Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীতে বেপরোয়া বাস চাপায় পর পর দুই ছাত্রীর মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বেপরোয়া বাস চাপায় মেধাবী এক ছাত্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদে সহপাঠীদের সড়ক অবরোধ তুলতে না তুলতেই একইভাবে নিহত হলেন আরো এক ছাত্রী। গতকাল শনিবার মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ঝরে যায় দু’টি প্রান। ঘটনাস্থলও একই। রাজধানীর শাহবাগ সড়ক। দানবরুপি গাবতলীর ৭ ও ৮ নং রুটের এসব বাসের চাপায় পৃথিবী থেকে অকালে হারিয়ে গেলো প্রাণোচ্ছল দু’টি প্রাণ। নিহতদের পরিবার দু’টিতে এখন চলছে শোকের মাতম।
মেধাবী ছাত্রী সাবিহা আক্তার (১৪)। তার বাবা আদর করে ডাকতেন সোনালী। সেগুন বাগিচার বেগম রহিমা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল সোনালী। তেজগাঁও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। নতুন স্কুলে ভর্তি হবার পর নতুন পোশাক কিনে দেয়ার বায়নাও ধরে সে। গতকাল সকালে স্কুলে ভর্তি শেষে বিকেলেই বাবার সঙ্গে পোশাক কিনতে যাবার কথা ছিলো তার। কিন্তু বিকেল বিলীন হয়েছে বিষাদময় সকালেই। স্কুলে ভর্তি হতে সকাল সাড়ে ৮টায় সেগুনবাগিচার বাসা থেকে বের হয় সোনালী । কিন্তু স্কুলে আর পৌঁছাতে পারেনি। বেপরোয়া বাস কেড়ে নেয় তার প্রাণ। সকাল ৯টার দিকে মৎস্য ভবনের সামনের রাস্তা পার হওয়ার সময় ৮ নম্বর পরিবহনের একটি দ্রুতগতির বাস (ঢাকা মেট্রো জ ১১-১৩২৮) তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। ঘটনার পর পরই বাস ফেলে পালিয়ে যায় এর চালক। সোনালীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার ক্ষুব্ধ সহপাঠীরা প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তারা দায়ী চালককে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানায়। এঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে সাধারণ মানুষও। সড়ক অবরোধের এক ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাস পেয়ে রাস্তা ছেড়ে আসে সোনালীর সহপাঠী ও অভিভাবকরা। ঢাকা মেডিকেল মর্গে সোনালীর লাশের পাশে তার বাবা জাকির হোসেন বিলোপ করে বলেন, মেয়ের জন্য নতুন কাপড় কিনলাম ঠিকই, তবে তা কাফনের কাপড়। তিনি বলেন, এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার ছিলো সাজানো সংসার। ছেলে সাজ্জাদ হোসেন নরসিংদী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করছে। আর মেয়েটি গোল্ডেন এ পেয়েছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, কিন্তু সব কেড়ে নিল বাস। জানি এর বিচার পাব না। বিচার হবে না। নিহত সোনালীর গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে। সপরিবারে সে সেগুনবাগিচায় বসবাস করতো।
এদিকে সোনালীর মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শাহবাগ মোড়ে একইভাবে বাস চাপায় খাদিজা সুলতানা মিতু (১২) নামের অপর এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। খাদিজার বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনোহরগঞ্জের মানদুরায়। বাবার নাম বাচ্চু মিয়া। মনোহরগঞ্জের লক্ষ্মণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লক্ষ্মণপুর ফাজিল মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল সে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহত মিতুর ভগ্নিপতি ওমর ফারুক বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে রাজধানীর শ্যামপুরে থাকেন। আট দিন আগে তাদের সঙ্গে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছিল শ্যালিকা খাদিজা। গতকাল সকালে তিনি খাদিজাকে নিয়ে ঘুরতে বের হন। শিশুপার্ক ঘুরে বিকেল ৪টার েিদক খাবারের জন্য শাহবাগ মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলেন। তখন রাস্তা পারাপারের সময় ৭ নং রুটের একটি বাস বেপরোয়া গতিতে এসে খাদিজাকে চাপা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার পর পরই স্থানীয় লোকজন বাসও এর চালককে আটক করে গণধোলাই শেষে পুলিশে দিয়েছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, ময়না তদন্তের জন্য লাশ দু’টি ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানীতে বেপরোয়া বাস চাপায় পর পর দুই ছাত্রীর মৃত্যু
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ