Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঘর গোছাতে হোঁচট খাচ্ছে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ

| প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহিউদ্দিন-নাছির গ্রুপের কোন্দল তৃণমূলে
রফিকুল ইসলাম সেলিম : জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সংগঠিত করে ঘর গোছানোর প্রক্রিয়ায় গতি আসছে না। নানা টানাপোড়েনে সংগঠনকে সুসংহত করার কেন্দ্রীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে হোঁচট খাচ্ছেন নেতারা। এই ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাদের দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে অনাগ্রহ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নানা অপকর্মে সৃষ্ট ইমেজ সঙ্কটে বাধা মনে করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় আবার সংসদ সদস্যদের সাথে দলের দূরত্ব তৈরী হয়েছে। তাদের কারণেও এই প্রক্রিয়া হোঁচট খাচ্ছে বলে মনে করেন দলের নেতারা। কোন কোন এলাকায় সংসদ সদস্য ছাড়াও সিনিয়র অনেক নেতা দলীয় কর্মকান্ডে নিস্ক্রিয় রয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সাংগঠনিক কর্মসূচিতে নিস্ক্রিয় থাকা নেতাদের সরিয়ে দিতে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহানগরীর পাশপাশি চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলায়ও অনেক নেতা দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন না।
এদিকে হাইকমান্ডের চাপে এখানকার নেতারা প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে কলহ বিরোধ থেকে আপাতত বিরত থাকলেও বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে রেষারেষি চলছেই। বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের কলহ-কোন্দল তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত রয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘাত-সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান দশ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির ঘটনা ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলে নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। এর জের ধরে ফের সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশনা দিয়ে সংগঠনকে সুসংহত করতে বলা হয়। এই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় প্রতিনিধি সভা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি তৃণমূলকে সংগঠিত করে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করারও নির্দেশ দেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রতিনিধি সভায় তিনি খুব দ্রুত ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন শেষ করতে বলেন। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠতি করারও নির্দেশনা দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তবে দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় এ প্রক্রিয়ায় তেমন গতি আসছে না। অনেক এলাকায় এখনও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন শুরুই করা হয়নি। এরফলে বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তাদের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যে যার মতো করে এলাকায় নির্বাচনমুখি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে তুণমূলের নেতাকর্মী সমর্থকেরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।
দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা প্রায় ৯ বছর ক্ষমতায় থাকায় দলের এমপি, মন্ত্রীদের অনেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের দুরে সরিয়ে নিয়েছেন। এই কারণে এসব নেতাদের সাথে দলীয় নেতাকর্মীদেরও দূরত্ব তৈরী হয়েছে। তাদের সাথে দলের মূলধারার নেতাকর্মীদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। আর এই কারণে আগামী নির্বাচনকে দলকে সংগঠিত করার প্রক্রিয়ায় গতি আসছে না বলে জানান মহানগর ও জেলার বেশ কয়েকজন নেতা।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে দলীয় কর্মকান্ডে নিস্ক্রিয় থাকা নেতাদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। সর্বশেষ গত শনিবার মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় বর্তমান কমিটি গঠনের পর থেকে যেসব কর্মকর্তা ও নির্বাহী সদস্য সংগঠনের কর্মকান্ড ও দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, তাদের পদ-পদবি থেকে অপসারণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দলের নেতারা জানান, মহানগরীর আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনেকই দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন না। নগরবাসীর দুর্ভোগেও তাদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। এনিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে তাদের দূরত্ব বাড়ছে। সম্প্রতি দলের এক সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নগরবাসীর দুর্ভোগের জন্য সেবা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের জনদুর্ভোগ লাঘবে এসব সেবা সংস্থাগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করারও আহবান জানান। তিনি নগরীতে পানিবদ্ধতা, যানজট ও সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য প্রকারান্তরে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এম আবদুচ ছালামকে দায়ী করেন। আবার অন্য একসভায় সিটি মেয়র পানিবন্ধতার জন্য সিডিএর প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন। জনদুর্ভোগ নিয়ে খোদ সরকারী দলের নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন প্রকাশ্যে। দোষারোপের রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সাংগঠনিক কার্যক্রমে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামে এখনও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। শুরু করা হয়নি নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমও। এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, খুব শিগগির কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন শুরু হবে। আগস্ট শোকের মাস হওয়ায় এ মাসে সাংগঠনিক কর্মকান্ড কম হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। এরপর কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। জেলার অনেক এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন না এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু এলাকায় সংসদ সদস্যদের সাথে নেতাকর্মীদের দূরত্ব তৈরী হয়েছে। আগে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ