Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চেইনশপে অস্বাস্থ্যকর ও অধিকমূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি

প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাজারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এড়িয়ে নির্ঝঞ্ঝাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটার করার জন্য সুপার চেইনশপ একটি আধুনিক প্রক্রিয়া। সারা বিশ্বে এ ধরনের চেইনশপ ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। এসব শপে পণ্যের দামাদামি করা লাগে না এবং পণ্যের ধরণ অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো থাকে। পণ্যের দামও সাধারণ বাজারের সমান এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমও থাকে। ক্রেতারাও তার পছন্দ অনুযায়ী স্বচ্ছন্দে পণ্য কিনতে পারেন। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে চেইনশপগুলো পণ্যমূল্যে বিশেষ ছাড়ের অফারও দেয়। ফলে ক্রেতাদের কাছে এসব চেইনশপ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও এ ধরনের চেইনশপ ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চেইনশপ ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে আগোরা ও স্বপ্ন উল্লেখযোগ্য। পরিতাপের বিষয়, এ দু’টি শপ ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের প্রতারণা করে আসছে। তাদের এ প্রতারণার খবর গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অস্বাস্থ্যকার, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে এই দুই প্র্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত মোট আড়াই লাখ টাকা জরিমানা ও সতর্ক করেছে। এহেন অপকর্মের কারণে নিশ্চিতভাবেই প্রতিষ্ঠান দু’টির নিয়মিত গ্রাহকরা মর্মাহত ও ব্যথিত হয়েছেন। তাদের মনে করা স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান দু’টি তাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে।
খাদ্যে ভেজাল মেশানো এবং এসব খাদ্য ক্রেতাদের অধিক দামে ক্রয় করতে বাধ্য করা আমাদের দেশে একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেজাল খাদ্যের ভিড়ে আসল খাদ্য শনাক্ত করা রীতিমতো একটি দুরূহ কাজ পড়েছে। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে খাদ্যে ভেজাল বা মান কমিয়ে দিয়ে দেদারছে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এদের প্রতিহত করার যেন কেউ নেই। আইন আছে শাস্তির বিধান আছে, উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে দুয়েকটি অভিযান পরিচালনা করা হলেও, তা ভেজাল পণ্যে সয়লাব হয়ে যাওয়া বাজার ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। ভেজাল ঠেকানো দূরে থাক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন বলে যে একটা আইন আছে, যেখানে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, তাই যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় না এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোক্তাও তা জানে না। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনার কথা জানলেও, আইনে ভোক্তাদের কী অধিকার রয়েছে, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয় না। এর ফলে ভোক্তাদেরকে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামতো ধার্যকৃত মূল্যে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এই অনাচারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো জনমত বা শক্তি গড়ে উঠেনি। ফলে ভেজাল হোক আর আসল হোক, ক্রেতাদের যে মূল্যে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে, তাই তারা মেনে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নীতি-নৈতিকতার কোনো তোয়াক্কা করছে না। আমাদের দেশের ক্রেতাদের এই দুর্বলতাকে পুঁজি করেই চটকদার বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার মাধ্যমে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর চেইনশপ গড়ে উঠেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্রেতাদের কাছে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর চাহিদা বিবেচনা করেই পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করা হয়ে থাকে। যেখানে ক্রেতারা সাশ্রয়ীমূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য পাবে, সেখানেই ছুটে যাবে। ক্রেতাদের চিরায়ত এই প্রবণতাকে বিবেচনায় নিয়েই আধুনিক বাজার হিসেবে পরিচিত চেইনশপগুলো গড়ে উঠেছে। এগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ঝামেলাহীনভাবে কেনাকাটা করা যায় বলে ক্রেতারাও আকৃষ্ট হয়েছে। শুধু ঝুটঝামেলাহীনই নয়, চেইনশপগুলোর কর্তৃপক্ষ এই নিশ্চয়তাও দিচ্ছে, তাদের পণ্য ভেজালমুক্ত, সাশ্রয়ী বা একই দামে বাজারের সেরা পণ্য পাওয়া যায়। ফলে ক্রেতারা সঠিকমূল্যে ভেজালমুক্ত পণ্য সামগ্রী কেনার জন্য চেইনশপগুলোর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে। দুঃখের বিষয়, ক্রেতাদের এই বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতার সাথে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি চেইনশপ-আগোরা ও স্বপ্ন প্রতারণা করেছে। এ দু’টি চেইনশপের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকবার মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজালপণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠে। সে সময়ও তাদের জরিমানা করা হয়। তারপরও তারা সতর্ক হয়নি। মানসম্মত পণ্যের নিশ্চয়তাবিধানকারী আধুনিক এই বাজারের পরিস্থিতি যদি এমন হয়, তবে ক্রেতারা আর কোথায় যাবে? পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এ ধরনের চেইনশপ যারা বার বার অভিযুক্ত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা করাই যথেষ্ট নয়। আরও কঠোর শাস্তি দেয়া প্রয়োজন। উন্নত বিশ্বে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশনকারী-উভয়কেই কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। তাদের লাইসেন্স নির্দিষ্ট মেয়াদে স্থগিত বা চিরতরে বাতিল করে দেয়া হয়। এমনকি যে প্রতিষ্ঠানের ভেজাল খাদ্য খেয়ে ভোক্তা অসুস্থ বা মারা যায়, সে প্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভুক্তভোগী ভোক্তাকে দিতে হয়। আমাদের দেশে ভোক্তা অধিকার আইন আছে ঠিকই, তবে এ আইন সম্পর্কে ভোক্তারা যেমন জ্ঞাত নয়, তেমনি ভোক্তা অসুস্থ বা মৃত্যুবরণ করলেও তার তেমন কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। খোঁজ পাওয়া গেলেও অভিযুক্তর নামমাত্র শাস্তি হয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের শাস্তি অভিযুক্তর জন্য যথেষ্ট নয়। ভোক্তা আইনের ৫৩ ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো সেবা প্রদানকারীর অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটালে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদ- বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। বলা বাহুল্য, এই আইনও সব সময় প্রয়োগ হতে দেখা যায় না। কেবল বিশেষ অভিযান চলাকালে প্রয়োগ করা হয়।
যেসব চেইনশপ ভোক্তাদের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করে অধিক মূল্যে ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয় করেছে, তাদের জন্য আরও কঠোর শাস্তির বিধান করা অপরিহার্য। আইন সংশোধন বা নতুন আইন করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু চেইনশপগুলোতেই নয়, সাধারণ বাজারেও যারা ভেজাল পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন করে, তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভোক্তাদের সচেতন করা ও জানানোর জন্য ভোক্তা অধিকার আইনটি গণমাধ্যসহ অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও দোকানে ভেজাল ও অধিকমূল্যে পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত আইনের ধারা ভোক্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়, এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে ভোক্তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে পারে। ভেজাল পণ্য ও অধিকমূল্য প্রতিরোধে ভোক্তাদেরও সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চেইনশপে অস্বাস্থ্যকর ও অধিকমূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি
আরও পড়ুন