Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বৃষ্টিতে পানিবন্দি নগরবাসী

| প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : আবিরাম বৃষ্টিতে গতকালও নগরবাসীর দুর্ভোগের শেষ ছিল না। বৃষ্টির তোড়ে জনজীবন থমকে যাবার উপক্রম হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। যথারিতি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক দেড় ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে রাজধানীর সচিবালয়সহ সব রাস্তা ঘাট তলিয়ে যায়। আর বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হওয়ায় ব্যস্ততম প্রধান সড়ক ও বিভিন্ন অলিগলিতে হাঁটু পানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানিবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
সৃষ্ট অবস্থার সামালদিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বৃষ্টিতে পানিবদ্ধ শান্তিনগরে দুর্ভোগে পড়া মানুষকে নৌকায় পারাপার করে দিতে দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। পানিবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোতে এভাবে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন বাহিনীর কর্মকর্তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রবল বর্ষণে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সড়ক হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এমন একটি এলাকা শান্তিনগরে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসের লাইফবোট।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় কারণে সৃষ্ট দুর্ভেঠস থেকে শিশু-নারী-বৃদ্ধ, স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীদের পরিত্রাণ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা লাইফবোট নামানোর কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, সচিবালয়, নটরডেম কলেজের সামনের রাস্তা ও মিরপুর এবং শান্তিনগরে বৃষ্টি পানি উপচে সৃষ্ট দুর্ভোগ কমাতে লাইফবোট ছাড়াও ফায়ার বিগ্রেডের বেশ কিছু স্টেশনের টিম (৫-১০ জন কর্মীর) কাজ করছে।
এই বর্ষায় সব এলাকায় লাইফবোট সুবিধা দেওয়া সম্ভবপর না হলেও সবচেয়ে বেশি দুর্গত এলাকাগুলোতে ১০-১৫টি লাইফবোট এখন থেকে কাজ করবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেমকে দায়ী করেন আলী আহমেদ বলেন, আমাদের ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো না, যা একদিনে ঠিক করাও সম্ভব না।
সরজমিন দেখা গেছে, কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকায় হাটু পানিতে সড়কে যানবাহন আটকে পড়েছে। পানিবদ্ধাতায় অনেকগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। অটোরিকশা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
অল্প বৃষ্টিতেই মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিকশা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্য বাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অল্প বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ করেন দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা।
নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেককে অফিস ও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। তবে সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করেন যাত্রীরা।
বৃষ্টিতে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিসিডিডিআরবি থেকে মহাখালী বাসস্টান্ড পর্যন্ত পানি জমে যায়। পানির সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ি না থাকায় যাত্রীদের ময়লা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
বৃষ্টিতে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকার সব সড়ক ও স্টেশনের প্রবেশ মুখ হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে মালামাল নিয়ে আসা যাত্রীরা। তবে পানি দ্রুত নেমে না যাওয়ায় যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত, ঢাকা মেডিকেলের সামনে রাস্তা, গোলাপ শাহ মাজারের সামনে পানি জমে যায়। রাস্তায় থাকা ময়লা বৃষ্টির পানিতে মিশে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। সদরঘাটমুখী যাতায়াতকারীদের ময়লা পানি মাড়িয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে যেতে দেখা গেছে। কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো রাস্তা ও আশপাশের গলি বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়।
অধিকাংশ স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা ও গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গায় যাত্রীদের সড়কে পড়ে ভিজে যেতে দেখা গেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সেই চিরাচরিত দুর্ভোগ। তাৎক্ষণিকভাবে পানি নেমে না যাওয়ায় সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউমার্কেট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে নিউমার্কেটের নিচতলার অধিকাংশ দোকানপাট পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমেছে। নিউমার্কেট ও আশেপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবদ্ধতা। এ মার্কেটের বহু দোকানিকে বৃষ্টি থেকে তাদের জিনিসপত্র রক্ষার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। আবার কিছু কিছু ক্রেতাকে বৃষ্টিতে ভিজেও কেনাকাটা করতে দেখা যায়। মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, ভাই বেচুম কী, ঘুমায়তাছি, চোখে-মুখে টেনশন। আল্লাহই জানে এ বৃষ্টি কখন থামে! দোকান থেক্কে কখন না জানি পানি সরে! ক্রেতাও নেই তেমন! এছাড়া, নিউমার্কেট এলাকার আশেপাশের ফুটপাতের হকারদের দোকানপাটও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। সাইন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট হয়ে বলাকা পর্যন্ত এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতা, বিক্রেতা ও যাত্রীরা। পানিবদ্ধতার কারণে মিরপুর রোডে দেখা দেয় যানজটও।
মৌচাক এলাকার মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিং কমপ্লেক্স, মালিবাগের হোসাফ টাওয়ার কমপ্লেক্স, শান্তিনগর এলাকার টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ও ট্রপিক্যাল রাজিয়া শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পানিবদ্ধতার দেখা দেয়। এতে ক্রেতারা পড়েন ভোগান্তিতে। সেই সঙ্গে ওই সব এলাকায় দেখা দেয় যানজটও। রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, আগারগাঁও, মিরপুর, যাত্রাবাড়িসহ বেশকিছু এলাকা ও মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে তৈরি হয়েছে পানিবদ্ধতা। অপরিকল্পিত নগরায়নে পানি জমার সমস্যাটা দিন দিন প্রকট হচ্ছে বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এছাড়া পানিবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসাবে রাজধানীর অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা দায়ী। আর পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে রাজধানীবাসীর দুর্দশা আরো বাড়বে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রাণ কেন্দ্র মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় এ এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তার অবস্থা বেহাল। তাই এ এলাকার রাস্তাগুলোতে যানজট সকাল-দুপুর, রাত-দিন সবসময় লেগেই থাকে। এ থেকেই সারা শহর জুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই রাজধানীর যানজট এখন সাপ্তাহের সাত দিনই থাকে। বিশেষ করে কর্মদিবসের শুরুর দিন রোববার, প্রথানমন্ত্রী সচিবালয়ে অফিস করেন সোমবার আর কর্মদিবসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ তিনদিন রাজধানীর রাস্তায় ভয়াবহ যানজটে সৃষ্টি হয়। এ সময় নগরবাসীকে রাস্তায় নেমেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী এই ঢাকাতে যানজট প্রতিদিনের চিরচেনা ঘটনা। যানজট নিরসনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অতীতে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সদ্যসমাপ্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগেও মেয়র প্রার্থীদের কণ্ঠে যানজট নিরসনের প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল। কিন্তু দুই মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতির একচুলও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

৫ অক্টোবর, ২০২২
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ