Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফিরে দেখঅ স্বাধীনতার মাস

প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : রক্তঝরা মার্চের আজ ১২তম দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিলো শুক্রবার। মার্চের প্রতিটি দিনই ছিলো আন্দোলনে উত্তাল। মূলতঃ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্র সংগ্রামী জনতা তাঁর নির্দেশ পালন করতে থাকে। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই জনগণ অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনা করেতে থাকে। এমন সর্বাত্মক অসহযোগ ইতিহাসে নজিরবিহীন। ’৭১-এর ১২ মার্চের এই দিন বঙ্গবন্ধু সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন ৩২ নম্বরের বাসায়। তিনি সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের তাগিদ প্রদান করেন। গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব) আসগর খান লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলন করে পাকিস্তান সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, পাকিস্তানকে রক্ষা করতে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ জন্য তিনি ইয়াহিয়াকে তাগিদ দিয়ে বলেন, হাতে সময় খুবই কম। আপনি ঢাকা গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদল করে করাচি নেয়ার ঘটনায় গভীর নিন্দা প্রকাশ করেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের জরুরী সভায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সব ইউনিট ও ইউনিয়নে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটি। জাতীয় পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জহির উদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেয়া খেতাব বর্জন করেন। বিশিষ্ট সংবাদ পাঠক সরকার কবীরউদ্দীন রেডিও পাকিস্তান বর্জনের ঘোষণা দেন। এক ঘোষণায় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ কালোবাজারি, মজুতদারী ইত্যাদি অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা এসব কার্যকলাপ চালাচ্ছে তারা স্বাধীনতাবিরোধী গণশত্রু। ধরা পড়লে এদের বিরুদ্ধে কঠিন এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কাছে কোন প্রকার তেল-জ্বালানি দ্রব্য বিক্রয় না করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি ছাত্রনেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান। এদিন শহীদদের স্মৃতিতে শোক পালনরত দেশবাসীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দেশের ১৯টি প্রেক্ষাগৃহের মালিকগণ তাদের সিনেমা হলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত পেশাজীবীগণ, সাংবাদিক সমাজ, চারু ও কারুশিল্পীবৃন্দ সকলেই মিছিলসহকারে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে। এদিনে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, সিএসপি ও ইপিসিএস কর্মকর্তাদের সংগঠন পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম শ্রেণীর প্রশাসকরা এক সভায় মিলিত হয়ে বলেন, এখন থেকে আমরা শেখ মুজিবের সকল নির্দেশ মেনে চলব এবং এ মর্মে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। গত কয়েক দিনের মতো এদিনও বগুড়ার কারাগার ভেঙ্গে ২৭ জন কয়েদী পালিয়ে যায়। পুলিশের গুলিবর্ষণে এদিনও ১ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারী ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত কর্মসূচী বাতিল করতে বাধ্য হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিরে দেখঅ স্বাধীনতার মাস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ