক সংখ্যক লাইসেন্স প্রদান না করে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। একইসাথে যেসকল আইএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী কার্যক্রম চালু করেনি তাদের আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।
এই সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২৯ মে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিটিআরসিকে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, আইএসপি এর জন্য নতুন কোন গাইডলাইন প্রণয়ন না করে বিটিআরসি’র বর্তমান গাইডলাইনেই লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রেরণ করবে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনার বিষয়ে বিটিআরসিতে ২৯ জুন অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সভা। সভায় সিদ্ধান্ত হয় আইএসপি লাইসেন্স দুটি ক্যাটাগরিতে ইস্যু করা হবে। এর একটি ন্যাশনওয়াইড এবং অন্যটি জোনাল। তবে ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশেষ সভায় দুটির পরিবর্তে তিনটি ক্যাটাগরি করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এর মধ্যে ন্যাশনওয়াইড, আরবান এবং রুরাল। ন্যাশনওয়াইড লাইসেন্সধারী আইএসপিগুলো দেশের যে কোন অঞ্চলে সেবা প্রদান করতে পারবে। আরবান আইএসপি লাইসেন্সধারীরা সব মেট্রোপলিটান এলাকা/সকল ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টার/সব জেলা সদর এলাকা। আর রুরাল লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলো জেলা সদরের বাইরে যে কোন উপজেলা/থানায় সেবা প্রদান করতে পারবে।
ওই সভায় ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রম পরিচালনাকারী এবং লাইসেন্সধারীসহ নতুন করে লাইসেন্সের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়। ন্যাশনওয়াইড আইএসপি লাইসেন্সের ফি পূর্বের এক লাখ টাকার পরিবর্তে নতুন করে নির্ধারণ করা হয় ২৫ লাখ টাকা। বার্ষিক নবায়ন ফি’ও এক লাখ টাকার স্থলে ৫ লাখ, প্রতিটি আবেদনের জন্য ৫ হাজার টাকা। এছাড়া কমিশনের সাথে রেভিনিউ শেয়ারিং ১ শতাংশ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ডের জন্য ১ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং নির্ধারণ করা হয়েছে। আরবান আইএসপি লাইসেন্সের জন্য লাইসেন্স ফি এক লাখের বিপরীতে ১৫ লাখ, বার্ষিক নবায়ন ফি’ও এক লাখের পরিবর্তে ৩ লাখ, আবেদন ফি ৫ হাজার টাকা। এছাড়া রেভিনিউ শেয়ারিং ও সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ডের জন্য একই রকম নির্ধারণ করা হয়েছে। রুরাল আইএসপি এর জন্য লাইসেন্স ফি ১ লাখ টাকা, বার্ষিক নবায়ন ফি ২৫ হাজার এবং আবেদন ফি ৫ হাজার টাক। এছাড়া ১ শতাংশ করে রেভিনিউ শেয়ারিং ও সামাজিক দায়বাদ্ধতা ফান্ডে দিতে হবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে প্রচলিত লাইসেন্সিং পদ্ধতির আওতায় যেসকল প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন জোনের জন্য লাইসেন্স গ্রহণ করে আইএসপি সেবা প্রদান করে আসছে তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। অন্যত্থায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে পূর্ববর্তী লাইসেন্সের কার্যকারিতা হারাবে।
কমিশনের সভায় সাইবার ক্যাফেসহ আইএসপির ক্ষেত্রে বর্তমান প্রচলিত লাইসেন্সিং এর পরিবর্তে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইস্যু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত ক্যাটাগরিভিত্তিক লাইসেন্স বিলুপ্ত হবে অর্থ্যাৎ পূর্বের মতো এ,বি,সি কোন ক্যাটাগরি থাকবে না। এছাড়া এই রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট থানা, পৌরসভা/উপজেলা ভিত্তিক কমিশন হতে ইস্যু করা হবে। সাইবার ক্যাফ ইন্টারনেট সার্ভিসসহ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এর জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি ২৫ হাজার টাকা। বার্ষিক অডিট গ্রস রেভিনিউ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ডের জন্য ১ শতাংশ করে নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রচলিত দুটি ক্যাটাগরিতে আইএসপি লাইসেন্স সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ন্যাশনওয়াইড, জোনাল (সেন্ট্রাল জোন) এবং জোনাল (সাউথ-ইস্ট, নর্থ-ইস্ট, সাউথ-ওয়েস্ট, নর্থ-ওয়েস্ট) জোন।
কমিশনের গৃহীত সিদ্ধান্ত বিদ্যমান লাইসেন্সের গাইডলাইনে পরিবর্তন/সংযোজন/পরিবর্ধন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইএসপি লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়েছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি’র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এ খাত হুমকীর মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আইএসপিএবি’র সভাপতি আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, নতুন করে কেউ লাইসেন্স নিলে তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি আদায় করা যায়। কিন্তু যারা ইতোমধ্যে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের কাছ থেকে আবার কেন ফি আদায় করতে হবে? এটি করলে প্রকারান্তেই গ্রাহকদের উপরই চাপ পড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, আগে যেখানে এক লাখ টাকা ফি নেয়া হতে সেখানে ২৫ লাখ টাকা নেয়া অযৌক্তিক। আবার সবার জন্য নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করার সিদ্ধান্তটিও উদ্ভট বলে তিনি মন্তব্য করেন। এমদাদুল হক বলেন, যারা অলরেডি লাইসেন্স নিয়েছে তারা কেন আবার রেজিস্ট্রেশন করবে। এই সিদ্ধান্ত ইন্টারনেট ব্যবসা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার এক দিকে বলছে সবার কাছে সব এলাকায় কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌছে দিতে হবে। অন্যদিকে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, তাহলে কিভাবে সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশে ৫৯০টির মতো আইএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। ন্যাশনওয়াইড আইএসপি’র ১১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে ৭৫টি, জোনাল দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান শুধু তাদের নিজস্ব সেবার জন্য কার্যক্রম পরিচালিত করছে। ####



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএসপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ