Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে ওআইসি সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে ওআইসি মহাসচিব

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার ব্যুরো : কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমাদ আল-ওসাইমীন বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরাও মুসলিম উম্মার একটি অংশ। তাদের উপর নির্যাতনে গোটা মুসলিম উম্মাহ ব্যথিত। তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে ওআইসি সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ সরকার নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহযোগিতা দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রতি দরদ, মুসলিম উম্মাহ ও মানবতার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প ও বস্তি পরিদর্শন করেছেন বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের জোট ‘ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা’র (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমাদ আল-ওসাইমীন। তিনি গতকাল শুক্রবার দুুপুর সাড়ে ১২দিকে কক্সবাজার থেকে গাড়ী যুগে রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে উপস্থিত হয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে মিলিত হন।
এরপর তিনি আন-রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের ডি-বøকে একটি রোহিঙ্গা ঝুপড়িতে ঢুকে সেখানে অবস্থানকারী নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-পুরষের সাথে কথা বলেন। মিয়ানমারের মংডু এলাকার নারীরবিল গ্রামের নজির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫) একই থানার ছালিপাড়া গ্রামের শাহীনের স্ত্রী শফি নুর (২৬) এবং একই এলাকার আব্দুর রহিমের স্ত্রী মিসফালা (২২) সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে তাদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন, নিপিড়ন ও অত্যাচারের কাহিনী শোনেন। পরে ওআইসি মহাসচিব ডি-বøকের আইওএমের একটি স্কুলে পূর্বে থেকে অপেক্ষমান নির্যাতিত ৩০জন নারী-পুরুষের সাথে একান্ত আলাপ করেন। মিয়ানমারে মংডু থানার হাতগইজ্জাপাড়া গ্রামের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা গৃহবধু জামালিকা (২২) মহাসচিবকে বলেন, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা তার স্বামী খাইরুল আমিন (৩০) দোকান থেকে বের করে রাতের আধারে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাকেও পাশর্^বর্তী জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষন করে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা। নির্যাতনের পা হারানো মংডু থানার গুয়াছি গ্রামের মোঃ জাকারিয়া (৩০) বলেন, সেনা বাহিনীর সদস্যরা তার বসতবাড়ীতে আগুন নিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। তাকে ধরে নিয়ে গুলি করলে ডান পা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। তাদের এসব নির্যাতনের বর্ণনা মনযোগ দিয়ে শোনেন ওআইসি’র মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমাদ আল-ওসাইমীন।
ওইআইসি মহাসচিবকে কাছে পেয়ে মিয়ানমার সরকারর ও সেখানকার রাখাইন ও মঘদস্যু কর্তৃক নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ মনভরে তাদের উপর নির্যাতনের কথা বলেন। বলেন তাদের ন্যায্য অধিকারের কথা। দুর্দিনে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার কথা বলে বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ দিতেও ভুলেননি তারা ওআইসি মহাসচিবের কাছে।
দেড় ঘন্টা ব্যাপী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তি এলাকা ঘুরে কুতুপালং ক্যাম্পের অভ্যান্তরে খেলার মাঠে ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমাদ আল-ওসাইমীন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে, ১৯৯১সাল থেকে বাংলাদেশ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানান। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নাগরিকত্বসহ তাদের সহায় সম্পত্তি ফেরত দিয়ে স্ব দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা হবে মন্তব্য করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের মূখ থেকে শোনা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নানা নির্যাতনের বর্ণনার কথা বর্হিবিশে^ জানান দেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের আশ^স্থ করেন ওআইসি মহাসচিব। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের এ দেশীয় আইনকানুন মেনে চলার অনুরোধ জানান।
রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপকালে মিয়ানমারে চরম নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করা হবে জানান ওআইসির মহাসচিব। এসময় তিনি রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের সহ-সভাপতি সিরাজ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আমিনসহ একাধিক রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা বলেন।
এসময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওআইসি মহাসচিবের সাথে ছিলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সচিব বাকি বিল্লাহ, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মার্মা, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুরুদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমানসহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিরা।

 



 

Show all comments
  • Md Shahossain ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৪৪ এএম says : 0
    আল্লাহই আমাদের জন্য যতেষ্ট
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Abdullah ৫ আগস্ট, ২০১৭, ৬:৫৪ পিএম says : 0
    নির্যাতিত রুহিঙ্গাদের থেকে শুনেছি বাংলাদেশ হইতে বুড্ডিস্ট বা মগ রা মিয়ানমার গিয়া রুহিঙ্গাদের জুলুম নির্যাতন করিতেছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওআইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ