Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গ্রামীণ জনপদে ইউপি নির্বাচনের হাওয়া গ্রুপিংয়ের কারণে প্রধান দুই দলেই বিদ্রোহী জটিলতা

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গ্রুপিং এর কারণে এবারের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্র্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বড় দু’দলেই বিদ্রোহী প্রার্থীর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। নিজ নিজ মতাদর্শের শীর্ষ নেতাদের কাছে লবিং করে যাচ্ছে আগ্রহী প্রার্থীরা। ৭ ইউনিয়নের সব কটিতেই সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না পেলে এলাকার জন সমর্থন ও সুযোগ-সুবিধা যাচাই-বাচাই করে নিজের আয়ত্বে থাকলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এলাকা তথা এলাকাবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে জানান অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী। জানা যায়, বোয়ালখালী উপজেলায় রাজনৈতিক অঙ্গনে গ্রুপিং দীর্ঘদিনের। মূলত এ গ্রুপিং শুরু হয়েছে জেলা থেকেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে দক্ষিণ জেলার বর্তমান সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদ ও সহ-সভাপতি এস এম আবুল কালাম দু’জন দুই মেরুতে অবস্থান নেয়ায় উপজেলা পর্যায়ে এ গ্রুপিংটা চাঙ্গা হয়ে উঠে। এর মধ্যে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে মহাজোটের প্রার্র্থী জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদলের পক্ষে কাজ করে জয় ছিনিয়ে নিলেও এ ঐক্য বেশি দিন টিকেনি। কিছুদিন পর আবারো সেই গ্রুপিং স্পষ্ট হয়ে যায়। সর্বশেষ গত উপজেলা নির্বাচনে পুনরায় এক মঞ্চে আসলেও একত্রিত হতে পারেনি কেউ। ফলে সরকারি দল আওয়ামী লীগে প্রায় জায়গায় আলাদা কমিটি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে নেতা কর্মীরা। এর ফলশ্রুতিতে ইউপি নির্বাচনে প্রতিটিা ইউনিয়নে সরকার দলীয় পরিচয়ে একাধিক প্রার্র্থী থাকার আভাস থেকেই যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকেই দলের প্রতীক না পেলে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। তবে সিনিয়র নেতারা প্রার্থী বাচাইয়ের সময় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে এলাকা এবং দলের মধ্যে গ্রহণ যোগ্য হয় এমন প্রকৃত সৎ ব্যক্তি দেখে নেবেন এটাই আশা করেন। কিন্তু দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেতা-কর্মী (প্রার্থী) বাদ দিয়ে অবৈধভাবে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন অনেক নেতা। এদিকে বিএনপিতেও রয়েছে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ও গ্রুপিং। একাধিক গ্রুপে বিভক্ত উপজেলা বিএনপির সূত্রপাত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানকে ঘিরে। গত ৯ম সংসদ নির্বাচনে দেশে না থাকায় বিএনপির দলীয় প্রার্থিতা পায় নগর বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ। কথিত আছে দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে তিনি নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের গ্রুপিং আরো শক্ত হয়ে মোরশেদ খান বনাম এরশাদ উল্লাহ’র মধ্যে শুরু হয়। এরপর এরশাদ উল্লাহ’কে দল থেকে বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে কঠিন হয় বিদ্রোহ। এরপর মোরশেদ খান ও এরশাদ উল্লাহ দু’ মেরুতে থাকলেও মোরশেদ খান গ্রুপের মধ্যে সৃষ্টি হয় আরো একাধিক উপ-গ্রুপ। ফলে বিএনপির দলীয় কার্যক্রমে হ-য-ব-র-লের সৃষ্টি হয়ে ভাটা পরে। কিন্তু আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বিএনপি একক প্রার্থী দেয়ার জোর চেষ্টা চালালেও সংগঠিত গ্রুপিংকে কাটিয়ে কতটুকু এগিয়ে যেথে পারবে তা এখন দেখার বিষয়। এ নির্বাচনে প্রতিটা ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী দলের প্রতীক পেতে লবিং করলেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সৎ, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী প্রার্থী বাচাইয়ের ক্ষেত্রে মত পার্থক্যের ও গ্রুপিংয়ের ঊর্ধ্বে থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানান তৃণমূলের বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪নং শাকপুরা ইউনিয়ন উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আবদুল মান্নান চৌধুরী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শওকত আলম, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইদ্রিস খান, ও বিএনপি নেতা আজম খান চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ৫নং সারোয়াতলী ইউনিয়নে বিএনপি নেতা মো. জাফর আলম, ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি নুর মোহাম্মদ দলীয় মনোনয়নে আশাবাদী। ৬নং পোপাদিয়া ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপি নেতা জাকির হোসেন ও ইকবাল পাশা দলীয় প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানান। ৭নং চরণদ্বীপ ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি জানে আলম, মুজিবুত উল্লাহ মজু সহ আরো কয়েকজনের নাম শুনা যাচ্ছে। ৮নং শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আজিজুল হক ও বিএনপি নেতা নুরুল আমিন, মো. হাসান চৌধুরী। ৯নং আমুচিয়া ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ইকবাল, যুবদল নেতা এম.এ মন্নান সহ আরো কয়েকজন রয়েছে। ১০নং আহলা কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপি’র সহ-সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান হামিদুল হক মান্নান সহ একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে রেেয়ছে ৪নং শাকপুরা ইউনিয়ন সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মোনাফ, হাজী জানে আলম, গিয়াস উদ্দীন সোহেল। ৫নং সারোয়াতলীতে ইউনিয়ন সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন, নুরুল আমিন সহ আরো কয়েক জনের নামশোনা যাচ্ছে। ৬নং পোপাদিয়ায় ইউনিয়ন সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম জসিম, শামশুল আবেদীন তারেক, মামুনুর রশিদ মামুন, সৈয়দ নাজু আহমেদ পাভেল। ৭নং চরণদ্বীপ ইউনিয়ন বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শোয়াইব রেজা, মোহাম্মদ ইউনুচ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. রফিক, আক্তার উদ্দীন তালুকদার। ৮নং শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম, ইসমাইল হোসেন খোকন। ৯নং আমুচিয়া ইউনিয়নে, উপজেলা আ.লীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আহম্মদ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম নেওয়াজ, ইউনিয়ন নেতা সুব্রত বিশ্বাস সিকিম ও ১০নং আহলা কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নে আ. লীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান মনছুর আহম্মেদ বাবুল, সাবেক চেয়ারম্যান দিদারুল আলম চৌধুরী, আবদুল ওয়াদুদ সহ ৭ ইউনিয়নে আরো অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে অনড় রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ দিকে উপজেলার ৯ ইউনিয়নের মধ্যে পৌরসভার কারণে সৃষ্টি হওয়া সীমানা জটিলতা ও স্থগিতাদেশের কারণে ২ ইউনিয়নে এবারো নির্বাচন হচ্ছে না। দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ অমীমাংসিত সীমানা জটিলতায় ২নং পশ্চিম গোমদ-ী ও কধুরখীল ইউনিয়নে নির্বাচন না হওয়ায় সব ধরনের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এসব ইউনিয়নের এলাকাবাসী। এ দু’টি ইউনিয়নের আইনী জটিলতা নিরসন করে দ্রুত নির্বাচনের মাধমে যোগ্য জন প্রতিনিধি দিয়ে পরিষদ গঠন করে অবহেলিত যোগাযোগসহ কাক্সিক্ষত উন্নয়নের দাবি জানান এলাকাবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রামীণ জনপদে ইউপি নির্বাচনের হাওয়া গ্রুপিংয়ের কারণে প্রধান দুই দলেই বিদ্রোহী জটিলতা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ