Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশে তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে না

প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দেশের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ ভোজ্য তেল উৎপাদনেও সক্ষমতা অর্জিত হয়নি। এখনো বছরে ২০ লাখ টনের মতো ভোজ্য তেলের চাহিদার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সরিষা, তিল ও চীনাবাদাম থেকে মাত্র সাড়ে ৫ লাখ থেকে ছয় লাখ টনের মতো ভোজ্য তেল উৎপাদিত হয়ে থাকে। মাঠপর্যায়ে উৎপাদন প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ আবাদ কার্যক্রম সম্প্রসারণে উদ্যোগ না থাকায় বিপুল সম্ভবনাময় সূর্যমুখীর আবাদ মোটেই বাড়ছে না। সয়াবিনের আবাদ বাড়লেও উৎপাদিত এ তেলবীজের প্রায় পুরোটাই চলে যাচ্ছে পোলট্রি ফিডের কারখানায়। ফলে তা দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে কোনো ভ‚মিকা রাখছে না। বেশ কিছু দাদনদার বরিশাল, ভোলা ও ল²ীপুর এলাকার চরাঞ্চলে সয়াবিন চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের আগাম অর্থ দিয়ে থাকে।
এমনকি দেশে ভোজ্য তেল বীজ উৎপাদন সম্প্রসারণে তেমন কোনো সমন্বিত কার্যক্রমও নেই। চলতি বছর দেশে ৫ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। ৭৪ হাজার ছয় হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষের লক্ষ্য স্থির করা হলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে প্রকৃত আবাদ হয়েছে প্রায় ৮০হাজার হেক্টরে। এর মধ্যে বরিশাল ও ভোলাতেই আবাদ হয়েছে প্রায় ৮হাজার হেক্টরের মত। এছাড়া দেশে ৭৬ হাজার হেক্টরের মতো চীনাবাদাম আবাদ হয়েছে। ৪ হাজার হেক্টরের মতো সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা অর্জিত হয়নি। তবে বরগুনা, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে এর তেলবীজের আবাদ হয়েছে। এছাড়া দেশে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে তিল ও ৫ হাজার হেক্টরের মতো তিলজাতীয় তেলবীজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে সরিষা, চীনাবাদাম, সয়াবিন, সূর্যমুখী, তিল, তিসি ও গর্জন, তিলজাতীয় তেলবীজ আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৯০ হাজার টন তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে।
ডিএই’র মতে দেশে আবাদকৃত এসব তেল জাতীয় ফসল থেকে ১২লাখ থেকে ১৪লাখ টনের মত বীজ উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। যা থেকে ৫লাখ থেকে সাড়ে ৫লাখ টনের মত ভোজ্য তেল উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’র মতে দেশে প্রতিবছর ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টনের কাছাকাছি।
বারি’ ইতোমধ্যে আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষোপযোগী সরিষা তেল বীজের ১৬টি, তিলের ৪টি, চীনাবাদামের ৯টি, তিসির ১টি, সূর্যমুখীর ২টি, সয়াবিনের ৬টি ও গর্জন তীলের ১টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি’র বিজ্ঞানীদের মতে উন্নত আবাদ প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের তেল বীজের আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে দেশের ভোজ্য তেদেেলর উৎপাদন দ্বিগুন করা সম্ভব। আর এতে করে দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদার অনেকটাই পুরন হতে পারে। তবে সরিষা, তিল, তিষি ও চীনা বাদাম সহ অন্য কয়েকটি তেল বীজের আবাদ কিছুটা সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকলেও তা আরো সম্প্রসারনের যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বিপুল সম্ভবনাময় সূর্যমূখি এবং সায়াবিনের আবাদ ও উৎপাদনে কৃষকদের মনযোগী করার পাাশাপাশি এর বিপনন ব্যবস্থাটিও কৃষক বান্ধব করা যায়নি। গত কয়েক বছর ধরে বরগুনা, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের কয়েকটি এলাকায় সূর্যমূখির আবাদ কিছুটা সম্প্রসারন হলেও তার বিপনন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে উৎপাদিত সূর্যমূখীর বীজ নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়ায় আবাদে আগ্রহ ক্রমশ হারিয়ে ফেলছেন।
ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে,‘মূলত বিপনন ব্যাবস্থার অভাব এবং টিয়া পাখী সহ কিছু পাখির আক্রমনে সূর্যমূখির ফসল ক্ষত্রিগস্থ হচ্ছে। এমনকি এর গাছ সামান্য বাতাসেই মাটিতে লুুটিয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। ফলে কষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তেল কল প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না আসায় সয়াবিন-এর বিপনন ব্যবস্থা এখনো পল্ট্রী ফিড-এর ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে, মার্চ-এপ্রিলে সূর্যমূখি’র গাছ পরিপক্ক হয়ে বীজ তোলার সময়কালেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাল বৈশাখীর তান্ডব শুরু হয়।
এতে এ তেল বীজের গাছ ভেঙে পড়া সহ মারাত্মক ক্ষতির কবলে পরে। পাশাপাশি ‘বøাক ব্যন্ড ডিজিজ’ নামে এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েও এ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। উপরন্তু পরিপক্ক বীজ টিয়া পাখির আক্রমনে বিনষ্টের আশংকা থাকলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও সূর্যমূখির আবাদ সম্প্রসারনের যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
কৃষি ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্যমূখির বীজে ৪০Ñ৫০% ‘লিনোলিক এসিড’ রয়েছে পাশাপাশি এ তেল বীজে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। ফলে সারা বিশ্বে সূর্যমূখি তেল চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে যথেষ্ঠ গ্রহনযোগ্য। এর হেক্টর প্রতি ফলন ১.৭টন থেকে প্রায় ২টন পর্যন্ত। কিন্তু মানব দেহের জন্য যথেষ্ঠ উপকারী এ তেল বীজের আবাদ আমাদের দেশে এখনো অত্যন্ত হাতাব্যঞ্জক পর্যায়ে।
অপরদিকে সয়াবিন আবাদের যথেষ্ঠ সুযোগ থাকার পরেও তা কাঙ্খিত লক্ষে পৌছছে না। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, সয়াবিনে ৪০-৪৫% আমিষ এবং ১৯-২২% তেল রয়ছে। যেকোন ডাল ও শুঁটি জাতীয় শষ্যের তুলনায় সয়াবিনে প্রায় দ্বিগুন আমিষ রয়েছে। আমাদের দেশে সয়াবিনের হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৫ টন থেকে ২.৩ টন পর্যন্ত।
বারি ইতোমধ্যে ‘সোহাগ’, ‘বাংলাদেশ সয়াবিন-৪’ বারি সয়াবিন-৫’ ও ‘বারি সয়াবিন-৬’ নামের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এ তেল ফসল দো আঁশ, বেলে দোÑআঁশ ও এঁটেল দো-আশ মাটিতে চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। আমাদের দেশে শীত ও বর্ষা মওশুমে সয়াবিন-এর আবাদ সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীগণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশে তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ