Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গরুর খামারে ভরে উঠছে দিনাজপুর সীমান্তবর্তী বাড়িগুলো

বিএসএফ’র গুলি আর খেতে চায় না

| প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাহফুজুল হক আনার দিনাজপুর থেকে : বিএসএফ এর নির্বিচার গুলি আর অত্যাচার সীমান্তের মানুষদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাদের কাছে বিএসএফ এর গুলির চেয়ে নিজের বাড়ী’র খুলি (উঠোন) অনেক ভাল ও নিরাপদ। কেননা অধিকলাভের আশায় চোরাপথে গরু আনতে গিয়ে গুলি খেয়ে মৃত্যু’র চেয়ে নিজ ঘরেই গরু লালন পালন করে আরো বেশী লাভবান হওয়া যায়। যার ফল পেয়েছে কৃষকেরা গত বছরের কোরবানী ঈদে। সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম ছাড়াও এ বছর মফস্বল অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি পরিবার যেন এক একটি খামার। নিজের শোয়ার ঘরে গরু রেখে বারান্দায় রাত্রী যাপন করছে পরিবার পরিজন নিয়ে। এ চিত্র গ্রামের নিম্ন আয়ের প্রতিটি পরিবারে। খোদ সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগ দিনাজপুরের চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক হাজার পশু সরবরাহের আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। আর পশু লালন-পালনকারীদের আশা উপযুক্ত মুল্য পেলে এই টাকায় আগামী’র জন্য পশু ক্রয়ের পাশাপাশি সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আসবে। কোরবানীর আগে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য দরকার পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ সড়কপথের চাঁদাবাজী। আর তা হলেই বেপারীরা নিশ্চিতভাবে উপযুক্ত মুল্য দিয়েই স্থানীয় বাজার থেকে পশু ক্রয় করতে পারবে। এদিকে দেশীয় গরু সহজলভ্য হওয়ায় এবং মুল্যও সহনীয় হওয়ায় ভারতীয় বোল্ডার গরুর কদর কমে গেছে। কেননা ভারতীয় বোল্ডার গরুর মাংশের চেয়ে দেশীয় গরুর মাংশ অত্যন্ত সুস্বাদু। দিনাজপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সচ্ছল ও অস্বচ্ছল বলে কিছু নেই। প্রতিটি পরিবারেই এক থেকে একাধিক গরু পালন করা হচ্ছে। সচ্ছল পরিবারের মানুষ গোয়াল ঘরে আর অসচ্ছল পরিবারের মানুষরা নিজের শোয়ার ঘরে গরু রেখে অতি যত্মে সাহায্যে লালন করছে। উদ্দেশ্য আসন্ন কোরবানী। জেলার বিরল উপজেলার ধর্মপুর, ভান্ডারাসহ কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই এবার কোরবানীর জন্য গরু প্রস্তুত রয়েছে। কোরবানী অতি আসন্ন হওয়ায় দালালেরা গৃহস্থের বাড়ী ঘুরে ঘুরে গরু ক্রয় করছে। পরে তারা বাজারে তুলে সামান্য লাভেই বিক্রি করছে এবং আবার ক্রয় করছে। বিরলের মুকলিশপুর গ্রামের টাঙ্গা নামের এক ট্রাকটর শ্রমিক ইনকিলাবকে জানান, গত দু-বছর ধরে এ অঞ্চলে গরু-ছাগলের আবাদ বেড়ে গেছে। নিজের শোয়ার ঘরে সে নিজেই তিনটি গরু লালন করছে। এর মধ্যে দুটি গরু এবারের কোরবানী’র জন্য উপযুক্ত। অপরটি ছোট রয়েছে। গাভীটি বিক্রি করে সে নুতন গাভিও ক্রয় করেছে। কোরবানী হাটে গরু বিক্রি করেই সে দুটি ছোট বাছুর ক্রয় করবে আগামী বছর কোরবানী’র বাজার ধরার উদ্দেশ্যে।
আলাপ হলো কালিয়াগঞ্জ সীমান্ত সীমান্তবর্তী গ্রামের রফিকুলের সাথে তার মূল ব্যবসা ছিল চোরাকারবারী। গত বছর থেকে গরু পালতে শুরু করেছে। দিনের বেলা দিন মজুরের কাজ আর সন্ধ্যা হলেই গরুকে ঘরে মজবুত করে বেঁধে রাখা। দিনের বেলা তার অনুপস্থিতে স্ত্রী ও সন্তানেরা গরুকে মাঠে ঘাস খাইয়ে বেড়ায়। তার মতে সে এখন অনেক ভাল আছে। তার স্ত্রী সন্তারেরা বলে সকাল হলেই বিএসএফ এর গুলিতে মৃত্যুর খবর এখন তাদের তারা করে না।
একই গত দু-বছরে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকার ফলে দিনাজপুর অঞ্চলে ছোট বড় অসংখ্য পশুর খামার গড়ে উঠেছে। খামারীরা গরুকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি মোটাতাজাকরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার অধিক লাভের আশা করছেন খামারিরা। এদিকে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় স্বাস্থ্য সম্মত ও বৈজ্ঞানিক পদ্বতিতে মোটাতাজাকরণ এর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন ভেটেরনারী চিকিৎসকরা। প্রাণী সম্পদ বিভাগের আশা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অধিক সংখ্যক গরু বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় দেশী গরুর চাহিদা বেড়ে গেছে। অটো রাইস মিলের তুষ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন দেশীয় খাদ্য দিয়েই এসব খামারে গরু মোটাতাজাকরন করা হয়। আর এ কারনে মেজর হাসকিং মিল থেকে অটো রাইস মিল প্রতিটি ইন্ডাষ্ট্রিজের মধ্যেই গড়ে উঠেছে মাঝারী ও বৃহৎ আকারের খামার। ধান থেকে চাল তৈরীর পর উৎপাদিত তুষ, ব্রাণ দিয়েই গরু’র খাদ্য যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছর কোরবানিতে ১ লাখ ১৬ হাজার ১৫৭টি গরু মোটাতাজাকরণ হয়েছিল। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৩০ শতাংশ গরু বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ বছর ৮ হাজার ৯৮৮ খামারে গরু মোটাতাজাকরণের কাজ চলছে। জেলায় গরুর চাহিদা রয়েছে ৮৮ হাজার ৭৫৫টি। চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব এটা নিশ্চিতভাবেই বলা চলে। তার মতে এই হিসাব কেবল প্রতিষ্ঠিত খামার অনুসারে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে যেভাবে গরু লালন পালন করা হচ্ছে তাতে আগামীতে গরু অথবা গরুর মাংশ রফতানী করা সম্ভব হবে।



 

Show all comments
  • রিমন ১০ আগস্ট, ২০১৭, ৪:০৭ এএম says : 4
    এই ঈদে ভারত থেকে গরু আমদানি করা যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • abu faiz bulbul ১০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৪২ পিএম says : 3
    nice
    Total Reply(0) Reply
  • Mazharul Razib ১০ আগস্ট, ২০১৭, ৩:২৭ পিএম says : 0
    Emon e dorkar. Shongsompunro hok Babglafesh. Lagbena indian cow..
    Total Reply(0) Reply
  • Nurul Haque ১০ আগস্ট, ২০১৭, ৩:২৮ পিএম says : 0
    Valo khabor
    Total Reply(1) Reply
    • Taz Uddin ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ৭:২৯ পিএম says : 4
      very good news
  • Helal ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    Really I proud the our dinajpur bashir proti . No need for death batter then do something homeland. Good solution & we think our govment all moust take care the Indinan bsf-don't push the cow in bangladesh . thanks
    Total Reply(0) Reply
  • ফারুক ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ২:৩৪ পিএম says : 0
    দোওয়া করি এবছর ভারতিয় গরু যেন বাংলার মানুষ পরিহার করে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএসএফ

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ